মূল্যস্ফীতির হারে বিপরীত চিত্র
বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার
সম্পাদকীয়
২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত ফেব্রুয়ারিতে যে মূল্যস্ফীতি ও মজুরিবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণ করে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ; বিপরীতে শহরে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মানে হলো, শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। মূল্যস্ফীতির এ বিপরীত চিত্র অর্থনীতিবিদদের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ গ্রামে বসবাসরতদের চাহিদা কম। এছাড়া কর্মসংস্থান কম হওয়ার কারণে আয়ও কম। এ কারণে খরচও হয় কম।
সর্বোপরি, অধিকাংশ কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সবজি উৎপাদন হওয়ায় সেখানে সরবরাহের পরিমাণও বেশি থাকে। বস্তুত এসব কারণে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার কম হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন কেন নেই, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।
গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, এটি কি অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তনের আভাস? অর্থাৎ গ্রামের মানুষের আয় কি তাহলে বেড়েছে? কিন্তু বাস্তব চিত্র আমাদের জানান দিচ্ছে, গ্রামে আসলে আয় বাড়েনি। সেখানে এখনো দারিদ্র্যের হার বেশি; উপরন্তু অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও গ্রামেই বেশি।
অবশ্য বর্তমানে গ্রামে কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে, যার ফলে সেখানে অর্থের প্রবাহ কিছুটা বাড়ছে। তবে এ অর্থের বড় অংশই চলে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের পকেটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনও একই কথা বলছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামে অর্থের প্রবাহ আগের মতোই আছে, বাড়েনি; তবে সঞ্চয়ের প্রবণতা কমেছে। অবশ্য রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ গ্রামে যাচ্ছে; বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, যার ৫৩ শতাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে ভোগবিলাসে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাও গ্রামে যাচ্ছে বেশি। এ থেকে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বাড়তে পারে।
বস্তুত গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি বড় কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিবিএসের প্রতিবেদন আমাদের এই বার্তা দিচ্ছে যে, অর্থনীতিতে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে গ্রামের মানুষের অবস্থা ভালো হয়েছে, তাদের চাহিদা বেড়েছে, আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেমনটি তো হয়নি।
অবশ্য এক্ষেত্রে একটি আশঙ্কা রয়ে গেছে-গ্রামপর্যায়ে এখন শহরের চেয়ে পণ্য ও সেবার দাম বেশি হলে মূল্যস্ফীতির হারে উল্লম্ফন ঘটতে পারে। এমনটি হলে বলতে হয়-সরকারের পণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের গলদ রয়েছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সেগুলো দ্রুত শনাক্ত করে নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তদুপরি, শহরে গ্রামের চেয়ে টাকার প্রবাহ, ঘনবসতি, চাহিদা ও ভোগবিলাস বেশি হওয়ার পরও মূল্যস্ফীতির হার শহরে বেশি না হয়ে গ্রামে কেন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য নিবিড় গবেষণা দরকার।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মূল্যস্ফীতির হারে বিপরীত চিত্র
বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত ফেব্রুয়ারিতে যে মূল্যস্ফীতি ও মজুরিবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণ করে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ; বিপরীতে শহরে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মানে হলো, শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। মূল্যস্ফীতির এ বিপরীত চিত্র অর্থনীতিবিদদের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ গ্রামে বসবাসরতদের চাহিদা কম। এছাড়া কর্মসংস্থান কম হওয়ার কারণে আয়ও কম। এ কারণে খরচও হয় কম।
সর্বোপরি, অধিকাংশ কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সবজি উৎপাদন হওয়ায় সেখানে সরবরাহের পরিমাণও বেশি থাকে। বস্তুত এসব কারণে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার কম হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন কেন নেই, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।
গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, এটি কি অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তনের আভাস? অর্থাৎ গ্রামের মানুষের আয় কি তাহলে বেড়েছে? কিন্তু বাস্তব চিত্র আমাদের জানান দিচ্ছে, গ্রামে আসলে আয় বাড়েনি। সেখানে এখনো দারিদ্র্যের হার বেশি; উপরন্তু অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও গ্রামেই বেশি।
অবশ্য বর্তমানে গ্রামে কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে, যার ফলে সেখানে অর্থের প্রবাহ কিছুটা বাড়ছে। তবে এ অর্থের বড় অংশই চলে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের পকেটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনও একই কথা বলছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামে অর্থের প্রবাহ আগের মতোই আছে, বাড়েনি; তবে সঞ্চয়ের প্রবণতা কমেছে। অবশ্য রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ গ্রামে যাচ্ছে; বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, যার ৫৩ শতাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে ভোগবিলাসে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাও গ্রামে যাচ্ছে বেশি। এ থেকে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বাড়তে পারে।
বস্তুত গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি বড় কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিবিএসের প্রতিবেদন আমাদের এই বার্তা দিচ্ছে যে, অর্থনীতিতে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে গ্রামের মানুষের অবস্থা ভালো হয়েছে, তাদের চাহিদা বেড়েছে, আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেমনটি তো হয়নি।
অবশ্য এক্ষেত্রে একটি আশঙ্কা রয়ে গেছে-গ্রামপর্যায়ে এখন শহরের চেয়ে পণ্য ও সেবার দাম বেশি হলে মূল্যস্ফীতির হারে উল্লম্ফন ঘটতে পারে। এমনটি হলে বলতে হয়-সরকারের পণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের গলদ রয়েছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সেগুলো দ্রুত শনাক্ত করে নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তদুপরি, শহরে গ্রামের চেয়ে টাকার প্রবাহ, ঘনবসতি, চাহিদা ও ভোগবিলাস বেশি হওয়ার পরও মূল্যস্ফীতির হার শহরে বেশি না হয়ে গ্রামে কেন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য নিবিড় গবেষণা দরকার।