ইসলামে প্রতিবেশীর মর্যাদা ও অধিকার
মানুষ সামাজিক জীব। একাকী বসবাস করতে পারে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ, আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল আচরণের মধ্য দিয়েই তাকে বাঁচতে হয়। এ জন্য প্রতিবেশীর অধিকার ও মর্যাদার প্রতি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
হজরত হাসান (র.) থেকে বর্ণিত, তাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন, নিজ ঘর থেকে সম্মুখের চল্লিশটি, পশ্চাতের চল্লিশটি, ডান পাশের চল্লিশটি ও বাম পাশের চল্লিশটি ঘরের অধিবাসীরাই প্রতিবেশী।
উত্তম প্রতিবেশী সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, একজন মুসলমানের জন্য খোলামেলা বাড়ি, প্রশস্ত বাসভবন, সৎপ্রতিবেশী ও রুচিসম্মত বাহন সৌভাগ্য স্বরূপ’। পক্ষান্তরে নিকৃষ্ট প্রতিবেশী থেকে রাসূল (সা.) দোয়া করতেন এই বলে, হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট প্রতিবেশী থেকে।
প্রতিবেশীর ব্যাপারে রাসূল (সা.)কে জিবরাইল (আ.) বারবার তাকিদ করতেন। রাসূল (সা.) বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি মনে হতো যে, হয়তো তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন’।
নিম্নে কুরআন হাদিসের আলোকে প্রতিবেশীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
প্রতিবেশীকে সহায়তা করা
প্রতিবেশী আত্মীয় হোক অথবা অনাত্মীয়, মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম যে কোনো অবস্থায় সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহায়তা করা। হজরত রাসূলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে’।
উত্তম ব্যবহার করা
সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে ও সুখী-সমৃদ্ধশালী জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে’।
ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হওয়া
প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া অনুচিত। কেননা এতে উভয়ের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সেই ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না।
কষ্ট না দেওয়া
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া ও নির্যাতন করে গৃহত্যাগে বাধ্য করা অতি বড় গোনাহের কাজ। হজরত ছাওবান (রা.) প্রায়ই বলতেন, যে প্রতিবেশী তার কোনো প্রতিবেশীকে নির্যাতন করে বা তার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করে যাতে সে ব্যক্তি গৃহত্যাগে বাধ্য হয়, সে ব্যক্তি নিশ্চিত ধ্বংসের মধ্যে পতিত হয়।
খাবার পৌঁছানো
প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক না কেন সবাই উত্তম আচরণ পাওয়ার অধিকার রাখে। বাড়িতে ভালো কোনো খাদ্য বা তরকারি রান্না হলে তাতে প্রতিবেশীকে শরিক করা রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ। তিনি আবুযর (রা.)-কে বলেন, হে আবুযর! যখন কোনো তরকারি পাক করবে, তখন তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তোমার প্রতিবেশীকে পৌঁছাও।
জানাজায় শরিক হওয়া
কোনো মুসলমান প্রতিবেশী ইন্তেকাল করলে তার জানাযায় শরিক হওয়া ও শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা প্রদান ও খাদ্য সরবরাহ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের হক পাঁচটি। সালামের জওয়াব দেওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাজায় শরিক হওয়া, আহ্বানে সাড়া দেওয়া, হাঁচির জবাব দেওয়া। খাদ্য সরবরাহ সম্পর্কে, মু’তার যুদ্ধে জাফর (রা.) শহিদ হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের বলেছিলেন, তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা কর। কেননা আজ তাদের প্রতি এমন জিনিস বা এমন বিষয় এসেছে, যা তাদের ব্যস্ত রেখেছে’।
কৌশলী হওয়া
কোনো ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে তার প্রতিকার কৌশলে করা উচিত। এ মর্মে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-এক ব্যক্তি রাসূলে করিম (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমার এক প্রতিবেশী আমাকে পীড়া দেয়। তিনি বললেন, যাও, তোমার গৃহ-সামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখ। সে ব্যক্তি তখন ঘরে গিয়ে তার গৃহসামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখল। এতে তার পাশে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। তারা জিজ্ঞেস করল, তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমার প্রতিবেশী আমাকে পীড়া দেয়। আমি তা নবি করিম (সা.)-কে বললে তিনি বললেন, যাও, ঘরে গিয়ে তোমার গৃহসামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখ। তখন তারা সেই প্রতিবেশীটিকে ধিক্কার দিতে দিতে বলতে লাগল, হে আল্লাহ! এর ওপর তোমার অভিসম্পাত হোক। হে আল্লাহ! তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত কর। এ কথা ওই প্রতিবেশীর কানে গেল এবং সে সেখানে উপস্থিত হলো। সে তখন বলল, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আল্লাহর কসম! আর কখনো আমি তোমাকে পীড়া দেব না।
মান-সম্মানের প্রতি লক্ষ রাখা
প্রতিবেশীর মান-সম্মানের প্রতি লক্ষ রাখা যেমন জরুরি, তেমনি মাল-সম্পদ হেফাজত করাও অবশ্য কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) একদা তার ছাহাবিগণকে ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, (তা কেমন? উত্তরে) তারা বললেন, হারাম; আল্লাহ ও তার রাসূল তা হারাম করেছেন। তখন তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তি দশজন নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হলেও তা তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া অপেক্ষা লঘুতর (পাপ)। অতঃপর তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তির দশ ঘরের লোকজনের বস্তুসামগ্রী চুরি করা তার প্রতিবেশীর ঘরে চুরি করার চেয়ে লঘুতর।
প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া
দুঃখ-দৈন্য, অভাব-অনটন মানব জীবনের নিত্যসঙ্গী। এসব দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। আবার ধনী-দরিদ্রও আল্লাহ করে থাকেন। সুতরাং দরিদ্র প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া আবশ্যক। প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলে তাকে খাদ্য না দিয়ে নিজে পেট পুরে খাওয়া ইমানদারের পরিচয় হতে পারে না। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওই ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় আর তার পাশেই তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে।
প্রতিবেশী আল্লাহ পাকের বিশেষ এক নেয়ামত। অতএব, এ অপরিসীম নেয়ামতের শোকর আদায়কল্পে প্রতিবেশীর সঙ্গে সৎ আচরণের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতি গড়ে সুন্দর এক সমাজ উপহার দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ইসলামে প্রতিবেশীর মর্যাদা ও অধিকার
মানুষ সামাজিক জীব। একাকী বসবাস করতে পারে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ, আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল আচরণের মধ্য দিয়েই তাকে বাঁচতে হয়। এ জন্য প্রতিবেশীর অধিকার ও মর্যাদার প্রতি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
হজরত হাসান (র.) থেকে বর্ণিত, তাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন, নিজ ঘর থেকে সম্মুখের চল্লিশটি, পশ্চাতের চল্লিশটি, ডান পাশের চল্লিশটি ও বাম পাশের চল্লিশটি ঘরের অধিবাসীরাই প্রতিবেশী।
উত্তম প্রতিবেশী সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, একজন মুসলমানের জন্য খোলামেলা বাড়ি, প্রশস্ত বাসভবন, সৎপ্রতিবেশী ও রুচিসম্মত বাহন সৌভাগ্য স্বরূপ’। পক্ষান্তরে নিকৃষ্ট প্রতিবেশী থেকে রাসূল (সা.) দোয়া করতেন এই বলে, হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট প্রতিবেশী থেকে।
প্রতিবেশীর ব্যাপারে রাসূল (সা.)কে জিবরাইল (আ.) বারবার তাকিদ করতেন। রাসূল (সা.) বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি মনে হতো যে, হয়তো তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন’।
নিম্নে কুরআন হাদিসের আলোকে প্রতিবেশীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
প্রতিবেশীকে সহায়তা করা
প্রতিবেশী আত্মীয় হোক অথবা অনাত্মীয়, মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম যে কোনো অবস্থায় সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহায়তা করা। হজরত রাসূলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে’।
উত্তম ব্যবহার করা
সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে ও সুখী-সমৃদ্ধশালী জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে’।
ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হওয়া
প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া অনুচিত। কেননা এতে উভয়ের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সেই ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না।
কষ্ট না দেওয়া
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া ও নির্যাতন করে গৃহত্যাগে বাধ্য করা অতি বড় গোনাহের কাজ। হজরত ছাওবান (রা.) প্রায়ই বলতেন, যে প্রতিবেশী তার কোনো প্রতিবেশীকে নির্যাতন করে বা তার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করে যাতে সে ব্যক্তি গৃহত্যাগে বাধ্য হয়, সে ব্যক্তি নিশ্চিত ধ্বংসের মধ্যে পতিত হয়।
খাবার পৌঁছানো
প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক না কেন সবাই উত্তম আচরণ পাওয়ার অধিকার রাখে। বাড়িতে ভালো কোনো খাদ্য বা তরকারি রান্না হলে তাতে প্রতিবেশীকে শরিক করা রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ। তিনি আবুযর (রা.)-কে বলেন, হে আবুযর! যখন কোনো তরকারি পাক করবে, তখন তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তোমার প্রতিবেশীকে পৌঁছাও।
জানাজায় শরিক হওয়া
কোনো মুসলমান প্রতিবেশী ইন্তেকাল করলে তার জানাযায় শরিক হওয়া ও শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা প্রদান ও খাদ্য সরবরাহ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের হক পাঁচটি। সালামের জওয়াব দেওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাজায় শরিক হওয়া, আহ্বানে সাড়া দেওয়া, হাঁচির জবাব দেওয়া। খাদ্য সরবরাহ সম্পর্কে, মু’তার যুদ্ধে জাফর (রা.) শহিদ হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের বলেছিলেন, তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা কর। কেননা আজ তাদের প্রতি এমন জিনিস বা এমন বিষয় এসেছে, যা তাদের ব্যস্ত রেখেছে’।
কৌশলী হওয়া
কোনো ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে তার প্রতিকার কৌশলে করা উচিত। এ মর্মে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-এক ব্যক্তি রাসূলে করিম (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমার এক প্রতিবেশী আমাকে পীড়া দেয়। তিনি বললেন, যাও, তোমার গৃহ-সামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখ। সে ব্যক্তি তখন ঘরে গিয়ে তার গৃহসামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখল। এতে তার পাশে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। তারা জিজ্ঞেস করল, তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমার প্রতিবেশী আমাকে পীড়া দেয়। আমি তা নবি করিম (সা.)-কে বললে তিনি বললেন, যাও, ঘরে গিয়ে তোমার গৃহসামগ্রী রাস্তায় বের করে রাখ। তখন তারা সেই প্রতিবেশীটিকে ধিক্কার দিতে দিতে বলতে লাগল, হে আল্লাহ! এর ওপর তোমার অভিসম্পাত হোক। হে আল্লাহ! তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত কর। এ কথা ওই প্রতিবেশীর কানে গেল এবং সে সেখানে উপস্থিত হলো। সে তখন বলল, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আল্লাহর কসম! আর কখনো আমি তোমাকে পীড়া দেব না।
মান-সম্মানের প্রতি লক্ষ রাখা
প্রতিবেশীর মান-সম্মানের প্রতি লক্ষ রাখা যেমন জরুরি, তেমনি মাল-সম্পদ হেফাজত করাও অবশ্য কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) একদা তার ছাহাবিগণকে ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, (তা কেমন? উত্তরে) তারা বললেন, হারাম; আল্লাহ ও তার রাসূল তা হারাম করেছেন। তখন তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তি দশজন নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হলেও তা তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া অপেক্ষা লঘুতর (পাপ)। অতঃপর তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তির দশ ঘরের লোকজনের বস্তুসামগ্রী চুরি করা তার প্রতিবেশীর ঘরে চুরি করার চেয়ে লঘুতর।
প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া
দুঃখ-দৈন্য, অভাব-অনটন মানব জীবনের নিত্যসঙ্গী। এসব দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। আবার ধনী-দরিদ্রও আল্লাহ করে থাকেন। সুতরাং দরিদ্র প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া আবশ্যক। প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলে তাকে খাদ্য না দিয়ে নিজে পেট পুরে খাওয়া ইমানদারের পরিচয় হতে পারে না। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওই ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় আর তার পাশেই তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে।
প্রতিবেশী আল্লাহ পাকের বিশেষ এক নেয়ামত। অতএব, এ অপরিসীম নেয়ামতের শোকর আদায়কল্পে প্রতিবেশীর সঙ্গে সৎ আচরণের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতি গড়ে সুন্দর এক সমাজ উপহার দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য।