ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন
যথাযথ বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি
সম্পাদকীয়
২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অবশেষে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০২১ আগামী জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আইনটির খসড়ায় যেসব বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না; কোনো ব্যাংকের পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে ওই ব্যাংকের পরিচালক পদ হারাবেন; কোনো বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক হিসাবে অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবেন না; পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করা যাবে না ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এ আইন সংশোধনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক উভয়েরই ঋণের শর্ত রয়েছে।
তবে উন্নয়ন সহযোগীদের শর্ত পূরণের চেয়েও দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের স্বার্থে এ আইনের সংশোধন বেশি জরুরি। দেশে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ খাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, লুটপাট ও দুর্নীতি বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক পরিচালকরা ভাগাভাগির মাধ্যমে নিজেদের ও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে যে ঋণ নেন, তার অধিকাংশই আর ফেরত আসে না। এর ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতিসহ ব্যাংক পরিচালকদের অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই আইনি কাঠামোর আওতায় ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম হতে হবে। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক ও পরিচালক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরাও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। এর ফলে তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল। এ সুযোগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তারা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে গ্রাস করে ফেলছে এবং এর ফলে খেলাপি ঋণ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে। এ বাস্তবতায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী দ্রুত চূড়ান্ত করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন
যথাযথ বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি
অবশেষে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০২১ আগামী জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আইনটির খসড়ায় যেসব বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না; কোনো ব্যাংকের পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে ওই ব্যাংকের পরিচালক পদ হারাবেন; কোনো বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক হিসাবে অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবেন না; পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করা যাবে না ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এ আইন সংশোধনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক উভয়েরই ঋণের শর্ত রয়েছে।
তবে উন্নয়ন সহযোগীদের শর্ত পূরণের চেয়েও দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের স্বার্থে এ আইনের সংশোধন বেশি জরুরি। দেশে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ খাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, লুটপাট ও দুর্নীতি বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক পরিচালকরা ভাগাভাগির মাধ্যমে নিজেদের ও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে যে ঋণ নেন, তার অধিকাংশই আর ফেরত আসে না। এর ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতিসহ ব্যাংক পরিচালকদের অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই আইনি কাঠামোর আওতায় ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম হতে হবে। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক ও পরিচালক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরাও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। এর ফলে তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল। এ সুযোগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তারা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে গ্রাস করে ফেলছে এবং এর ফলে খেলাপি ঋণ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে। এ বাস্তবতায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী দ্রুত চূড়ান্ত করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।