চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট: রোগীদের দুর্ভোগ কাম্য নয়
সম্পাদকীয়
২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চিকিৎসা উপকরণ উৎপাদন ও আমদানির ওপর ডলার সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় এসব সরঞ্জাম ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা যায়, ডলার স্বল্পতায় সাত মাস ধরে চিকিৎসা উপকরণের এলসি খোলা ও আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এতে ওষুধ আমদানির পাশাপাশি উৎপাদনও কমেছে; বিশেষ করে আমদানিনির্ভর জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগের ওষুধ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। উপরন্তু অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম, হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব ও পেসমেকারসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিভাইসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি রক্ত পরিসঞ্চালনের বিভিন্ন উপকরণও চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় সবকিছুর দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
দেশে অনেক নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। বিত্তবানরা অসুখে-বিসুখে এসব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। অনেকে আবার দেশের বাইরেও পাড়ি জমান। তবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিুমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের এ সক্ষমতা নেই। এক সমীক্ষায় জানা যায়, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশে অন্তত ৬৭ শতাংশ মানুষ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ মানুষ সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডলার সংকটজনিত পরিস্থিতিতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি চরম দুর্ভোগে পড়েছেন, একই সঙ্গে তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বহুগুণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমদানিনির্ভর জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্য সমন্বয় করা জরুরি। আমরা আশা করব, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সরকার স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা, শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাস, পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করলেও দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে এখনো যুগোপযোগী ও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রত্যাশিত মানের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশনির্ভরতা কমছে না। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার লক্ষ্যে ডলার সংকট নিরসনের পাশাপাশি ওষুধের ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্য সমন্বয় করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট: রোগীদের দুর্ভোগ কাম্য নয়
চিকিৎসা উপকরণ উৎপাদন ও আমদানির ওপর ডলার সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় এসব সরঞ্জাম ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা যায়, ডলার স্বল্পতায় সাত মাস ধরে চিকিৎসা উপকরণের এলসি খোলা ও আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এতে ওষুধ আমদানির পাশাপাশি উৎপাদনও কমেছে; বিশেষ করে আমদানিনির্ভর জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগের ওষুধ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। উপরন্তু অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম, হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব ও পেসমেকারসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিভাইসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি রক্ত পরিসঞ্চালনের বিভিন্ন উপকরণও চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় সবকিছুর দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
দেশে অনেক নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। বিত্তবানরা অসুখে-বিসুখে এসব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। অনেকে আবার দেশের বাইরেও পাড়ি জমান। তবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিুমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের এ সক্ষমতা নেই। এক সমীক্ষায় জানা যায়, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশে অন্তত ৬৭ শতাংশ মানুষ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ মানুষ সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডলার সংকটজনিত পরিস্থিতিতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি চরম দুর্ভোগে পড়েছেন, একই সঙ্গে তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বহুগুণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমদানিনির্ভর জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্য সমন্বয় করা জরুরি। আমরা আশা করব, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সরকার স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা, শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাস, পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করলেও দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে এখনো যুগোপযোগী ও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রত্যাশিত মানের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশনির্ভরতা কমছে না। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার লক্ষ্যে ডলার সংকট নিরসনের পাশাপাশি ওষুধের ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্য সমন্বয় করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।