চুল দাড়িতে কলপ ব্যবহার করা যাবে?
jugantor
ইসলাম বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
চুল দাড়িতে কলপ ব্যবহার করা যাবে?

   

৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

আশরাফ আল হারুন, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা থেকে

উত্তর দিয়েছেন-মুফতি তানজিল আমির

তরুণ আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী

চুল-দাড়িতে কলপ, খেজাব বা মেহেদি অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। ইদানীং বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও অপরিণত বয়সে অনেক যুবকের মাথার চুল পেকে যায়। তা ছাড়া সাদা দাড়িওয়ালা অনেকে দাড়ি ও চুলে খেজাব বা মেহেদি ব্যবহার করেন।

পাকা চুল-দাড়ি সাদা না রেখে মেহেদি দিয়ে রাঙিয়ে রাখতে রাসূল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তাতে কালো কলপ ব্যবহার করা বৈধ নয়।

হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিনে আবু কুহাফাকে আনা হলো। তখন তার চুল-দাড়ি ছিল ‘ষাগামা’ ফুলের মতো সাদা। তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘এটিকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করো। তবে কালো থেকে বিরত থাকো।’ (সহিহ মুসলিম : ৫৪৬৬, মিশকাত ৪৪২৪ নং)।

এ হাদিসে কালো ছাড়া মেহেদি রং বা অন্য খেজাব ব্যবহারের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং কালো খেজাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আর সবার উদ্দেশে সাধারণ নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, শেষ যুগে এমন এক শ্রেণির লোক হবে, যারা পায়রার ছাতির মতো কালো কলপ ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। (আবু দাউদ ৪২১২, নাসাই, সহিহুল জামে ৮১৫৩ নং)।

হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) কিছু আনসার সাহাবাদের উদ্দেশে বলেন, সাদা দাড়ি চুলগুলো লাল অথবা হলুদ রং দ্বারা পরিবর্তন করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো। (আহমাদ ২২৩৩৭)।

এসব হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, চুল বা দাড়িতে কালো রং করা যাবে না। তবে অন্য যে কোনো রং করা যাবে। অর্থাৎ কালো বাদে অন্য যে কোনো রং করা যাবে এবং সেটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। কেননা নারীদেরও তো চুল সাদা হতে পারে।

বার্ধক্যজনিত কারণে সাদা হয়ে যাওয়া চুল-দাড়িতে কালো খেজাব ব্যবহারে নিষেধের মূল কারণ হলো-এর দ্বারা আল্লাহ প্রদত্ত বার্ধক্যকে গোপন করে মানুষের সামনে নিজেকে তরুণ হিসাবে উপস্থাপন করা। ফলে ব্যক্তিগত আচরণেও প্রভাব পড়ে। এটি এক ধরনের প্রতারণা।

অনেক চুলপাকা ব্যক্তিকে এ কাজ করতে দেখা যায়। তারা কালো রং দ্বারা সাদা চুল রাঙিয়ে নিজেদের যুবক কিংবা অপেক্ষাকৃত কম বয়সি হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। এটি এক ধরনের প্রতারণা। আল্লাহর ফায়সালাকে মেনে না নেওয়ার নামান্তর।

তবে অসুস্থতা, চুলের যত্ন না নেওয়া, কোনো ওষুধ ব্যবহারের কারণে বা অন্য কোনো কারণে অপরিণত বয়সেই যে যুবকের চুল-দাড়ি সাদা হয়ে গেছে, যেহেতু সে আসলে বৃদ্ধ নয়, এখানে বার্ধক্য গোপন করা হচ্ছে না; তাই সে কালো খেজাব ব্যবহার বৈধ বলেই অনেক আলেম মত দিয়েছেন। (ফায়জুল কাদির : ১/৩৩৬)।

এভাবে নারীদের চুলে কলপ ব্যবহার করার বিধান পুরুষদের চুলে কলপ ব্যবহার করার মতোই।

চুল-দাড়িতে নারী-পুরুষ উভয়ে মেহেদি ব্যবহার করতে পারবেন। পুরুষের জন্য শরীরের অন্য কোথাও রং লাগানোর অনুমতি নেই, তাই তারা শুধু চুল-দাড়ি বাদে শরীরের আর কোথাও মেহেদি লাগাতে পারবেন না। কিন্তু নারীরা হাত-পাসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও মেহেদি লাগাতে পারবেন।

ইসলাম বিষয়ক প্রশ্নোত্তর

চুল দাড়িতে কলপ ব্যবহার করা যাবে?

  
৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

আশরাফ আল হারুন, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা থেকে

উত্তর দিয়েছেন-মুফতি তানজিল আমির

তরুণ আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী

চুল-দাড়িতে কলপ, খেজাব বা মেহেদি অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। ইদানীং বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও অপরিণত বয়সে অনেক যুবকের মাথার চুল পেকে যায়। তা ছাড়া সাদা দাড়িওয়ালা অনেকে দাড়ি ও চুলে খেজাব বা মেহেদি ব্যবহার করেন।

পাকা চুল-দাড়ি সাদা না রেখে মেহেদি দিয়ে রাঙিয়ে রাখতে রাসূল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তাতে কালো কলপ ব্যবহার করা বৈধ নয়।

হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিনে আবু কুহাফাকে আনা হলো। তখন তার চুল-দাড়ি ছিল ‘ষাগামা’ ফুলের মতো সাদা। তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘এটিকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করো। তবে কালো থেকে বিরত থাকো।’ (সহিহ মুসলিম : ৫৪৬৬, মিশকাত ৪৪২৪ নং)।

এ হাদিসে কালো ছাড়া মেহেদি রং বা অন্য খেজাব ব্যবহারের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং কালো খেজাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আর সবার উদ্দেশে সাধারণ নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, শেষ যুগে এমন এক শ্রেণির লোক হবে, যারা পায়রার ছাতির মতো কালো কলপ ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। (আবু দাউদ ৪২১২, নাসাই, সহিহুল জামে ৮১৫৩ নং)।

হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) কিছু আনসার সাহাবাদের উদ্দেশে বলেন, সাদা দাড়ি চুলগুলো লাল অথবা হলুদ রং দ্বারা পরিবর্তন করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো। (আহমাদ ২২৩৩৭)।

এসব হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, চুল বা দাড়িতে কালো রং করা যাবে না। তবে অন্য যে কোনো রং করা যাবে। অর্থাৎ কালো বাদে অন্য যে কোনো রং করা যাবে এবং সেটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। কেননা নারীদেরও তো চুল সাদা হতে পারে।

বার্ধক্যজনিত কারণে সাদা হয়ে যাওয়া চুল-দাড়িতে কালো খেজাব ব্যবহারে নিষেধের মূল কারণ হলো-এর দ্বারা আল্লাহ প্রদত্ত বার্ধক্যকে গোপন করে মানুষের সামনে নিজেকে তরুণ হিসাবে উপস্থাপন করা। ফলে ব্যক্তিগত আচরণেও প্রভাব পড়ে। এটি এক ধরনের প্রতারণা।

অনেক চুলপাকা ব্যক্তিকে এ কাজ করতে দেখা যায়। তারা কালো রং দ্বারা সাদা চুল রাঙিয়ে নিজেদের যুবক কিংবা অপেক্ষাকৃত কম বয়সি হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। এটি এক ধরনের প্রতারণা। আল্লাহর ফায়সালাকে মেনে না নেওয়ার নামান্তর।

তবে অসুস্থতা, চুলের যত্ন না নেওয়া, কোনো ওষুধ ব্যবহারের কারণে বা অন্য কোনো কারণে অপরিণত বয়সেই যে যুবকের চুল-দাড়ি সাদা হয়ে গেছে, যেহেতু সে আসলে বৃদ্ধ নয়, এখানে বার্ধক্য গোপন করা হচ্ছে না; তাই সে কালো খেজাব ব্যবহার বৈধ বলেই অনেক আলেম মত দিয়েছেন। (ফায়জুল কাদির : ১/৩৩৬)।

এভাবে নারীদের চুলে কলপ ব্যবহার করার বিধান পুরুষদের চুলে কলপ ব্যবহার করার মতোই।

চুল-দাড়িতে নারী-পুরুষ উভয়ে মেহেদি ব্যবহার করতে পারবেন। পুরুষের জন্য শরীরের অন্য কোথাও রং লাগানোর অনুমতি নেই, তাই তারা শুধু চুল-দাড়ি বাদে শরীরের আর কোথাও মেহেদি লাগাতে পারবেন না। কিন্তু নারীরা হাত-পাসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও মেহেদি লাগাতে পারবেন।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন