গণপরিবহণে নৈরাজ্য
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দৃষ্টি কাম্য
সম্পাদকীয়
১৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর গণপরিবহণে ই-টিকিটিংয়ের নামে ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে। এ খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে বহু আলোচনা হলেও ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগের অবসান হচ্ছে না। দুঃখজনক হলো, এ খাতের নৈরাজ্য যেন দেখার কেউ নেই। গণপরিবহণের ভাড়া নৈরাজ্য রোধ এবং যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে সেসব দৃশমান নয়।
বস্তুত যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। যাত্রীদের প্রত্যাশা ছিল ই-টিকিটিং চালুর মধ্য দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সংস্কৃতির অবসান হবে। কিন্তু তা হয়নি। যাত্রীদের অভিযোগ, পরিবহণ শ্রমিকরা বিভিন্ন কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যাহত রেখেছে। বাস মালিক সমিতি ভাড়া নৈরাজ্য কমাতে ই-টিকিটিং চালু করলেও তদারকি সংস্থার গাফিলতিতে অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। বস্তুত রাজধানীর গণপরিবহণে যাত্রীসেবার মান বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ।
অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব কারণে নারী-বৃদ্ধ-শিশুদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হলেও তা যেন দেখার কেউ নেই। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর কোনো কোনো পরিবহণ শ্রমিক রীতিমতো হুমকি দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে থাকে।
কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করলে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো পরিবহণ শ্রমিক নিজেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশীর্বাদপুষ্ট কর্মী পরিচয় দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করে থাকে। গণপরিবহণে সেবার মান না বাড়লে রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এতে এ নগরীর যানজট সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
রাজধানীর গণপরিবহণে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের যথাযথ তৎপরতার অভাব। এ খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দায়সারা বিবৃতি দেওয়া হয়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করে এ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বিভিন্ন খাতে আমাদের অর্জন আশাব্যঞ্জক হলেও গণপরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলা না কমার বিষয়টি দুঃখজনক। যেহেতু এ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তদারিক সংস্থাগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, সেহেতু সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
তবে এজন্য দরকার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারণ, পরিবহণ খাতটি সব সময় রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এর পরিবর্তে এর নিয়ন্ত্রণভার পুরোপুরি কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অর্পণ করা দরকার। তবেই বন্ধ হতে পারে ভাড়া নৈরাজ্যসহ গণপরিবহণ খাতের অরাজকতা। সরকার এ লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
গণপরিবহণে নৈরাজ্য
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দৃষ্টি কাম্য
রাজধানীর গণপরিবহণে ই-টিকিটিংয়ের নামে ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে। এ খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে বহু আলোচনা হলেও ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগের অবসান হচ্ছে না। দুঃখজনক হলো, এ খাতের নৈরাজ্য যেন দেখার কেউ নেই। গণপরিবহণের ভাড়া নৈরাজ্য রোধ এবং যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে সেসব দৃশমান নয়।
বস্তুত যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। যাত্রীদের প্রত্যাশা ছিল ই-টিকিটিং চালুর মধ্য দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সংস্কৃতির অবসান হবে। কিন্তু তা হয়নি। যাত্রীদের অভিযোগ, পরিবহণ শ্রমিকরা বিভিন্ন কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যাহত রেখেছে। বাস মালিক সমিতি ভাড়া নৈরাজ্য কমাতে ই-টিকিটিং চালু করলেও তদারকি সংস্থার গাফিলতিতে অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। বস্তুত রাজধানীর গণপরিবহণে যাত্রীসেবার মান বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ।
অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব কারণে নারী-বৃদ্ধ-শিশুদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হলেও তা যেন দেখার কেউ নেই। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর কোনো কোনো পরিবহণ শ্রমিক রীতিমতো হুমকি দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে থাকে।
কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করলে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো পরিবহণ শ্রমিক নিজেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশীর্বাদপুষ্ট কর্মী পরিচয় দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করে থাকে। গণপরিবহণে সেবার মান না বাড়লে রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এতে এ নগরীর যানজট সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
রাজধানীর গণপরিবহণে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের যথাযথ তৎপরতার অভাব। এ খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দায়সারা বিবৃতি দেওয়া হয়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করে এ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বিভিন্ন খাতে আমাদের অর্জন আশাব্যঞ্জক হলেও গণপরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলা না কমার বিষয়টি দুঃখজনক। যেহেতু এ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তদারিক সংস্থাগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, সেহেতু সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
তবে এজন্য দরকার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারণ, পরিবহণ খাতটি সব সময় রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এর পরিবর্তে এর নিয়ন্ত্রণভার পুরোপুরি কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অর্পণ করা দরকার। তবেই বন্ধ হতে পারে ভাড়া নৈরাজ্যসহ গণপরিবহণ খাতের অরাজকতা। সরকার এ লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।