প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট

শূন্যপদগুলো পূরণের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করুন
 সম্পাদকীয় 
০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
প্রাথমিক
ফাইল ছবি

দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা ২৯ হাজার ৮৫৮। বিষয়টি উদ্বেগজনক। জানা যায়, শূন্যপদগুলো পূরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা মনে করি, শূন্যপদগুলো পূরণের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত। দেশে প্রাথমিক স্তর পার হয়ে আসা শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রাথমিকের মান অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। এ কারণে মাধ্যমিকে প্রবেশের পর বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, কেউ কেউ কোনোরকমে মাধ্যমিক স্তর অতিক্রম করে। এ শিক্ষার্থীরা বড় হয়ে যখন জনশক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তারা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কতটা সক্ষম হবে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং সমস্যার সমাধানে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। ভিত্তি দুর্বল হলে পুরো ইমারতটি দুর্বল হয়, এটাই স্বাভাবিক। দেশে শিক্ষার ভিত যে দুর্বল তা বারবার আলোচনায় আসে। এ অবস্থায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষা খাতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে হলে জরুরিভিত্তিতে সব স্তরের শিক্ষক সংকট দূর করতে হবে।

বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে, তারা যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করবে, তখন তাদের নতুন এক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। আগামী দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেও এমন কিছু কাজ আছে যা যন্ত্র করতে পারবে না। সে কাজগুলো করবে দক্ষ কর্মীরা। মানুষ যাতে যন্ত্রের দক্ষতাকেও হার মানাতে পারে, তেমন কর্মী তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বব্যাপী। যেসব দেশ উচ্চতর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় এগিয়ে থাকবে, আগামীতে সেসব দেশই নতুন শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। নতুন যুগে আমরাও যাতে সামনের সারিতে থাকতে পারি, তা নিশ্চিত করতে শিক্ষা খাতে গুরুত্ব আরও বাড়াতে হবে। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। রাজধানীর সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা যে মানের শিক্ষা পাবে, একই মানের শিক্ষা যাতে গ্রামীণ জনপদের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের অগণিত খেটে খাওয়া মানুষ রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে সন্তানের শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ করেন। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষক সমাজের হাতে। কাজেই মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

মেধাবীদের অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাকরিকে আকর্ষণীয় হিসাবে বিবেচনা করছেন না। শিক্ষকতাকে মেধাবীরা যাতে আকর্ষণীয় হিসাবে বিবেচনা করেন, তেমন পদক্ষেপ নিতে হবে। সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাকরিকে আরও আকর্ষণীয় করতে হবে। কারণ বেশি মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী না হলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও এ খাতের লক্ষ্য অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ যতই বাড়ানো হোক-এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নীতি-নৈতিকতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ থাকে, যদি দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব না হয়, তাহলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন