প্রতিকারহীন সড়ক দুর্ঘটনা: এ ভয়াবহতা কি চলতেই থাকবে?
সম্পাদকীয়
২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ব্যাপকতা যেন কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। গত রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় এক ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২০ জন। ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহণের বাসটি চলছিল বেপরোয়া গতিতে।
এ সময় সামনের একটি চাকা ফেটে গেলে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে খাদে ছিটকে পড়ে। জানা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। গত বছর নভেম্বরে এ বাস একবার দুর্ঘটনায় পড়েছিল এবং সে ঘটনায় নিহত হয়েছিল তিনজন। এ কারণে বাসটির চলাচলের অনুমতি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এছাড়া বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন হলো, এরপরও কীভাবে সেই বাস মহাসড়কে চলার সুযোগ পায়? বাসটি চলাচলের অনুপযুক্ত থাকা দুর্ঘটনার একটি কারণ সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়ত, চালক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি বাস চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এটি দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ। বস্তুত সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো-চালকের অদক্ষতা, চালকের ক্লান্তি, গাড়ির বেপরোয়া গতি এবং গাড়ির ফিটনেস না থাকা। দেখা যাচ্ছে, এসব কারণের প্রায় সবই এ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
গবেষণায় দেখা যায়, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করি আমরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী। অনেক পরিবহণ মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেন না। ক্লান্তশ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে স্বভাবতই তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বস্তুত এ ঝুঁকিগুলোর কথা গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশও করা হয়। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। কর্তৃপক্ষও যেন নির্বিকার। ফলে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনা রোধে একটি যুগোপযোগী সড়ক পরিবহণ আইনের জনদাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি করে পাশ করা হয় সড়ক পরিবহণ আইন। এরপর আইনটির বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। এ কারণে এক বছরেরও বেশি সময় আটকে ছিল আইনটির বাস্তবায়ন। অবশেষে ২০১৯ সালে আইনটি কার্যকর হয়; কিন্তু এর যথাযথ বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রতিকারহীন সড়ক দুর্ঘটনা: এ ভয়াবহতা কি চলতেই থাকবে?
সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ব্যাপকতা যেন কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। গত রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় এক ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২০ জন। ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহণের বাসটি চলছিল বেপরোয়া গতিতে।
এ সময় সামনের একটি চাকা ফেটে গেলে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে খাদে ছিটকে পড়ে। জানা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। গত বছর নভেম্বরে এ বাস একবার দুর্ঘটনায় পড়েছিল এবং সে ঘটনায় নিহত হয়েছিল তিনজন। এ কারণে বাসটির চলাচলের অনুমতি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এছাড়া বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন হলো, এরপরও কীভাবে সেই বাস মহাসড়কে চলার সুযোগ পায়? বাসটি চলাচলের অনুপযুক্ত থাকা দুর্ঘটনার একটি কারণ সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়ত, চালক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি বাস চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এটি দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ। বস্তুত সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো-চালকের অদক্ষতা, চালকের ক্লান্তি, গাড়ির বেপরোয়া গতি এবং গাড়ির ফিটনেস না থাকা। দেখা যাচ্ছে, এসব কারণের প্রায় সবই এ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
গবেষণায় দেখা যায়, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করি আমরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী। অনেক পরিবহণ মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেন না। ক্লান্তশ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে স্বভাবতই তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বস্তুত এ ঝুঁকিগুলোর কথা গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশও করা হয়। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। কর্তৃপক্ষও যেন নির্বিকার। ফলে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনা রোধে একটি যুগোপযোগী সড়ক পরিবহণ আইনের জনদাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি করে পাশ করা হয় সড়ক পরিবহণ আইন। এরপর আইনটির বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। এ কারণে এক বছরেরও বেশি সময় আটকে ছিল আইনটির বাস্তবায়ন। অবশেষে ২০১৯ সালে আইনটি কার্যকর হয়; কিন্তু এর যথাযথ বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা।