Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

আলেমদের ঐতিহাসিক শুকরানা মাহফিল

Icon

তানজিল আমির

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আলেমদের ঐতিহাসিক শুকরানা মাহফিল

ফাইল ফটো

টিএসসি, বাংলা একাডেমি হয়ে দোয়েল চত্বর, সবদিক থেকেই উপচে পড়া ভিড়। ওদিকে শিখা চিরন্তন ও শিশুপার্কের ফটকে বাঁধভাঙা স্রোত, গন্তব্য একদিকেই।

স্রোতের মোহনা সেদিন মিলেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শুকরানা মাহফিল উপলক্ষে সেদিন ঢাকায় এসেছিলেন লাখো ওলামা-তলাবা। তাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল গোটা রাজধানী।

কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমানের স্বীকৃতি দেয়ায় শুকরিয়া জানাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হল শুকরানা মাহফিল। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক এ ময়দানে সেদিন সূচিত হয়েছে এক নবদিগন্তের। দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী শিক্ষা ও মেধাবিকাশের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ও মূলস্রোতধারায় প্রবেশের মাহেন্দ্রক্ষণ উপভোগ করেছে।

এখন থেকে কোনো নিন্দুক আর নাক সিটকে বলতে পারবে না, কওমি মাদ্রাসা দেশে বেকার বৃদ্ধি করছে। কওমির মেধাবীরা এখন তাদের যোগ্যতা দেখিয়ে দেবে, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় তারা কত বেশি আলোকিত। সবার চোখেমুখে ছিল প্রাপ্তির আনন্দ। স্বজাতির প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধে সবাই ছিল উদ্দীপ্ত। এটি শুধু স্বীকৃতি বা প্রাপ্তির আনন্দ নয়। স্বীকৃতির চেয়েও বেশি আনন্দ ছিল নিজেদের ঐক্যবদ্ধতায়।

কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট ৬টি বোর্ড এক হয়ে স্বীকৃতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আলেমদের এমন ঐক্য নজীরবিহীন। সোহরাওয়ার্দীর শুকরিয়া মাহফিলের মূল সফলতা এটিই।

এর আগে কখনও সব মত-পথের আলেমরা একটি বিষয়ে এমন এক হয়েছেন, এমনটি খুব কমই ঘটেছে এ জমিনে। যে বটবৃক্ষের ছায়া ও আশ্রয়ে এমন ঐক্য সম্ভব হয়েছে, তিনি হলেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ আলেমের ছায়াতলে সমবেত হয়ে সবার স্বীকৃতি গ্রহণে একমত হয়েছেন।

তাই তো যখন প্রধানমন্ত্রীর সামনে জাতীয় দ্বীনি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ আল্লামা আহমদ শফীকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার দাবি তুললেন, তখন লাখো কণ্ঠে তা সমর্থিত হয়েছে। স্বীকৃতির আজকের এ পরিণত অবস্থা কয়েকবছর আগেও এতটা সহজ ছিল না। বিভিন্ন মতানৈক্য ও রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল স্বীকৃতির আওয়াজ।

হারিয়ে যাওয়া সে আওয়াজকে কোমা থেকে তুলে আনার ক্ষেত্রে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদের অবদান জাতি ভুলবে না। সদর সাহেব তনয় মাওলানা রুহুল আমিনের প্রচেষ্টাও স্মরণ রাখতে হবে।

শুকরানা মাহফিলে এমন অনেকেই কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন যারা একসময় এ সরকার থেকে স্বীকৃতি গ্রহণ করবেন না বলে মরণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা ও আন্তরিকতায় তারাই আজ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। মনে পড়ে ২০১৬ সালের উত্তাল সে দিনগুলোর কথা। দৈনিক যুগান্তরের ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতায় কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে যতকথা নামে এ লেখকের একটি লেখা লিড হয়েছিল।

স্বীকৃতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে এ লেখাটির কারণে অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছিল। সে দিন যারা কটু কথা বলেছিলেন, তাদেরও শুকরানা মাহফিলে দেখে মনটা খুশিতে ভরে গিয়েছিল। এভাবে ১৮ বছর স্বীকৃতির পক্ষে জনমত গঠনে যুগান্তরের ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতার অবদানও অবিস্মরণীয়। এ স্বীকৃতির মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসা ও দেশ জাতির কতটুকু লাভ হবে? অনেকেই প্রশ্নটি তুলছেন।

আমরা বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাই, এর মাধ্যমে ক্ষতি কী হবে? দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী যেখানে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মূলস্রোতধারার বাইরে ছিল, তাদের মানোন্নয়ন ও মূলধারায় সম্পৃক্ততা কি জরুরি নয়?

এমন বাস্তবতা উপলব্ধি করেই প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। অনেক বাধা ও সমালোচনা উপেক্ষা করে তিনি আলেমদের দাবিগুলো পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। বিশেষত নিচের স্তরগুলো বাদ রেখে শুধু সর্বোচ্চ স্তরকে মান দেয়া একটি নজীরবিহীন ও সাহসী পদক্ষেপ।

ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের প্রতি ভালোবাসার কারণেই তিনি এ কাজটি করেছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এমন ভালো কাজের প্রতিদান হিসেবেই দেশের আলেমরা প্রধানমন্ত্রীকে শুকরানা মাহফিলের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন কওমি জননী উপাধি দিয়ে। স্

বীকৃতির আইনটি বাস্তবায়িত হোক জরুরি ভিত্তিতে। কওমির মেধাবী আলেমদের পদচারণায় মুখরিত হোক সরকারের প্রতিটি কর্মক্ষেত্র।

লেখক : তরুণ আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী

ইমেইল : tanjil.amir@yahoo.com

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম