বই পড়া জরুরি
শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বা ছেলেবেলাতেই বই পড়তে হবে অথবা চাকরি পাওয়ার আগে বই পড়তে হবে এমন কোনো ব্যাপার নয়। চাকরি পাওয়ার আগেও পড়তে হবে, পরেও পড়তে হবে।
গাজী মুনছুর আজিজ
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জীবনে বড় হতে হলে বই পড়া জরুরি। বিশেষ করে ছেলেবেলায়। এ কথাটা পৃথিবীর অসংখ্য গুণী ব্যক্তি জেনেছেন এবং মেনেছেন। আর সে কারণে তারা আজ বিখ্যাত হয়েছেন। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ শেষ না করে বা প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ না নিয়েও বিখ্যাত হয়েছেন শুধু বই পড়ে এমন গুণীর সংখ্যাও বর্তমান পৃথিবীতে কম নেই। আর একমাত্র বই-ই মানুষকে স্বপ্ন দেখায়, ভাবায় এবং হাত ধরে নিয়ে যায় গন্তব্যে।
আমাদের অনেক অভিভাবক পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়লে রাগ করেন। তাদের ধারণা পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়লে লেখাপড়ার ক্ষতি হবে; কিন্তু ইতিহাসের পাতা উলটালে দেখা যায়, পৃথিবীর অসংখ্য গুণী ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ শেষ না করে কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ না নিয়েও বিখ্যাত হয়েছেন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম হেনরি গেটস বা বিল গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেননি। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ছেলেবেলায় খুব একটা ভালো ছাত্র ছিলেন না। ক্লাসে ফেলও করতেন। পড়া মনে রাখতে পারতেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবি হয়ে ওঠার পেছনেও প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির খুব একটা প্রয়োজন হয়নি। বাংলাভাষার অন্যতম কবি হওয়ার জন্য আল মাহমুদেরও কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির দরকার হয়নি। কিন্তু তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিখ্যাত। আবার নোবেল জয়ী ড. ইউনূস কিন্তু নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বেশি বেশি বই পড়ার জন্যই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ডিগ্রি নেই, কিন্তু জগৎজুড়ে বিখ্যাত এমন অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে দেশের কিংবা বিদেশের।
বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুর রহমান বলেন, এখন সবকিছুতে প্রতিযোগিতা। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের বাইরেও আলাদা করে পড়তে হয়। তারা লেখাপড়া নিয়ে চাপে থাকে। সেখানে পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার সময়টাও তাদের খুব কম থাকে। তবুও সব শিক্ষার্থীকেই পাঠ্যবইয়ের বাইরে সৃজনশীল বই পড়া উচিত। কারণ, বই পড়লেই সে জানতে পারবে বা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। কিন্তু ক্লাসের পড়া শেষ করতে করতেই তাদের দিন শেষ হয়ে যায়। আর প্রতিযোগিতার বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি দরকার একটা ভালো চাকরির জন্য। তবু চেষ্টা করি ছেলেমেয়েকে সৃজনশীল বই পড়াতে। সে জন্য বইও কিনি তাদের জন্য।
আসলে আমাদের বাবা-মা চান ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে কোনো রকমের একটি কেরানির চাকরি করুক, তাতেই বাবা-মা খুশি। সে জন্য বাবা-মা পারলে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে ছেলেমেয়েদের মগজে লেখাপড়া ঢোকানোর চেষ্টা করেন। ছেলেমেয়ে সাহিত্যিক হোক, শিল্পী হোক, গান করুক, বিজ্ঞানী হোক, উদ্ভাবক হোক, খেলোয়াড় হোক কিংবা কোনো সৃজনশীল কাজ করুক এটি অনেক বাবা-মা চান না। তারা মনে করেন, কোনো রকমের কেরানির চাকরি করলেই তাদের জীবন সার্থক। আর বাবা-মাকে অন্য কারও সাফল্যের কথা শোনালে তারা বলেন, ‘সবাইতো’ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, আল মাহমুদ, আইনস্টাইন, বিল গেটস হবেন না। কিন্তু বাবা-মাকে কে বোঝাবে সৃজনশীল বই না পড়লে ছেলেমেয়েদের মগজ খুলবে কী করে বা তারা স্বপ্ন দেখতে শিখবে কীভাবে? বলছি না প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির দরকার নেই। দরকার আছে, এখনকার বিশ্বে তো আরও বেশি দরকার এবং এ ডিগ্রির সঙ্গে যদি ছেলেমেয়েদের সৃজনশীল মেধার বিকাশ ঘটানো যায়, তবে তারা আরও বেশি আলোকিত হবে।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বা ছেলেবেলাতেই বই পড়তে হবে অথবা চাকরি পাওয়ার আগে বই পড়তে হবে এমন কোনো ব্যাপার নয়। চাকরি পাওয়ার আগেও পড়তে হবে, পরেও পড়তে হবে। শিক্ষার্থী থাকাকালীন পড়া জরুরি, না থাকাকালীনও জরুরি। কারণ, আপনাকে এগোতে হবে, সামনের দিক যেতে হবে কিংবা সফল হতে হবে। আর এসব করতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। পৃথিবীর অসংখ্য গুণীরা বলেছেন বা বই পড়ে দেখিয়েছেন, বড় হতে হলে পড়ার বিকল্প কিছু নেই। পড়লেই আপনি এগোতে পারবেন, আলোকিত হবেন। এর বিকল্প কিছু নেই।
আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একেকটা বই একেকটা জানালার মতো। ঘরের জানালা দিয়ে যেমন বাইরের সবকিছু দেখা যায়, তেমনি বই পড়লেও আগামীটা দেখা যায়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বই পড়া জরুরি
শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বা ছেলেবেলাতেই বই পড়তে হবে অথবা চাকরি পাওয়ার আগে বই পড়তে হবে এমন কোনো ব্যাপার নয়। চাকরি পাওয়ার আগেও পড়তে হবে, পরেও পড়তে হবে।
জীবনে বড় হতে হলে বই পড়া জরুরি। বিশেষ করে ছেলেবেলায়। এ কথাটা পৃথিবীর অসংখ্য গুণী ব্যক্তি জেনেছেন এবং মেনেছেন। আর সে কারণে তারা আজ বিখ্যাত হয়েছেন। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ শেষ না করে বা প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ না নিয়েও বিখ্যাত হয়েছেন শুধু বই পড়ে এমন গুণীর সংখ্যাও বর্তমান পৃথিবীতে কম নেই। আর একমাত্র বই-ই মানুষকে স্বপ্ন দেখায়, ভাবায় এবং হাত ধরে নিয়ে যায় গন্তব্যে।
আমাদের অনেক অভিভাবক পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়লে রাগ করেন। তাদের ধারণা পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়লে লেখাপড়ার ক্ষতি হবে; কিন্তু ইতিহাসের পাতা উলটালে দেখা যায়, পৃথিবীর অসংখ্য গুণী ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ শেষ না করে কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ না নিয়েও বিখ্যাত হয়েছেন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম হেনরি গেটস বা বিল গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেননি। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ছেলেবেলায় খুব একটা ভালো ছাত্র ছিলেন না। ক্লাসে ফেলও করতেন। পড়া মনে রাখতে পারতেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবি হয়ে ওঠার পেছনেও প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির খুব একটা প্রয়োজন হয়নি। বাংলাভাষার অন্যতম কবি হওয়ার জন্য আল মাহমুদেরও কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির দরকার হয়নি। কিন্তু তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিখ্যাত। আবার নোবেল জয়ী ড. ইউনূস কিন্তু নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বেশি বেশি বই পড়ার জন্যই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ডিগ্রি নেই, কিন্তু জগৎজুড়ে বিখ্যাত এমন অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে দেশের কিংবা বিদেশের।
বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুর রহমান বলেন, এখন সবকিছুতে প্রতিযোগিতা। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের বাইরেও আলাদা করে পড়তে হয়। তারা লেখাপড়া নিয়ে চাপে থাকে। সেখানে পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার সময়টাও তাদের খুব কম থাকে। তবুও সব শিক্ষার্থীকেই পাঠ্যবইয়ের বাইরে সৃজনশীল বই পড়া উচিত। কারণ, বই পড়লেই সে জানতে পারবে বা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। কিন্তু ক্লাসের পড়া শেষ করতে করতেই তাদের দিন শেষ হয়ে যায়। আর প্রতিযোগিতার বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি দরকার একটা ভালো চাকরির জন্য। তবু চেষ্টা করি ছেলেমেয়েকে সৃজনশীল বই পড়াতে। সে জন্য বইও কিনি তাদের জন্য।
আসলে আমাদের বাবা-মা চান ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে কোনো রকমের একটি কেরানির চাকরি করুক, তাতেই বাবা-মা খুশি। সে জন্য বাবা-মা পারলে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে ছেলেমেয়েদের মগজে লেখাপড়া ঢোকানোর চেষ্টা করেন। ছেলেমেয়ে সাহিত্যিক হোক, শিল্পী হোক, গান করুক, বিজ্ঞানী হোক, উদ্ভাবক হোক, খেলোয়াড় হোক কিংবা কোনো সৃজনশীল কাজ করুক এটি অনেক বাবা-মা চান না। তারা মনে করেন, কোনো রকমের কেরানির চাকরি করলেই তাদের জীবন সার্থক। আর বাবা-মাকে অন্য কারও সাফল্যের কথা শোনালে তারা বলেন, ‘সবাইতো’ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, আল মাহমুদ, আইনস্টাইন, বিল গেটস হবেন না। কিন্তু বাবা-মাকে কে বোঝাবে সৃজনশীল বই না পড়লে ছেলেমেয়েদের মগজ খুলবে কী করে বা তারা স্বপ্ন দেখতে শিখবে কীভাবে? বলছি না প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির দরকার নেই। দরকার আছে, এখনকার বিশ্বে তো আরও বেশি দরকার এবং এ ডিগ্রির সঙ্গে যদি ছেলেমেয়েদের সৃজনশীল মেধার বিকাশ ঘটানো যায়, তবে তারা আরও বেশি আলোকিত হবে।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বা ছেলেবেলাতেই বই পড়তে হবে অথবা চাকরি পাওয়ার আগে বই পড়তে হবে এমন কোনো ব্যাপার নয়। চাকরি পাওয়ার আগেও পড়তে হবে, পরেও পড়তে হবে। শিক্ষার্থী থাকাকালীন পড়া জরুরি, না থাকাকালীনও জরুরি। কারণ, আপনাকে এগোতে হবে, সামনের দিক যেতে হবে কিংবা সফল হতে হবে। আর এসব করতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। পৃথিবীর অসংখ্য গুণীরা বলেছেন বা বই পড়ে দেখিয়েছেন, বড় হতে হলে পড়ার বিকল্প কিছু নেই। পড়লেই আপনি এগোতে পারবেন, আলোকিত হবেন। এর বিকল্প কিছু নেই।
আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একেকটা বই একেকটা জানালার মতো। ঘরের জানালা দিয়ে যেমন বাইরের সবকিছু দেখা যায়, তেমনি বই পড়লেও আগামীটা দেখা যায়।