চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোজাদারের মাসআলা
রক্ত দান
রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত দিলে, যাতে শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরুহ। ডায়াবেটিসের সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোঁটা রক্ত নেওয়া হয়, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (আহসানুল ফতওয়া)
ইনহেলার (Inhaler)
মুখের ভেতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)
এনজিওগ্রাম (Angio gram)
হার্ট ব্লক হয়ে গেলে ঊরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিওগ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরনের ওষুধ লাগানো থাকে, তারপরও রোজা ভাঙবে না।
এন্ডোসকপি (Endos Copy)
চিকন একটি পাইপ, যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলীতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এ নলে যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভেতর দিয়ে পানি/ওষুধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে, আর যদি কোনো ওষুধ লাগানো না থাকে তাহলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)।
অক্সিজেন (OXzgen)
রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)।
নাইট্রোগ্লিসারিন (Nitro Glycerin)
এরোসলজাতীয় ওষুধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোঁটা জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। ওষুধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এবং ওষুধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব, এতে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)।
সিস্টোসকপি (cystoscopy)
পেশাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)।
প্রক্টোসকপি (proctoscopy)
পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ওই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে মিশে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ওই বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতওয়া শামী)।
কপার-টি (Coper-T)
কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে। কাজা কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে।
সিরোদকার অপারেশন (Shirodkar Operation)
সিরোদকার অপারেশন হলো অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিঁচিয়ে রাখা। এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়। যেহেতু এতে কোনো ওষুধ বা বস্তু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌঁছে না তাই এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না।
ডি অ্যান্ড সি (Dilatation and Curettage)
ডি অ্যান্ড সি হলো গর্ভধারণের আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্যে Dilator-এর মাধ্যমে জীবিত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোজা ভেঙে যাবে। অযথা এমন করলে কাজা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে। (হেদায়া)।
আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasongram)
আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ওষুধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার ওপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)।
স্যালাইন (Saline)
স্যালাইন নেওয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেওয়া মাকরুহ। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম)।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোজাদারের মাসআলা
রক্ত দান
রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত দিলে, যাতে শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরুহ। ডায়াবেটিসের সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোঁটা রক্ত নেওয়া হয়, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (আহসানুল ফতওয়া)
ইনহেলার (Inhaler)
মুখের ভেতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)
এনজিওগ্রাম (Angio gram)
হার্ট ব্লক হয়ে গেলে ঊরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিওগ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরনের ওষুধ লাগানো থাকে, তারপরও রোজা ভাঙবে না।
এন্ডোসকপি (Endos Copy)
চিকন একটি পাইপ, যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলীতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এ নলে যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভেতর দিয়ে পানি/ওষুধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে, আর যদি কোনো ওষুধ লাগানো না থাকে তাহলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)।
অক্সিজেন (OXzgen)
রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)।
নাইট্রোগ্লিসারিন (Nitro Glycerin)
এরোসলজাতীয় ওষুধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোঁটা জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। ওষুধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এবং ওষুধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব, এতে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)।
সিস্টোসকপি (cystoscopy)
পেশাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)।
প্রক্টোসকপি (proctoscopy)
পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ওই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে মিশে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ওই বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতওয়া শামী)।
কপার-টি (Coper-T)
কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে। কাজা কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে।
সিরোদকার অপারেশন (Shirodkar Operation)
সিরোদকার অপারেশন হলো অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিঁচিয়ে রাখা। এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়। যেহেতু এতে কোনো ওষুধ বা বস্তু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌঁছে না তাই এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না।
ডি অ্যান্ড সি (Dilatation and Curettage)
ডি অ্যান্ড সি হলো গর্ভধারণের আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্যে Dilator-এর মাধ্যমে জীবিত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোজা ভেঙে যাবে। অযথা এমন করলে কাজা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে। (হেদায়া)।
আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasongram)
আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ওষুধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার ওপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)।
স্যালাইন (Saline)
স্যালাইন নেওয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেওয়া মাকরুহ। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম)।