ধর্মপ্রাণ মানুষের মুখপত্র যুগান্তর
‘সত্যের সন্ধানে নির্ভীক’ স্লোগানে পথচলা শুরু দৈনিক যুগান্তরের। বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে সঠিক ধর্মীয় চিন্তাচেতনায় জাগ্রত করার সাধনায় এ পাতাটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পত্রিকাটির শুরু থেকেই শুক্রবারের বিশেষ আয়োজন ‘ইসলাম ও জীবন’ ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে।
ইসলাম যে প্রকৃতপক্ষেই শান্তির বার্তা, ঘৃণা, সন্ত্রাস, হিংস্রতা অথবা রক্তপাতের বার্তা হওয়ার চেয়ে বহু যোজন দূরে, তা পবিত্র কুরআন ও হাদিসের শিক্ষার আলোকে একজন সাধারণ পাঠকের কাছে অত্যন্ত সাবলীলভাবে ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতা উপস্থাপন করে আসছে। আমরা শুরু থেকেই দেখে আসছি এ পাতাটি পবিত্র কুরআনের শিক্ষা ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’ এর ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে সবাইকে ধর্মীয় সম্প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ করার চেষ্টা করে থাকে।
বিশেষভাবে আমরা লক্ষ করে দেখেছি পত্রিকাটি সব সময় উগ্রতাকে পাশ কাটিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও ব্যাখ্যা তুলে ধরার যে ধারা অব্যাহত রেখেছে, তা আজ অনেক গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করছে। দুই যুগ ধরে যুগান্তরের ধর্ম পাতাটি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।
বিশেষ করে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা, মানুষকে কীভাবে প্রকৃত ইসলামের আলোয় আলোকিত করা যায়, কীভাবে পথহারাদের সঠিক পথের দিশা দেওয়া যায়, কীভাবে সন্তানদের ধর্মীয় উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়, এক কথায় সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য যার যা প্রয়োজন তা শুরু থেকেই এ পাতার প্রতিটি লেখায় স্থান পেত। এ ছাড়া রমজান, হজ, ঈদ ও ইজতেমার সময় থাকে এর বিশেষ আয়োজন।
সমগ্র বিশ্বে যখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, ইসলামের নাম নিলেই ভয়-ভীতিকর এক চিত্র সাধারণভাবেই ফুটে ওঠে। সবাই যেন অজানা এক ভীত-শঙ্কিত হয়ে পড়ে। ইসলামের নাম শুনলেই তরবারির ঝনঝনানি, বোমাবাজি আর আত্মঘাতী হামলার এক ছাপ মানুষের হৃদয়পটে ভেসে ওঠে। এমন পরিস্থিতে যুগান্তরের পাতায় ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা প্রকাশ পায় গুরুত্বের সঙ্গে।
ধর্ম পাতায় কখনো শিরোনাম হয় সম্প্রীতির আলোয় উদ্ভাসিত হোক প্রিয় বাংলাদেশ, আবার কখনো শিরোনাম হয় ঐক্যবদ্ধ থাকার মাঝেই মুসলমানদের সফলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মহানবি (সা.), অমুসলিমদের সঙ্গে যেমন ছিল নবিজির আচরণ, ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়, ইসলামে সম্প্রীতির শিক্ষা, গুজবের মহামারি, প্রযুক্তির ভয়াবহ গজব এবং ক্যানভাসারদের দখলমুক্ত হোক ওয়াজ মাহফিল। ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশ করে সত্যিই ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয় জয় করেছে পত্রিকাটি।
এ পাতায় শুরু থেকেই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা উপস্থাপন করে সবার আস্থা অর্জন করেছে। ইসলামের শিক্ষা সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। জোরজবরদস্তি কোনোক্রমেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। ইসলাম বল প্রয়োগে নয় বরং সৌহার্দ ও সম্প্রীতির দ্বারা মানুষের হৃদয় জয় করার শিক্ষাই দেয়। বল প্রয়োগ করলে অন্যের অধিকার যেমন দেওয়া যায় না, তেমনি আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভও এর দ্বারা সম্ভব নয়। ধর্মে বল প্রয়োগ না করতে পবিত্র কুরআন সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করে।
পবিত্র কুরআন সুস্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছে, ধর্ম-বিশ্বাসের বিস্তার ঘটাতে তরবারি ধারণ করো না, বরং ধর্ম-বিশ্বাসের অনুপম বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সুন্দর-শিক্ষা প্রত্যেকেরই উপস্থাপন করা উচিত, যাতে তার অনুকরণীয় উত্তম-আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে অন্যরাও তা গ্রহণ করে নেয়। ইসলাম শত্রুদের সঙ্গেও দয়ার্দ্র আচরণ করে, তা শান্তিকালীন হোক বা যুদ্ধাবস্থায়ই হোক। সর্বাবস্থায় ইসলাম অমুসলমানদের অধিকার মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করে।
ইসলামে বল প্রয়োগ করা হলে, মহানবি (সা.) বা তাঁর (সা.) খলিফাদের যুগে সংঘটিত এমন দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যেত না। সম্প্রীতির এমন লেখাগুলো যুগান্তর প্রকাশ করে ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়জুড়ে স্থান করে নিয়েছে।
এ পাতার এমন অনেক লেখা রয়েছে, যা কখনো খতিব পড়ে শোনান তার মুসল্লিদের, আবার কখনো শিক্ষক তার ছাত্রদের আগ্রহভরে শুনিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, এ পাতার কোনো লেখা পাঠকদের কাছে কখনো এতই ভালো লাগে, যা শতশত ফটোকপি করে জনগণের কাছে বিতরণ করতেও দেখা গেছে। এখন তো দেখি কোনো লেখা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার শেয়ার হয়ে যাচ্ছে। এই তো সেদিন ‘দোয়া আর নফল ইবাদতে হোক নববর্ষের সূচনা’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা হাজার হাজার শেয়ার করে পাঠকরা ছড়িয়ে দেয়।
এতে লেখক যে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন তা হলো-‘সাধারণত দেখা যায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লোকরা হৈ-হুল্লোড় ও ক্রীড়া-কৌতুক আর জাগতিক আনন্দ-উল্লাসের মাঝে সারা রাত কাটিয়ে দেয় আর এতে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা পাশ্চাত্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে না করা হয়। আমাদের নিজেদের কর্ম নিয়ে একটু তো চিন্তা করা উচিত যে, আমরা কী করে থাকি?
আমরা এটি ভেবে দেখি না যে, জীবন থেকে একটি বছরের সমাপ্তি ঘটছে আর প্রবেশ করছি নতুন বছরে, যেখানে আমার করণীয় হলো সৃষ্টিকর্তার দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, নিজের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, নতুন বছর যেন সর্বদিক থেকে মঙ্গলময় হয় সেই দোয়া করা।’ কখনো শিরোনাম দেখেই মন ভরে যায়। ‘বিজয়ের পতাকা উড়ুক মসজিদে-মাদ্রাসায়’ এমন শিরোনাম দেখার পর সবাই চাইবে লেখাটি পড়ার? মূলত যুগের চাহিদার সঙ্গে লক্ষ্য রেখে ধর্ম পাতাটি সাজানো হয় বলেই অনেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ থাকেন।
২০০৯ সালে মাতৃভাষায় জুমার খুতবা শিরোনামে আমার একটি লেখা গুরুত্বের সঙ্গে যুগান্তর প্রকাশ করেছিল। তখন যদিও বিষয়টি অনেকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি, তবে যুগান্তর ঠিকই উপলব্ধি করেছিল মাতৃভাষার গুরুত্ব কতটা। শুধু তাই নয়, মাতৃভাষার গুরুত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে হজের দিন, বিশ্ব ইজতেমার দিন এবং জুমার খুতবা মাতৃভাষায় দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল পত্রিকাটি শুরু থেকেই।
যুগান্তরের এই যে আকুতি তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়েছে। কেননা আরাফার মাঠে এখন বাংলাভাষায় খুতবাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলায় খুতবা শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইজতেমার মাঠেও এখন বাংলাভাষায় বয়ান হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদেও বাংলাভাষায় যুগোপযোগী বিষয়ে জুমার খুতবা প্রদান করা হচ্ছে। তাই আমরা অনেক আনন্দিত, যুগান্তরের মনের ইচ্ছা অনেক দেরিতে হলেও পূর্ণতা পাচ্ছে।
দুই যুগে পদার্পণ করছে যুগান্তর। দীর্ঘ এ পথচলায় দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়জুড়ে ভালোবাসার আসনটি দখল করে আছে যুগান্তরের ইসলাম ও জীবন পাতা। আমাদের দোয়া থাকবে এভাবেই যুগান্তরের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়বে প্রতিটি হৃদয়ে।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ধর্মপ্রাণ মানুষের মুখপত্র যুগান্তর
‘সত্যের সন্ধানে নির্ভীক’ স্লোগানে পথচলা শুরু দৈনিক যুগান্তরের। বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে সঠিক ধর্মীয় চিন্তাচেতনায় জাগ্রত করার সাধনায় এ পাতাটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পত্রিকাটির শুরু থেকেই শুক্রবারের বিশেষ আয়োজন ‘ইসলাম ও জীবন’ ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে।
ইসলাম যে প্রকৃতপক্ষেই শান্তির বার্তা, ঘৃণা, সন্ত্রাস, হিংস্রতা অথবা রক্তপাতের বার্তা হওয়ার চেয়ে বহু যোজন দূরে, তা পবিত্র কুরআন ও হাদিসের শিক্ষার আলোকে একজন সাধারণ পাঠকের কাছে অত্যন্ত সাবলীলভাবে ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতা উপস্থাপন করে আসছে। আমরা শুরু থেকেই দেখে আসছি এ পাতাটি পবিত্র কুরআনের শিক্ষা ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’ এর ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে সবাইকে ধর্মীয় সম্প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ করার চেষ্টা করে থাকে।
বিশেষভাবে আমরা লক্ষ করে দেখেছি পত্রিকাটি সব সময় উগ্রতাকে পাশ কাটিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও ব্যাখ্যা তুলে ধরার যে ধারা অব্যাহত রেখেছে, তা আজ অনেক গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করছে। দুই যুগ ধরে যুগান্তরের ধর্ম পাতাটি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।
বিশেষ করে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা, মানুষকে কীভাবে প্রকৃত ইসলামের আলোয় আলোকিত করা যায়, কীভাবে পথহারাদের সঠিক পথের দিশা দেওয়া যায়, কীভাবে সন্তানদের ধর্মীয় উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়, এক কথায় সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য যার যা প্রয়োজন তা শুরু থেকেই এ পাতার প্রতিটি লেখায় স্থান পেত। এ ছাড়া রমজান, হজ, ঈদ ও ইজতেমার সময় থাকে এর বিশেষ আয়োজন।
সমগ্র বিশ্বে যখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, ইসলামের নাম নিলেই ভয়-ভীতিকর এক চিত্র সাধারণভাবেই ফুটে ওঠে। সবাই যেন অজানা এক ভীত-শঙ্কিত হয়ে পড়ে। ইসলামের নাম শুনলেই তরবারির ঝনঝনানি, বোমাবাজি আর আত্মঘাতী হামলার এক ছাপ মানুষের হৃদয়পটে ভেসে ওঠে। এমন পরিস্থিতে যুগান্তরের পাতায় ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা প্রকাশ পায় গুরুত্বের সঙ্গে।
ধর্ম পাতায় কখনো শিরোনাম হয় সম্প্রীতির আলোয় উদ্ভাসিত হোক প্রিয় বাংলাদেশ, আবার কখনো শিরোনাম হয় ঐক্যবদ্ধ থাকার মাঝেই মুসলমানদের সফলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মহানবি (সা.), অমুসলিমদের সঙ্গে যেমন ছিল নবিজির আচরণ, ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়, ইসলামে সম্প্রীতির শিক্ষা, গুজবের মহামারি, প্রযুক্তির ভয়াবহ গজব এবং ক্যানভাসারদের দখলমুক্ত হোক ওয়াজ মাহফিল। ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশ করে সত্যিই ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয় জয় করেছে পত্রিকাটি।
এ পাতায় শুরু থেকেই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা উপস্থাপন করে সবার আস্থা অর্জন করেছে। ইসলামের শিক্ষা সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। জোরজবরদস্তি কোনোক্রমেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। ইসলাম বল প্রয়োগে নয় বরং সৌহার্দ ও সম্প্রীতির দ্বারা মানুষের হৃদয় জয় করার শিক্ষাই দেয়। বল প্রয়োগ করলে অন্যের অধিকার যেমন দেওয়া যায় না, তেমনি আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভও এর দ্বারা সম্ভব নয়। ধর্মে বল প্রয়োগ না করতে পবিত্র কুরআন সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করে।
পবিত্র কুরআন সুস্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছে, ধর্ম-বিশ্বাসের বিস্তার ঘটাতে তরবারি ধারণ করো না, বরং ধর্ম-বিশ্বাসের অনুপম বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সুন্দর-শিক্ষা প্রত্যেকেরই উপস্থাপন করা উচিত, যাতে তার অনুকরণীয় উত্তম-আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে অন্যরাও তা গ্রহণ করে নেয়। ইসলাম শত্রুদের সঙ্গেও দয়ার্দ্র আচরণ করে, তা শান্তিকালীন হোক বা যুদ্ধাবস্থায়ই হোক। সর্বাবস্থায় ইসলাম অমুসলমানদের অধিকার মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করে।
ইসলামে বল প্রয়োগ করা হলে, মহানবি (সা.) বা তাঁর (সা.) খলিফাদের যুগে সংঘটিত এমন দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যেত না। সম্প্রীতির এমন লেখাগুলো যুগান্তর প্রকাশ করে ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়জুড়ে স্থান করে নিয়েছে।
এ পাতার এমন অনেক লেখা রয়েছে, যা কখনো খতিব পড়ে শোনান তার মুসল্লিদের, আবার কখনো শিক্ষক তার ছাত্রদের আগ্রহভরে শুনিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, এ পাতার কোনো লেখা পাঠকদের কাছে কখনো এতই ভালো লাগে, যা শতশত ফটোকপি করে জনগণের কাছে বিতরণ করতেও দেখা গেছে। এখন তো দেখি কোনো লেখা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার শেয়ার হয়ে যাচ্ছে। এই তো সেদিন ‘দোয়া আর নফল ইবাদতে হোক নববর্ষের সূচনা’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা হাজার হাজার শেয়ার করে পাঠকরা ছড়িয়ে দেয়।
এতে লেখক যে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন তা হলো-‘সাধারণত দেখা যায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লোকরা হৈ-হুল্লোড় ও ক্রীড়া-কৌতুক আর জাগতিক আনন্দ-উল্লাসের মাঝে সারা রাত কাটিয়ে দেয় আর এতে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা পাশ্চাত্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে না করা হয়। আমাদের নিজেদের কর্ম নিয়ে একটু তো চিন্তা করা উচিত যে, আমরা কী করে থাকি?
আমরা এটি ভেবে দেখি না যে, জীবন থেকে একটি বছরের সমাপ্তি ঘটছে আর প্রবেশ করছি নতুন বছরে, যেখানে আমার করণীয় হলো সৃষ্টিকর্তার দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, নিজের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, নতুন বছর যেন সর্বদিক থেকে মঙ্গলময় হয় সেই দোয়া করা।’ কখনো শিরোনাম দেখেই মন ভরে যায়। ‘বিজয়ের পতাকা উড়ুক মসজিদে-মাদ্রাসায়’ এমন শিরোনাম দেখার পর সবাই চাইবে লেখাটি পড়ার? মূলত যুগের চাহিদার সঙ্গে লক্ষ্য রেখে ধর্ম পাতাটি সাজানো হয় বলেই অনেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ থাকেন।
২০০৯ সালে মাতৃভাষায় জুমার খুতবা শিরোনামে আমার একটি লেখা গুরুত্বের সঙ্গে যুগান্তর প্রকাশ করেছিল। তখন যদিও বিষয়টি অনেকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি, তবে যুগান্তর ঠিকই উপলব্ধি করেছিল মাতৃভাষার গুরুত্ব কতটা। শুধু তাই নয়, মাতৃভাষার গুরুত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে হজের দিন, বিশ্ব ইজতেমার দিন এবং জুমার খুতবা মাতৃভাষায় দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল পত্রিকাটি শুরু থেকেই।
যুগান্তরের এই যে আকুতি তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়েছে। কেননা আরাফার মাঠে এখন বাংলাভাষায় খুতবাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলায় খুতবা শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইজতেমার মাঠেও এখন বাংলাভাষায় বয়ান হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদেও বাংলাভাষায় যুগোপযোগী বিষয়ে জুমার খুতবা প্রদান করা হচ্ছে। তাই আমরা অনেক আনন্দিত, যুগান্তরের মনের ইচ্ছা অনেক দেরিতে হলেও পূর্ণতা পাচ্ছে।
দুই যুগে পদার্পণ করছে যুগান্তর। দীর্ঘ এ পথচলায় দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়জুড়ে ভালোবাসার আসনটি দখল করে আছে যুগান্তরের ইসলাম ও জীবন পাতা। আমাদের দোয়া থাকবে এভাবেই যুগান্তরের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়বে প্রতিটি হৃদয়ে।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com