শাড়ি বিভ্রাট
ঘরে সুন্দরী বউ থাকলে কী ঝামেলা, এটা বাসর রাত থেকেই টের পাচ্ছে বশির মিয়া। বশিরের সুন্দরী স্ত্রী রুমা বেগম কখন হাসবে, কখন কাঁদবে কিংবা কখন কী বায়না ধরে বসবে, তা দেবতাদেরও অগোচর। বায়নার আয়নায় নিজের অসহায় মূর্তি দেখে বশির হয়তো বলে-
: তর মাথায় কি ছিট আছে?
কাঁচ-ভাঙ্গা হাসি হেসে তৎক্ষণাৎ রুমা বেগম উত্তর দেয়-
: হ আছে, আমার মাথায় ছিট আছে; পীরিতের ছিট।
হাটবার হওয়ায় পানের বরজ থেকে পান সংগ্রহ করে বারান্দায় বসে বিড়া তৈরি করছিল বশির, এমন সময় মায়ের গলা শুনতে পেল সে-
: ও বশু, বউ কান্দে ক্যা?
: ক্যামনে কমু।
: ক্যামনে কমু মানে! তুই কিছু কইছস?
: না।
: তাইলে কান্দে ক্যা?
: কী মুশকিল! ঘুম থেইকা উইঠাই আমি পান তুলতে গেলাম। পাটেশ্বরী কী জন্য কান্দে, আমি ক্যামনে কমু?
রোদন-রহস্য উদ্ঘাটিত হলো হাটে যাওয়ার আগ মুহূর্তে। রুমা বেগমের বক্তব্য হলো- সে স্বপ্নে দেখেছে, তার মা তার কাছে পানি চাচ্ছে। বিষয়টির ব্যাখ্যা সে করেছে এভাবে- যে কোনো কারণেই হোক, মা তাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। তা না হলে এভাবে স্বপ্নে পানির জন্য ব্যকুলতা প্রকাশ করত না। বশির অভিজ্ঞতা থেকে জানে- রুমা বেগম যখন যাবে বলেছে, তখন সে যাবেই। সাব্যস্ত হলো, বশিরের ছোট ভাই কসির ভাবিকে নিয়ে যাবে। বশির যেতে পারছে না, কারণ ধলা গাভীটা আসন্ন প্রসবা; এ মুহূর্তে একে ছেড়ে কোথাও নড়ার উপায় নেই।
বিদায়ের প্রাক-মুহূর্তে রুমা বেগম জানতে চাইল-
: আপনে কবে যাবাইন, কইন।
: আমার কুনু যাওয়া-যাওয়ি নাই।
: মাথার কিরা। কবে যাবাইন, কইন!
: কইলাম তো ...
রুমা বেগমবিহীন দিন-রাতের প্রতিটি প্রহর কী পরিমাণ কষ্টের, তা বশির বুঝতে পারে; যখন দুজনের মধ্যে বিরহকাল উপস্থিত হয়। রুমা বেগম চলে যাওয়ার পরদিন গোসল করতে গিয়ে বশির শুনল, পুকুরের জল কলকল শব্দে তাকে বলছে- মাথার কিরা, মাথার কিরা, মাথার কিরা। পানের বরজে গিয়ে শুনল, পান পাতারা গুঞ্জন তুলে বলছে- মাথার কিরা, মাথার কিরা, মাথার কিরা। দুপুরে খেতে বসে শুনল, ভাত-তরকারিগুলো সমস্বরে হাহাকার করছে- মাথার কিরা, মাথার কিরা, মাথার কিরা। এ অবস্থায় বরাবর যা করে বশির, এবারও তাই করল; ধলা গাইকে নিয়তির হাতে সঁপে দিয়ে বিকেলের ট্রেনে শ্বশুরবাড়ি রওনা হয়ে গেল।
সন্ধ্যাকালে শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি যেতেই বশির লক্ষ্য করল, মাচা থেকে লাউশাক তুলছে এক নারী। নারীর পরনে চন্দ মল্লিকা শাড়ি দেখে বশির নিশ্চিত হলো, এ তার রুমা বেগম। হঠাৎ রোমান্টিকতার ঢেউ আছড়ে পড়ল বশিরের হৃদয়তটে। সে চুপিচুপি নিকটবর্তী হয়ে রুমা বেগমের ঘাড়ে চিমটি কেটে নিজের উপস্থিতি জানান দিল।
চিমটি যে দিল এবং চিমটি যে খেল- দুজনেই দুজনকে এক পলক দেখল এবং অতঃপর একজন জমে পাথর হয়ে গেল আর অন্যজন দৌড়ে বাড়ির ভেতরে গিয়ে রুমা বেগমের উদ্দেশে বলল-
: একটা কাম বড় বেতাইল্যা অইয়া গেছে!
: কী হইছে?
: জাংলা থেইকা লাউয়ের ডুগা তুলতেছিলাম, জামাই আমারে তুই মনে কইরা ...
: তোমারে আমি মনে কইরা কী করছে! চিমটি দিছে?
: তুই বুঝলি ক্যামনে!
: আমার মানুষের কাজকাম আমি বুঝমু না তো পাড়ার মাইনষ্যে বুঝবে? হিঃ হিঃ হিঃ ...
: রঙঢঙ্গ পরে করিস। অহন তর শাড়ি আমি তরে খুইলা দিতাছি, এইডা পিইন্দা তাড়াতাড়ি জামাইয়ের কাছে যা।
শরীর বদল হয়ে চন্দ মল্লিকা শাড়ি রুমা বেগমের গায়ে উঠল। আবছা অন্ধকারে রুমা বেগম স্বামীর কাছাকাছি যেতেই বশির তার পা ছুঁয়ে সালাম করে বলল-
: আমারে মাফ কইরা দেন বুজান। আমি এট্টু বেদিশা অইয়া পড়ছিলাম।
: মাফ কইরা দিলাম।
: তুই!
: হ, আমি। উড়ুইন। আপনের জায়গা অইখানে না; আপনের জায়গা অইল আমার বুকের মইধ্যে ...
এরপর রুমা বেগম হাসে সেই হাসি, যে হাসির জন্য বশির মিয়া তামাম দুনিয়া বন্ধক দিতে রাজি। হ
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রম্যগল্প
শাড়ি বিভ্রাট
ঘরে সুন্দরী বউ থাকলে কী ঝামেলা, এটা বাসর রাত থেকেই টের পাচ্ছে বশির মিয়া। বশিরের সুন্দরী স্ত্রী রুমা বেগম কখন হাসবে, কখন কাঁদবে কিংবা কখন কী বায়না ধরে বসবে, তা দেবতাদেরও অগোচর। বায়নার আয়নায় নিজের অসহায় মূর্তি দেখে বশির হয়তো বলে-
: তর মাথায় কি ছিট আছে?
কাঁচ-ভাঙ্গা হাসি হেসে তৎক্ষণাৎ রুমা বেগম উত্তর দেয়-
: হ আছে, আমার মাথায় ছিট আছে; পীরিতের ছিট।
হাটবার হওয়ায় পানের বরজ থেকে পান সংগ্রহ করে বারান্দায় বসে বিড়া তৈরি করছিল বশির, এমন সময় মায়ের গলা শুনতে পেল সে-
: ও বশু, বউ কান্দে ক্যা?
: ক্যামনে কমু।
: ক্যামনে কমু মানে! তুই কিছু কইছস?
: না।
: তাইলে কান্দে ক্যা?
: কী মুশকিল! ঘুম থেইকা উইঠাই আমি পান তুলতে গেলাম। পাটেশ্বরী কী জন্য কান্দে, আমি ক্যামনে কমু?
রোদন-রহস্য উদ্ঘাটিত হলো হাটে যাওয়ার আগ মুহূর্তে। রুমা বেগমের বক্তব্য হলো- সে স্বপ্নে দেখেছে, তার মা তার কাছে পানি চাচ্ছে। বিষয়টির ব্যাখ্যা সে করেছে এভাবে- যে কোনো কারণেই হোক, মা তাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। তা না হলে এভাবে স্বপ্নে পানির জন্য ব্যকুলতা প্রকাশ করত না। বশির অভিজ্ঞতা থেকে জানে- রুমা বেগম যখন যাবে বলেছে, তখন সে যাবেই। সাব্যস্ত হলো, বশিরের ছোট ভাই কসির ভাবিকে নিয়ে যাবে। বশির যেতে পারছে না, কারণ ধলা গাভীটা আসন্ন প্রসবা; এ মুহূর্তে একে ছেড়ে কোথাও নড়ার উপায় নেই।
বিদায়ের প্রাক-মুহূর্তে রুমা বেগম জানতে চাইল-
: আপনে কবে যাবাইন, কইন।
: আমার কুনু যাওয়া-যাওয়ি নাই।
: মাথার কিরা। কবে যাবাইন, কইন!
: কইলাম তো ...
রুমা বেগমবিহীন দিন-রাতের প্রতিটি প্রহর কী পরিমাণ কষ্টের, তা বশির বুঝতে পারে; যখন দুজনের মধ্যে বিরহকাল উপস্থিত হয়। রুমা বেগম চলে যাওয়ার পরদিন গোসল করতে গিয়ে বশির শুনল, পুকুরের জল কলকল শব্দে তাকে বলছে- মাথার কিরা, মাথার কিরা, মাথার কিরা। পানের বরজে গিয়ে শুনল, পান পাতারা গুঞ্জন তুলে বলছে- মাথার কিরা, মাথার কিরা, মাথার কিরা। দুপুরে খেতে বসে শুনল, ভাত-তরকারিগুলো সমস্বরে হাহাকার করছে- মাথার কিরা, মাথার কিরা, মাথার কিরা। এ অবস্থায় বরাবর যা করে বশির, এবারও তাই করল; ধলা গাইকে নিয়তির হাতে সঁপে দিয়ে বিকেলের ট্রেনে শ্বশুরবাড়ি রওনা হয়ে গেল।
সন্ধ্যাকালে শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি যেতেই বশির লক্ষ্য করল, মাচা থেকে লাউশাক তুলছে এক নারী। নারীর পরনে চন্দ মল্লিকা শাড়ি দেখে বশির নিশ্চিত হলো, এ তার রুমা বেগম। হঠাৎ রোমান্টিকতার ঢেউ আছড়ে পড়ল বশিরের হৃদয়তটে। সে চুপিচুপি নিকটবর্তী হয়ে রুমা বেগমের ঘাড়ে চিমটি কেটে নিজের উপস্থিতি জানান দিল।
চিমটি যে দিল এবং চিমটি যে খেল- দুজনেই দুজনকে এক পলক দেখল এবং অতঃপর একজন জমে পাথর হয়ে গেল আর অন্যজন দৌড়ে বাড়ির ভেতরে গিয়ে রুমা বেগমের উদ্দেশে বলল-
: একটা কাম বড় বেতাইল্যা অইয়া গেছে!
: কী হইছে?
: জাংলা থেইকা লাউয়ের ডুগা তুলতেছিলাম, জামাই আমারে তুই মনে কইরা ...
: তোমারে আমি মনে কইরা কী করছে! চিমটি দিছে?
: তুই বুঝলি ক্যামনে!
: আমার মানুষের কাজকাম আমি বুঝমু না তো পাড়ার মাইনষ্যে বুঝবে? হিঃ হিঃ হিঃ ...
: রঙঢঙ্গ পরে করিস। অহন তর শাড়ি আমি তরে খুইলা দিতাছি, এইডা পিইন্দা তাড়াতাড়ি জামাইয়ের কাছে যা।
শরীর বদল হয়ে চন্দ মল্লিকা শাড়ি রুমা বেগমের গায়ে উঠল। আবছা অন্ধকারে রুমা বেগম স্বামীর কাছাকাছি যেতেই বশির তার পা ছুঁয়ে সালাম করে বলল-
: আমারে মাফ কইরা দেন বুজান। আমি এট্টু বেদিশা অইয়া পড়ছিলাম।
: মাফ কইরা দিলাম।
: তুই!
: হ, আমি। উড়ুইন। আপনের জায়গা অইখানে না; আপনের জায়গা অইল আমার বুকের মইধ্যে ...
এরপর রুমা বেগম হাসে সেই হাসি, যে হাসির জন্য বশির মিয়া তামাম দুনিয়া বন্ধক দিতে রাজি। হ