নিষিদ্ধ ঘনচিনির প্রবেশ
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঘনচিনি (সোডিয়াম সাইক্লামেট) আমদানি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ পণ্যটি বিভিন্ন সময়ে বাজারে পাওয়া গেছে। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, দেশে অন্য পণ্যের নামে ঘনচিনি আমদানি করা হচ্ছে। এ ধারণা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় যুগান্তরের অনুসন্ধানে। জানা যায়, ২০২২ সালে রাজধানীর মিটফোর্ডের একটি বাণিজ্যিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ২০ হাজার ১৬০ কেজি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পাউডার (চুনাপাথর) আমদানি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমসের এআইআর (গোয়েন্দা) শাখা পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা করে দেখতে পায়, চালানে ১৪ হাজার কেজি ঘনচিনি এবং ৬ হাজার কেজি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পাউডার রয়েছে। এ ঘটনায় আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও জেটি সরকারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, সেই পণ্য পরে খালাস হয়ে যায়। বস্তুত এভাবেই বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে ঘনচিনিসহ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য।
ঘনচিনি প্রকৃত চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি এবং দামে কম হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা তা দিয়ে তৈরি করে মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় বিভিন্ন খাদ্য। আর শিশুরা যেসব খাবারের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় যেমন: চকলেট, আইসক্রিম, কনডেন্সড মিল্ক ও বেভারেজজাতীয় পানীয়-এসব তৈরিতেও ঘনচিনি ব্যবহার করে থাকে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘনচিনি ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে, মানব হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়; এছাড়া পুরুষত্ব হানিও ঘটতে পারে। বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে দেশে ২০০৬ সালে ঘনচিনির আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য ১৯৬০ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৯ সালে ঘনচিনির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের দেশে এই ক্ষতিকর পণ্য যারা আমদানি করছে, তাদের শাস্তি হওয়া যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি শনাক্ত হওয়ার পরও যাদের কারণে তা খালাস হয়ে দেশের বাজারে ঢুকছে, তাদেরও শাস্তি হওয়া। তবে তদন্ত কমিটি আলোচ্য জালিয়াতির ঘটনায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা পায়নি। পুরো ঘটনাকে অ্যাসাইকুডা সিস্টেমের দুর্বলতা এবং ‘মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের কথা হলো, ঘনচিনি খালাস হওয়ার পেছনে যদি সিস্টেমের কোনো দুর্বলতা কাজ করে থাকে, তাহলে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নিতে হবে যে কোনো উপায়ে এবং অবিলম্বে। তা না হলে এভাবে আরও অনেক ক্ষতিকর পণ্য দেশের বাজারে ছড়িয়ে পড়বে। আর যারা কোনো না কোনোভাবে নিষিদ্ধ ক্ষতিকর পণ্য আমদানি করছে, তাদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়াটা আরও জরুরি।