এতিমের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

 সুমাইয়া আকতার 
০৯ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের সমাজে অনেক সময়, এতিমের প্রতি অবহেলা ও তুচ্ছতা প্রদর্শন করা হয়। বাবা না থাকায় স্বাভাবিক মানবিক স্নেহবাৎসল্য থেকেও অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয় তারা।

ইসলাম, এতিম অসহায় শিশুর অধিকারের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ফিকহের কিতাবে জোর তাগিদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, প্রশাসনিকভাবে তাদের অধিকার সংরক্ষণের ভিত্তি রচিত করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা তোমাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, তাদের ইসলাহ তথা সুব্যবস্থা (পুনর্বাসন) করা উত্তম...।’ (সূরা : বাকারা-২২০)। সূরা দোহায় বলা হয়েছে, ‘তিনি কি আপনাকে এতিম রূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।

তিনি আপনাকে শরিয়ত সম্পর্কে বেখবর পেয়েছেন, অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না। সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।’

বিলাসবহুল জীবনে অনেক জামাকাপড় একদিন গায়ে পড়ার পরও পুরোনো হয়ে যায় কিন্তু এতিমের গায়ে জামাটা কখনো পুরোনো হয় না। মলিন কিংবা ছেঁড়া জামাটাই যেন ওদের নতুন জামা। ক্ষুধার যন্ত্রণাকে অনায়াসে যেন পেটে পাথর বেঁধেই মিটিয়ে নেয় দিনের পর দিন। ঠি

ক এ সময়টাতেই স্মরণ হয়ে যায় প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর কথা, কারণ তিনিও ছিলেন এতিম। জন্মের আগেই পিতা মারা যান আর মাকে হারান মাত্র ছয় বছর বয়সে। কতকাল কতদিন তিনিও ক্ষুধায় কাতর হয়ে পেটে পাথর বেঁধেছেন তার হিসাব নেই।

তিনি নিজেও এতিমদের ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন, কাছে টানতেন। তাই একজন মানুষ হিসাবে প্রকৃত মুসলিম হিসাবে আমাদের সবার উচিত এতিমদের প্রতি সদয়, সহানুভূতিশীল, স্নেহশীল হওয়া।

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো এতিমকে আপন মা-বাবার সঙ্গে নিজেদের (পারিবারিক) খাবারের আয়োজনে বসায় এবং (তাকে এই পরিমাণ আহার্য দান করে যে) সে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। যারা এতিমের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করে, কুরআনে তাদের ইমান ও ধার্মিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে দ্বীনকে অস্বীকার করে? সে তো সে-ই, যে এতিমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়।’ (মাউন-১-২)। যারা এতিমের প্রতি অবিচার করে আল্লাহতায়ালা তাদের ভর্ৎসনা করে বলেন, অসম্ভব, (কখনোই নয়) বরং তোমরা এতিমের সম্মান রক্ষা কর না।’ (ফজর-১৭)।

মক্কার কুরাইশরা এতিমদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করত। পিতা মারা গেলে চাচা এসে ভাতিজার সমুদয় সম্পদ আত্মসাৎ করে নিজ উদরে হজম করে ফেলত। আল্লাহতায়ালা তাদের এ মন্দ কাজ নিষিদ্ধ করেন। এতিমদের প্রতিপালন, তাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি হতে হবে নিঃস্বার্থে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও (আল্লাহর ভালোবাসায়) অভাবি, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। (এবং তারা বলে) শুধু আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আহার্য দান করি। বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না।’ (সূরা : দাহর, ৮-৯)।

এতিমের মর্যাদা সম্পর্কিত প্রিয় নবি (সা.) আরও বলেন, বিধবা-এতিম ও গরিবের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে মুজাহিদের সমতুল্য অথবা তার মর্যাদা সে (নামাজের জন্য) রাত্রি জাগরণকারীর মতো, যে কখনো ক্লান্ত হয় না অথবা তার মর্যাদা সে রোজাদারের মতো, যে কখনো ইফতার (রোজা ভঙ্গ) করে না। (মুসলিম, হাদিস : ৫২৯৫)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে, অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। অতঃপর তিনি তার অঙ্গুলির মাধ্যমে বলেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করব।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৭৯)।

এতিমদের প্রতি সদাচরণ করা এবং তাদেরও পরিপূর্ণ অধিকার প্রদান করা প্রত্যেক মুমিনের ইমানি দায়িত্ব।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন