প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি
 সম্পাদকীয় 
২৭ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভার শুরুতে বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত বলে মনে করি আমরা। ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়-ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে প্রতিবাদমুখর বাঙালিকে হত্যা করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের এক বর্বর সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এদেশে গণহত্যার সূচনা করেছিল। সেই কালরাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ট্যাংক ও কামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র মানুষের ওপর। বলা চলে, সেদিন রাজধানীজুড়ে ছিল রক্তের বন্যা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২৫ মার্চ রাতে যে গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী; পরদিন থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন পর্যন্ত প্রতিদিনই বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের মা-বাবা-ভাইবোনসহ সাধারণ মানুষকেও নির্বিচারে হত্যা করেছে। এমন কী শিশু ও নারীদের প্রতিও কোনো দয়া বা অনুকম্পা দেখানো হয়নি; তাদের আছাড় মেরে কিংবা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, সেসময় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়ায় মোট ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছিল এবং ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হিসাবে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এনে বাংলাদেশ ২০১৭ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসাবে পালন করছে। উল্লেখ্য, আমাদের জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভায়ও এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এখন এই দিবসটির একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সময়ের দাবি, তা বলাই বাহুল্য।

অপ্রিয় হলেও সত্য-মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের বিষটির ওপর যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, গণহত্যা ও মানুষের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। দেখা গেছে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রচেষ্টা চালালেও সব সরকারই এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে। অথচ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে হত্যা ও নির্যাতন সংঘটিত হয়েছে, সেটি নিশ্চিতভাবেই জেনোসাইড বা গণহত্যা। বস্তুত স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য না হলেও ইতিহাসের এই ভারসাম্যহীন অবস্থা দূর করার স্বার্থে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের স্বার্থে এ স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। দুঃখজনক হলো, একাত্তরে আমাদের দেশে যে গণহত্যা হয়েছিল, সেটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কোনো রেকর্ডে স্বীকৃত নয় এবং ইম্পেরিয়াল ওয়্যার মিউজিয়ামসহ পৃথিবীর বিভিন্ন আর্কাইভে নানা কারণে বিষয়টি উপেক্ষিত। এ বৃত্ত থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। বাংলাদেশের জনগণের আত্মপরিচয়ের সন্ধান দেওয়ার জন্য ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন