ধারাবাহিক রম্য পর্ব ৯
দাম্পত্য জীবন জটিল জীবন
অল্পের জন্য চিরকুমারের নাম থেকে বাদ পড়া গৌতম দাদা হঠাৎ ফোন দিয়ে বললেন বাসায় যেতে। আমি বললাম, ‘বিয়ে করেছেন মাত্র সপ্তাহখানেক হবে। বাসায় গেলে আপনার সময় অপচয় হবে। ফোনেই বলেন।’
দাদা বেশ উত্তেজনা নিয়ে বললেন, ‘তোমার ভাবী বাপের বাড়িতে। সমস্যা নেই, বাসায় এসো।’
‘ঘটনা কী বলেন?’
দাদা বললেন, ‘আমার কিছু প্রেমপত্র আছে। সেগুলো ফেসবুক লাইভে গিয়ে পোড়াতে চাই। তোমার সহযোগিতা লাগবে।’
‘চিঠি পোড়ানো দেখে যদি প্রেমিকারা চলে আসে! তখন বিপদ বাড়বে। বউদি লাইভ দেখলে আপনার লাইফ ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।’
‘তোমার বউদিকে ফেসবুকে ব্লক করে রেখেছি।’
আমি মনে মনে দাদার বুদ্ধির তারিফ করলাম। দাদা বললেন, ‘ফেসবুকে অনেকে অনেক কিছু পোড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেউ চিঠি পোড়ায়নি।’
ফোন রেখে আমি দাদার বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। দাদা ড্রয়ার থেকে পনের-বিশটা চিঠি বের করে বললেন, ‘এগুলো পোড়াবো। তুমি আমার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে যাবে।’
লাইভে গেলাম, দাদা একেক জনের চিঠি পাঠ করে একটার পর একটা আগুনে পোড়াতে থাকলেন। অগ্নিযজ্ঞ শেষ হওয়ার পর আমি জানতে চাইলাম, ‘এ পাগলামির মানে কী?’
দাদা বললেন, ‘সবাই আমাকে ছ্যাঁকা দিয়েছে। সঠিক সময়ে চাকরি না পাওয়ার কারণে সবাই অন্যদের হাত ধরে চলে গেছে। দেখি কেউ চিঠির টানে আসে কিনা।’
ঘণ্টা তিনেক পর নন্দিতা নামে দাদার এক সাবেক প্রেমিকা স্বামীসহ হাজির হলেন। নন্দিতা অগ্নিমূর্তি হয়ে বললেন, ‘ফাজলামি করার একটা সীমা আছে। আমার সংসারে আগুন লাগাতে চাইছ তুমি।’
দাদা কিছু বলার আগেই তার স্বামী বললেন, ‘পরেরবার এমন পাগলামি করলে আপনাকে পুড়িয়ে দেব।’
আমি চুপ করে বসে রইলাম। স্বামী-স্ত্রী দুজন গৌতম দাদাকে শাসিয়ে চলে গেলেন। মিনিটপাঁচেক পর আবার কলিংবেল বেজে উঠল। দাদা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দরজা খুললেন।
শাড়ি পরা এক তরুণী রুমে প্রবেশ করলেন। আমি একনজর দেখে ভাবলাম দাদার অন্য কোনো প্রেমিকা হবে। চোখের পলক ফেলার আগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো তরুণীর আগুনের লেলিহান শিখা দাদাকে জড়িয়ে ফেলল। আমি ভয়ে সোফায় বসে কাঁপছি।
দাদা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললেন, ‘ছোট ভাইয়ের সামনে অপমান করো না প্লিজ।’
বউদি বললেন, ‘তাহলে এই ছোট ভাইকে দিয়ে লাইভ করিয়েছ?’
তিনি এবার আমার দিকে তীরের মতো প্রশ্ন ছুড়ে বললেন, ‘এখন পর্যন্ত কয়জন এসেছিল?’
আমি আমতা আমতা করতে থাকলাম। বউদি বললেন, ‘পুরুষ জাত সব সমান। বুঝছি, কিছুই বলবেন না।’
আমি পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কেটে পড়ার প্রস্তুতি নিই। বউদি বললেন, ‘বিয়ের আগে গৌতম সন্ন্যাসীর মতো বলেছে কোনো প্রেমট্রেম করে নাই জীবনে। তাকেই জ্যান্ত পোড়াবো। রাতে লাইভ দেখিয়েন।’
আমি প্রাণ নিয়ে কোনো রকমে বের হয়ে এলাম। বাসার কাছাকাছি এসে পকেট থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি নওশিন নামের এক ছোট বোন ম্যাসেঞ্জারে লিখেছে, ‘ভাই, দাম্পত্য জীবন নিয়ে অনেক কিছু লিখেন। এবার দেখলাম প্রেমপত্র পোড়ানো নিয়েও স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সাহস থাকলে ভাবীর দেওয়া বাজারের ফর্দ পুড়িয়ে দেখান।’
আমি উত্তর দিলাম, ‘এটা কোনো বিষয় না। একটু পরই লাইভে দেখতে পাবে।’
‘অপেক্ষায় রইলাম। হা হা হা...!’
বাসায় ফিরে দেখি বউ অফিস থেকে ফেরেনি। পকেট থেকে বাজারের ফর্দ বের করে লাইভে গিয়ে কী কী কেনার কথা লেখা ছিল তা পাঠ করলাম। তারপর বললাম, ‘বউয়ের সব কথা শুনতে নেই। একটা লাগলে তিনটা লিখে। তাছাড়া টাকাও নেই যথেষ্ট।’
এরপর ফর্দে আগুন ধরিয়ে দিলাম। লাইভ শেষ হতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনলাম। ভাবলাম বাসার নিচের দোকানদার আবেগপ্রবণ হয়ে বাজার নিয়ে ফিরেছে হয়তো। স্বপ্ন আর বাস্তব এক না, তা বউকে দেখার পর বুঝলাম। রুমে ঢুকেই সে ছাই দেখে বলল, ‘তুমি কী পুড়িয়েছ?’
বললাম, ‘বাজারের ফর্দ।’
‘তার মানে তুমি বাজার করোনি?’
আমি হাসি দিয়ে বললাম, ‘সবাই ফেসবুকে লাইভে এসে প্রেমপত্রসহ নানা কিছু পোড়াচ্ছে। আমি শখ করে বাজারের ফর্দটা পোড়ালাম। যদি কেউ বাজার নিয়ে আসে। সফল না হলে আগামীকাল নিয়ে আসবো।’
হিমালয়ের মতো ঠান্ডা বউ হঠাৎ জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘তুমি নিশ্চয়ই প্রেমপত্র পুড়িয়েছ! তোমার তো পিরিতের লোকের অভাব নাই।’
আমি নানাভাবে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম। সে কিছুতেই বিশ্বাস করল না। অগ্নিকণ্ঠে সে ঘোষণা দিল, ‘প্রেমপত্র হোক আর বাজারের ফর্দ হোক, এখন আগুন জ্বালাবো সংসারে! পারলে ঠেকাও!’
দাম্পত্য জীবন জটিল জীবন
ধারাবাহিক রম্য পর্ব ৯
সাদিকুল নিয়োগী পন্নী
০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অল্পের জন্য চিরকুমারের নাম থেকে বাদ পড়া গৌতম দাদা হঠাৎ ফোন দিয়ে বললেন বাসায় যেতে। আমি বললাম, ‘বিয়ে করেছেন মাত্র সপ্তাহখানেক হবে। বাসায় গেলে আপনার সময় অপচয় হবে। ফোনেই বলেন।’
দাদা বেশ উত্তেজনা নিয়ে বললেন, ‘তোমার ভাবী বাপের বাড়িতে। সমস্যা নেই, বাসায় এসো।’
‘ঘটনা কী বলেন?’
দাদা বললেন, ‘আমার কিছু প্রেমপত্র আছে। সেগুলো ফেসবুক লাইভে গিয়ে পোড়াতে চাই। তোমার সহযোগিতা লাগবে।’
‘চিঠি পোড়ানো দেখে যদি প্রেমিকারা চলে আসে! তখন বিপদ বাড়বে। বউদি লাইভ দেখলে আপনার লাইফ ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।’
‘তোমার বউদিকে ফেসবুকে ব্লক করে রেখেছি।’
আমি মনে মনে দাদার বুদ্ধির তারিফ করলাম। দাদা বললেন, ‘ফেসবুকে অনেকে অনেক কিছু পোড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেউ চিঠি পোড়ায়নি।’
ফোন রেখে আমি দাদার বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। দাদা ড্রয়ার থেকে পনের-বিশটা চিঠি বের করে বললেন, ‘এগুলো পোড়াবো। তুমি আমার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে যাবে।’
লাইভে গেলাম, দাদা একেক জনের চিঠি পাঠ করে একটার পর একটা আগুনে পোড়াতে থাকলেন। অগ্নিযজ্ঞ শেষ হওয়ার পর আমি জানতে চাইলাম, ‘এ পাগলামির মানে কী?’
দাদা বললেন, ‘সবাই আমাকে ছ্যাঁকা দিয়েছে। সঠিক সময়ে চাকরি না পাওয়ার কারণে সবাই অন্যদের হাত ধরে চলে গেছে। দেখি কেউ চিঠির টানে আসে কিনা।’
ঘণ্টা তিনেক পর নন্দিতা নামে দাদার এক সাবেক প্রেমিকা স্বামীসহ হাজির হলেন। নন্দিতা অগ্নিমূর্তি হয়ে বললেন, ‘ফাজলামি করার একটা সীমা আছে। আমার সংসারে আগুন লাগাতে চাইছ তুমি।’
দাদা কিছু বলার আগেই তার স্বামী বললেন, ‘পরেরবার এমন পাগলামি করলে আপনাকে পুড়িয়ে দেব।’
আমি চুপ করে বসে রইলাম। স্বামী-স্ত্রী দুজন গৌতম দাদাকে শাসিয়ে চলে গেলেন। মিনিটপাঁচেক পর আবার কলিংবেল বেজে উঠল। দাদা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দরজা খুললেন।
শাড়ি পরা এক তরুণী রুমে প্রবেশ করলেন। আমি একনজর দেখে ভাবলাম দাদার অন্য কোনো প্রেমিকা হবে। চোখের পলক ফেলার আগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো তরুণীর আগুনের লেলিহান শিখা দাদাকে জড়িয়ে ফেলল। আমি ভয়ে সোফায় বসে কাঁপছি।
দাদা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললেন, ‘ছোট ভাইয়ের সামনে অপমান করো না প্লিজ।’
বউদি বললেন, ‘তাহলে এই ছোট ভাইকে দিয়ে লাইভ করিয়েছ?’
তিনি এবার আমার দিকে তীরের মতো প্রশ্ন ছুড়ে বললেন, ‘এখন পর্যন্ত কয়জন এসেছিল?’
আমি আমতা আমতা করতে থাকলাম। বউদি বললেন, ‘পুরুষ জাত সব সমান। বুঝছি, কিছুই বলবেন না।’
আমি পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কেটে পড়ার প্রস্তুতি নিই। বউদি বললেন, ‘বিয়ের আগে গৌতম সন্ন্যাসীর মতো বলেছে কোনো প্রেমট্রেম করে নাই জীবনে। তাকেই জ্যান্ত পোড়াবো। রাতে লাইভ দেখিয়েন।’
আমি প্রাণ নিয়ে কোনো রকমে বের হয়ে এলাম। বাসার কাছাকাছি এসে পকেট থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি নওশিন নামের এক ছোট বোন ম্যাসেঞ্জারে লিখেছে, ‘ভাই, দাম্পত্য জীবন নিয়ে অনেক কিছু লিখেন। এবার দেখলাম প্রেমপত্র পোড়ানো নিয়েও স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সাহস থাকলে ভাবীর দেওয়া বাজারের ফর্দ পুড়িয়ে দেখান।’
আমি উত্তর দিলাম, ‘এটা কোনো বিষয় না। একটু পরই লাইভে দেখতে পাবে।’
‘অপেক্ষায় রইলাম। হা হা হা...!’
বাসায় ফিরে দেখি বউ অফিস থেকে ফেরেনি। পকেট থেকে বাজারের ফর্দ বের করে লাইভে গিয়ে কী কী কেনার কথা লেখা ছিল তা পাঠ করলাম। তারপর বললাম, ‘বউয়ের সব কথা শুনতে নেই। একটা লাগলে তিনটা লিখে। তাছাড়া টাকাও নেই যথেষ্ট।’
এরপর ফর্দে আগুন ধরিয়ে দিলাম। লাইভ শেষ হতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনলাম। ভাবলাম বাসার নিচের দোকানদার আবেগপ্রবণ হয়ে বাজার নিয়ে ফিরেছে হয়তো। স্বপ্ন আর বাস্তব এক না, তা বউকে দেখার পর বুঝলাম। রুমে ঢুকেই সে ছাই দেখে বলল, ‘তুমি কী পুড়িয়েছ?’
বললাম, ‘বাজারের ফর্দ।’
‘তার মানে তুমি বাজার করোনি?’
আমি হাসি দিয়ে বললাম, ‘সবাই ফেসবুকে লাইভে এসে প্রেমপত্রসহ নানা কিছু পোড়াচ্ছে। আমি শখ করে বাজারের ফর্দটা পোড়ালাম। যদি কেউ বাজার নিয়ে আসে। সফল না হলে আগামীকাল নিয়ে আসবো।’
হিমালয়ের মতো ঠান্ডা বউ হঠাৎ জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘তুমি নিশ্চয়ই প্রেমপত্র পুড়িয়েছ! তোমার তো পিরিতের লোকের অভাব নাই।’
আমি নানাভাবে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম। সে কিছুতেই বিশ্বাস করল না। অগ্নিকণ্ঠে সে ঘোষণা দিল, ‘প্রেমপত্র হোক আর বাজারের ফর্দ হোক, এখন আগুন জ্বালাবো সংসারে! পারলে ঠেকাও!’
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023