সন্দেহজনক লেনদেন, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে
বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, দেশে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বাড়ছে। বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিট্যান্সের অন্তরালে বাড়ছে অর্থ পাচার, এমন আশঙ্কাও করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৫২টি সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত হয়েছে। রেমিট্যান্সের অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের সন্দেহে ৫ হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) এজেন্টের তথ্য দেওয়া হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে।
প্রাথমিকভাবে হুন্ডির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৬৭টি মোবাইল ব্যাংক হিসাব। অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে পৃথকভাবে ৪০টির প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নের তথ্য চেয়ে ৫২ দেশে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বস্তুত সব ধরনের সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়েই কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। অর্থ পাচারের সঙ্গে অন্য কোনো অপরাধের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। উল্লেখ্য, বিএফআইইউ কর্তৃক অতীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়; টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। পাচারকৃত এসব অর্থ ফেরত আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
অর্থ পাচারের কারণে ডলার সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানা গেলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও কাজটি কঠিন। অর্থ পাচারের বেশির ভাগই বাণিজ্যভিত্তিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যথাযথ তৎপরতা অব্যাহত থাকলে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব। কাজেই অর্থ পাচার রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো তৎপরতা কাম্য। অর্থ পাচারের সঙ্গে যে অন্য ধরনের অপরাধেরও সংশ্লিষ্টতা থাকে, তা বহুল আলোচিত। অর্থ পাচার রোধে সুফল পেতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর হতে হবে। সরষের ভেতর ভূত থাকলে এক্ষেত্রে সুফল মিলবে কি না সন্দেহ।
সন্দেহজনক লেনদেন, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে
সম্পাদকীয়
১১ জুন ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, দেশে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বাড়ছে। বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিট্যান্সের অন্তরালে বাড়ছে অর্থ পাচার, এমন আশঙ্কাও করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৫২টি সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত হয়েছে। রেমিট্যান্সের অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের সন্দেহে ৫ হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) এজেন্টের তথ্য দেওয়া হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে।
প্রাথমিকভাবে হুন্ডির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৬৭টি মোবাইল ব্যাংক হিসাব। অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে পৃথকভাবে ৪০টির প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নের তথ্য চেয়ে ৫২ দেশে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বস্তুত সব ধরনের সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়েই কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। অর্থ পাচারের সঙ্গে অন্য কোনো অপরাধের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। উল্লেখ্য, বিএফআইইউ কর্তৃক অতীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়; টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। পাচারকৃত এসব অর্থ ফেরত আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
অর্থ পাচারের কারণে ডলার সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানা গেলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও কাজটি কঠিন। অর্থ পাচারের বেশির ভাগই বাণিজ্যভিত্তিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যথাযথ তৎপরতা অব্যাহত থাকলে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব। কাজেই অর্থ পাচার রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো তৎপরতা কাম্য। অর্থ পাচারের সঙ্গে যে অন্য ধরনের অপরাধেরও সংশ্লিষ্টতা থাকে, তা বহুল আলোচিত। অর্থ পাচার রোধে সুফল পেতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর হতে হবে। সরষের ভেতর ভূত থাকলে এক্ষেত্রে সুফল মিলবে কি না সন্দেহ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023