মিরপুরের সাপ
সাপ দেখলে আমার গা ঘিনঘিন করে। এর বিশেষ কোনো কারণ জানা নেই। অন্যসব প্রাণীর মতো সাপও একটি প্রাণী। জলকাদা বা স্যাঁতসেঁতে গর্তের ভেতরে থাকলেও, কী তার চাকচিক্য, রঙের বাহার, নকশার নান্দনিকতা। সাপ মানুষকে দংশন করে সে কথা সত্য-তাতে ভয় পাওয়া যেতে পারে, ঘৃণা করব কেন? বিষয়টা জেনেটিক হতে পারে। আমার দাদিরও ছিল এ সমস্যা-ভয়ানক রকমের সমস্যা ছিল। দাদি সাপ দেখলেই হাউমাউ করে দৌড় দিতেন, ভয়ে আমিও দাদির সঙ্গে দৌড় দিতাম। পরে যখন জেনেছি, ওটা দাদির একটা বিশেষ রোগ-মানসিক। তখন আর আমি অত জোরে দৌড়াতাম না, আস্তে আস্তে দৌড়াতাম-ওই রোগ আমার আছে বটে, কিন্তু প্রকোপ কম। তাই আমার অত জোরে দৌড়াবার দরকার নেই, আর দৌড়াবার সময় মুখ দিয়ে ওরকম ভয়ংকর শব্দ করারও দরকার নেই-যার প্রকোপ বেশি সে ওসব করবে।
দাদির ওই রোগের প্রকোপ এতবেশি ছিল যে টিভিতে সাপ দেখলেও একই স্টাইলে মুখ দিয়ে শব্দ করে একদিকে দৌড় দিতেন, এমনকি দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারেও যদি সাপের ছবি দেখতেন, আতঙ্ক প্রকাশ করার কমতি হতো না। ওই রোগ এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে সাপের আকৃতির যে কোনো কিছুকেই তিনি প্রথম দর্শনেই সাপ ধরে নিতে শুরু করলেন।
দাদি সাপের ভয়ে মিরপুরে মেজকাকার বাসায় যেতেন না। দাদি বলতেন, ‘তোর মেজকাকার ছেলে শাওন একটা খবিশ, ও সাপ ধরে ঘরে নিয়ে আসে। ব্যাগের ভেতর থেকে বের করে।’ মিরপুরে এত সাপ কোথায়, যে শাওন রোজ একটা করে ধরে ব্যাগে করে ঘরে নিয়ে আসবে?
একবার চানরাতে দাদি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। সেবার উনি সাহস করে ঈদ করতে মেজকাকার বাসায় গিয়েছিলেন। আর শাওন বাগে পেয়ে ব্যাগ খুলে দাদিকে অজ্ঞান করে দিলো। শেষে, ভয়ে ও দাদিকে ফেলে পালাল। আমি খবর পেয়ে দাদিকে উদ্ধার করতে গেলাম। গিয়ে দেখি, ওর স্কুলব্যাগের ভেতরে সাপের মতো কী যেন। বের করে বুঝলাম, গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরির ঝুট পেঁচিয়ে ও সাপের আকৃতি বানিয়েছে। কোচিং থেকে ফেরার পথে ব্যাগে করে নিয়ে এসেছে। মিরপুর চৌদ্দ নম্বর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর সামনে পেছনে ঝুট পাওয়া যেত।
রাত বাড়তে লাগল। শাওন বাসায় ফিরছে না। কোথায় কোথায় লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। তখন মোবাইলের যুগ না-কী করে ওকে খবরটা দেই, ‘দাদির জ্ঞান ফিরেছে, ঘরে আয়।’
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রম্যগল্প
মিরপুরের সাপ
সাপ দেখলে আমার গা ঘিনঘিন করে। এর বিশেষ কোনো কারণ জানা নেই। অন্যসব প্রাণীর মতো সাপও একটি প্রাণী। জলকাদা বা স্যাঁতসেঁতে গর্তের ভেতরে থাকলেও, কী তার চাকচিক্য, রঙের বাহার, নকশার নান্দনিকতা। সাপ মানুষকে দংশন করে সে কথা সত্য-তাতে ভয় পাওয়া যেতে পারে, ঘৃণা করব কেন? বিষয়টা জেনেটিক হতে পারে। আমার দাদিরও ছিল এ সমস্যা-ভয়ানক রকমের সমস্যা ছিল। দাদি সাপ দেখলেই হাউমাউ করে দৌড় দিতেন, ভয়ে আমিও দাদির সঙ্গে দৌড় দিতাম। পরে যখন জেনেছি, ওটা দাদির একটা বিশেষ রোগ-মানসিক। তখন আর আমি অত জোরে দৌড়াতাম না, আস্তে আস্তে দৌড়াতাম-ওই রোগ আমার আছে বটে, কিন্তু প্রকোপ কম। তাই আমার অত জোরে দৌড়াবার দরকার নেই, আর দৌড়াবার সময় মুখ দিয়ে ওরকম ভয়ংকর শব্দ করারও দরকার নেই-যার প্রকোপ বেশি সে ওসব করবে।
দাদির ওই রোগের প্রকোপ এতবেশি ছিল যে টিভিতে সাপ দেখলেও একই স্টাইলে মুখ দিয়ে শব্দ করে একদিকে দৌড় দিতেন, এমনকি দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারেও যদি সাপের ছবি দেখতেন, আতঙ্ক প্রকাশ করার কমতি হতো না। ওই রোগ এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে সাপের আকৃতির যে কোনো কিছুকেই তিনি প্রথম দর্শনেই সাপ ধরে নিতে শুরু করলেন।
দাদি সাপের ভয়ে মিরপুরে মেজকাকার বাসায় যেতেন না। দাদি বলতেন, ‘তোর মেজকাকার ছেলে শাওন একটা খবিশ, ও সাপ ধরে ঘরে নিয়ে আসে। ব্যাগের ভেতর থেকে বের করে।’ মিরপুরে এত সাপ কোথায়, যে শাওন রোজ একটা করে ধরে ব্যাগে করে ঘরে নিয়ে আসবে?
একবার চানরাতে দাদি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। সেবার উনি সাহস করে ঈদ করতে মেজকাকার বাসায় গিয়েছিলেন। আর শাওন বাগে পেয়ে ব্যাগ খুলে দাদিকে অজ্ঞান করে দিলো। শেষে, ভয়ে ও দাদিকে ফেলে পালাল। আমি খবর পেয়ে দাদিকে উদ্ধার করতে গেলাম। গিয়ে দেখি, ওর স্কুলব্যাগের ভেতরে সাপের মতো কী যেন। বের করে বুঝলাম, গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরির ঝুট পেঁচিয়ে ও সাপের আকৃতি বানিয়েছে। কোচিং থেকে ফেরার পথে ব্যাগে করে নিয়ে এসেছে। মিরপুর চৌদ্দ নম্বর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর সামনে পেছনে ঝুট পাওয়া যেত।
রাত বাড়তে লাগল। শাওন বাসায় ফিরছে না। কোথায় কোথায় লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। তখন মোবাইলের যুগ না-কী করে ওকে খবরটা দেই, ‘দাদির জ্ঞান ফিরেছে, ঘরে আয়।’