সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন
jugantor
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন
সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা কি কঠিন ছিল?

  সম্পাদকীয়  

২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে যা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত। বস্তুত এ ঘটনায় সুপ্রিমকোর্ট বারের ভাবমূর্তিই কেবল প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি; উপরন্তু এতে আইনজীবীদের ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বারের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থিরা দুটি নির্বাচন উপকমিটি ঘোষণা করেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়রদের বৈঠকের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠিত হলে উভয়পক্ষ তা মেনে নেয়। তবে নির্বাচনের আগের দিন মুনসুরুল চৌধুরীর পদত্যাগের খবর আসায় সংকট সৃষ্টি হলে দুই পক্ষ পুনরায় দুটি কমিটি গঠনের কথা জানায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামীপন্থিরা মো. মনিরুজ্জামান এবং বিএনপিপন্থিরা এএসএম মোক্তার কবির খানকে আহ্বায়ক করেন। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার নির্বাচনের প্রথমদিনের ভোট চলাকালে সরকার সমর্থক সাদা দল এবং বিএনপি সমর্থক নীল দলের মধ্যে দিনভর দফায় দফায় পালটাপালটি ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুরসহ পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরদিন পুলিশি প্রহরায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী প্যানেলের প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পান।

যে কোনো পর্যায়েরই হোক না কেন-প্রতিটি নির্বাচনকে সংবেদনশীল, স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা কি খুব কঠিন কাজ ছিল? অভিযোগ উঠেছে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই-এ বার্তা দেওয়ার জন্যই নাকি বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা পরিকল্পিতভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। অন্যদিকে পুলিশ প্রহরায় একতরফা নির্বাচন করার অভিযোগ তুলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার মুনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করার পর তারা চেষ্টা করেছিলেন নির্বাচন কমিশন গঠনের; কিন্তু আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এসব অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! বলার অপেক্ষা রাখে না, সুপ্রিমকোর্ট হচ্ছে জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। সাধারণ মানুষের কাছে এর আলাদা মর্যাদা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এখানকার আইনজীবীদেরও একটা ব্যক্তিত্ব রয়েছে। কাজেই কিছুসংখ্যক আইনজীবীর কারণে সুপ্রিমকোর্ট বারের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আশঙ্কাজনক হলো, বারে অযোগ্য লোকজনের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় জুনিয়র আইনজীবী সমিতি ও সিনিয়র আইনজীবী সমিতি গঠনের মাধ্যমে বারকে আলাদা করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। ভবিষ্যতে সুপ্রিমকোর্ট বারের পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ আকার ধারণ না করে, সেজন্য দ্রুত এর লাগাম টেনে ধরা উচিত।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা কি কঠিন ছিল?
 সম্পাদকীয় 
২০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে যা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত। বস্তুত এ ঘটনায় সুপ্রিমকোর্ট বারের ভাবমূর্তিই কেবল প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি; উপরন্তু এতে আইনজীবীদের ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বারের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থিরা দুটি নির্বাচন উপকমিটি ঘোষণা করেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়রদের বৈঠকের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠিত হলে উভয়পক্ষ তা মেনে নেয়। তবে নির্বাচনের আগের দিন মুনসুরুল চৌধুরীর পদত্যাগের খবর আসায় সংকট সৃষ্টি হলে দুই পক্ষ পুনরায় দুটি কমিটি গঠনের কথা জানায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামীপন্থিরা মো. মনিরুজ্জামান এবং বিএনপিপন্থিরা এএসএম মোক্তার কবির খানকে আহ্বায়ক করেন। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার নির্বাচনের প্রথমদিনের ভোট চলাকালে সরকার সমর্থক সাদা দল এবং বিএনপি সমর্থক নীল দলের মধ্যে দিনভর দফায় দফায় পালটাপালটি ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুরসহ পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরদিন পুলিশি প্রহরায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী প্যানেলের প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পান।

যে কোনো পর্যায়েরই হোক না কেন-প্রতিটি নির্বাচনকে সংবেদনশীল, স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা কি খুব কঠিন কাজ ছিল? অভিযোগ উঠেছে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই-এ বার্তা দেওয়ার জন্যই নাকি বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা পরিকল্পিতভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। অন্যদিকে পুলিশ প্রহরায় একতরফা নির্বাচন করার অভিযোগ তুলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার মুনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করার পর তারা চেষ্টা করেছিলেন নির্বাচন কমিশন গঠনের; কিন্তু আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এসব অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! বলার অপেক্ষা রাখে না, সুপ্রিমকোর্ট হচ্ছে জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। সাধারণ মানুষের কাছে এর আলাদা মর্যাদা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এখানকার আইনজীবীদেরও একটা ব্যক্তিত্ব রয়েছে। কাজেই কিছুসংখ্যক আইনজীবীর কারণে সুপ্রিমকোর্ট বারের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আশঙ্কাজনক হলো, বারে অযোগ্য লোকজনের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় জুনিয়র আইনজীবী সমিতি ও সিনিয়র আইনজীবী সমিতি গঠনের মাধ্যমে বারকে আলাদা করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। ভবিষ্যতে সুপ্রিমকোর্ট বারের পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ আকার ধারণ না করে, সেজন্য দ্রুত এর লাগাম টেনে ধরা উচিত।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন