ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফর
দুদেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হোক
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর সোমবার যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথাই বলেছেন। এদিন দুই নেতার উপস্থিতিতে ঢাকা ও প্যারিসের মধ্যে দুটি চুক্তিও সই হয়েছে। চুক্তিগুলো হচ্ছে-ঢাকা ও প্যারিসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে একান্ত বৈঠকও করেছেন দুই নেতা। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনের সূচনা করেছিলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্টের এবারের সফরের মধ্য দিয়ে তা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। উল্লেখ্য, এটি বাংলাদেশে ম্যাক্রোঁর প্রথম এবং কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় সফর।
চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতি, স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশ করেছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও ফ্রান্স অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানেও আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি। এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এই নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই সৌহার্দপূর্ণ। সুদূর অতীতেই এ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ফরাসিরা সপ্তদশ শতাব্দীতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রথম ঢাকা শহর এবং দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক এলাকায় সম্পর্ক স্থাপন করেন। সেসময় তাদের ব্রিটিশদের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধ ছিল। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন যখন ব্রিটিশদের সঙ্গে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধ হয়, তখন নবাবের সহায়তায় সৈন্য পাঠানোর মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ফ্রান্স। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও ফরাসিদের অবদান চিরস্মরণীয়। ফরাসি লেখক ও চিন্তাবিদ অঁদ্রে মালরো বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে নিজের যুদ্ধ মনে করেন। এছাড়া মুক্তযুদ্ধ চলাকালে জঁ ক্যা নামে একজন মানবতাবাদী ফরাসি যুবক ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাংলাদেশি শরণার্থীদের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর দাবিতে একটি পাকিস্তানি বিমান (পিআইএ) ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে বিষয়টির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ঘটনার পর ফরাসি সরকার বাংলাদেশকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভারতের শরণার্থীশিবিরে ২০ টন ওষুধ আর চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছে দেয়।
ফ্রান্স বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। এ বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। ফ্রান্স শিল্প-সাহিত্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ভারী শিল্প যেমন : বুলেট ট্রেন, যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন প্রভৃতি সামগ্রী রপ্তানির দিক থেকে বিশ্বের প্রথম সারিতে অবস্থানকারী দেশ ফ্রান্স। তাই দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা লাভবান হতে পারি। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগেও গড়ে উঠতে পারে বিভিন্ন শিল্প। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে হবে। শিক্ষা ও শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় করা যেতে পারে সহযোগিতার বন্ধন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে, এটাই প্রত্যাশা।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফর
দুদেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হোক
সম্পাদকীয়
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর সোমবার যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথাই বলেছেন। এদিন দুই নেতার উপস্থিতিতে ঢাকা ও প্যারিসের মধ্যে দুটি চুক্তিও সই হয়েছে। চুক্তিগুলো হচ্ছে-ঢাকা ও প্যারিসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে একান্ত বৈঠকও করেছেন দুই নেতা। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনের সূচনা করেছিলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্টের এবারের সফরের মধ্য দিয়ে তা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। উল্লেখ্য, এটি বাংলাদেশে ম্যাক্রোঁর প্রথম এবং কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় সফর।
চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতি, স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশ করেছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও ফ্রান্স অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানেও আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি। এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এই নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই সৌহার্দপূর্ণ। সুদূর অতীতেই এ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ফরাসিরা সপ্তদশ শতাব্দীতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রথম ঢাকা শহর এবং দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক এলাকায় সম্পর্ক স্থাপন করেন। সেসময় তাদের ব্রিটিশদের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধ ছিল। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন যখন ব্রিটিশদের সঙ্গে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধ হয়, তখন নবাবের সহায়তায় সৈন্য পাঠানোর মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ফ্রান্স। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও ফরাসিদের অবদান চিরস্মরণীয়। ফরাসি লেখক ও চিন্তাবিদ অঁদ্রে মালরো বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে নিজের যুদ্ধ মনে করেন। এছাড়া মুক্তযুদ্ধ চলাকালে জঁ ক্যা নামে একজন মানবতাবাদী ফরাসি যুবক ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাংলাদেশি শরণার্থীদের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর দাবিতে একটি পাকিস্তানি বিমান (পিআইএ) ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে বিষয়টির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ঘটনার পর ফরাসি সরকার বাংলাদেশকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভারতের শরণার্থীশিবিরে ২০ টন ওষুধ আর চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছে দেয়।
ফ্রান্স বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। এ বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। ফ্রান্স শিল্প-সাহিত্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ভারী শিল্প যেমন : বুলেট ট্রেন, যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন প্রভৃতি সামগ্রী রপ্তানির দিক থেকে বিশ্বের প্রথম সারিতে অবস্থানকারী দেশ ফ্রান্স। তাই দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা লাভবান হতে পারি। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগেও গড়ে উঠতে পারে বিভিন্ন শিল্প। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে হবে। শিক্ষা ও শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় করা যেতে পারে সহযোগিতার বন্ধন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে, এটাই প্রত্যাশা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023