আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান হতে হবে: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
jugantor
বিশেষজ্ঞ অভিমত
আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান হতে হবে: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক

  যুগান্তর ডেস্ক  

২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বিএসএমএমইউ এর মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন

শুধু বাংলাদেশ নয়, করোনা এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে- এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। প্রশাসন সতর্ক আছে, তারা চেষ্টা করছে। আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার দরকার নেই, তবে আমাদের অবশ্যই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এর কোনো ভ্যাকসিন নেই, কার্যকরী কোনো ওষুধও নেই। লক্ষণ দেখে কিছু চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে ভালো খবর হল, অধিকাংশ কিন্তু ভালো হয়ে যায়, ৮০ শতাংশ রোগী ভালো হয়। ঘরে বসে চিকিৎসা সম্ভব; এমনকি ডাক্তারের কাছে না গেলেও ঘরে বসে ভালো হয়। মাত্র ২০ শতাংশের হাসপাতালে ভর্তি লাগতে পারে। এর মধ্যে ২-৩ শতাংশ আইসিইউ লাগে।

যেহেতু রোগটা ছোঁয়াচে, তাই আশপাশে যদি কোনো রোগী থাকে তার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। যিনি রোগী তার নিজের মাস্ক পরতে হবে। যেখানে-সেখানে থু থু ফেলবে না, হাঁচি-কাশিতে টিস্যু ব্যবহার করার পর যেখানে-সেখানে ফেলবে না। রুমাল ব্যবহার করলে সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে নেবে। ভাইরাসটি হাতের মাধ্যমে ছড়ায় বেশি। হাতে হাঁচি-কাশি দিলে তা ধুয়ে নিতে হবে। এটি এতটাই ছোঁয়াচে, হাতে ভাইরাস থাকলে এ হাত যেখানে স্পর্শ করবে সেখানেই ছড়াবে।

বাইরে থেকে আসবেন, দরজার হাতল ধরবেন সেখানে ভাইরাস লেগে যাবে। চেয়ারে বসবেন, টেলিফোন, কিবোর্ড যেখানে স্পর্শ করবেন সেখানেই ভাইরাস লেগে যাবে। এজন্য হাত নিয়মিত কয়েকবার সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন। নিজের ঘর ও আসবাবপত্র পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য হল এটি ভারি। এটি বাতাসে ছড়ায় না। আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি দিলে তা নিচে পড়ে যায়। সুতরাং ঘর, ফ্লোর, কার্পেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

আরেকটি হল অল্প অল্প পানি বারবার খাবে গলাটা যাতে ভিজা থাকে। শুষ্ক গলা থাকলে ভাইরাস আক্রান্ত বেশি হয়। হাত না ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না। ফলমূল, সালাত পরিষ্কার করে ধুয়ে খাবেন। খাবার ভালো করে সিদ্ধ করে খাবেন।

কারও ঘরে যদি গৃহপালিত পশু-পাখি থাকে এবং সেগুলোকে রোগা মনে হয় তাহলে তা আলাদা করে দেবেন। যদি পরিচর্যা করতেই হয় তাহলে মাস্ক পরে নেবেন, গাউন পরে নেবেন এবং হাতটি সুন্দর করে ধুয়ে নেবেন। কারণ এগুলোর মাধ্যমে ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। আর হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি কমিয়ে দেয়া। বাজারে যেখানে জনসমাগম বেশি তা এড়িয়ে চলাই ভালো।

আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়- বাইরে থেকে প্রচুর লোক আসছে। কোয়ারেন্টিন তারা মানেনি। তারা যদি ছড়িয়ে ফেলে আমরা তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বুঝতে পারব। প্রথমত, সবাইকে মনে রাখতে হবে, সর্দি-জ্বর বাংলাদেশে একটি স্বাভাবিক বিষয়। শীতকাল, গরমকাল যে কোনো সময় হতে পারে। সুতরাং সর্দি-জ্বর হলেই সবাই ভয় পাবেন না, এটি করোনাভাইরাস।

দ্বিতীয়ত, যারা বাইরে থেকে আসছে তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, যোগাযোগের এলাকা বা তিনি যেখানে যেখানে গেছেন সেখানকার কারও যদি সর্দি-কাশি হয় তাদের আমরা অবশ্যই সতর্ক হতে বলব। তাদের ঝুঁকি রয়ে গেছে। ভিড় এড়িয়ে চলা বিশেষ করে বয়স্কদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। যারা অন্যান্য রোগে ভোগেন তারাও পারতপক্ষে বাইরে যাবেন না। আর বাচ্চাদের তো স্কুল বন্ধই করা হয়েছে; কিন্তু তারা ঘুরছে বিভিন্ন জায়গায়। এটি যাতে একদমই না করে, তারা (শিশু) ঘরেই থাকবে।

কারও যদি করোনা পজিটিভ হয় তাহলে আক্রান্ত রোগীকে আলাদা করতে হবে, হাসপাতালে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি, যার লক্ষণ আছে তাকে আলাদা করে রাখাকে বলে আইসোলেশন। আর সুস্থ মানুষ, সুপ্ত অবস্থায় ভাইরাস থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এখনও কোনো লক্ষণ নেই। এমন ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখাকে বলে কোয়ারেন্টিন।

গ্রন্থনা : এম এস আই খান

বিশেষজ্ঞ অভিমত

আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান হতে হবে: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক
 যুগান্তর ডেস্ক 
২৪ মার্চ ২০২০, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
বিএসএমএমইউ এর মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
বিএসএমএমইউ এর মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন

শুধু বাংলাদেশ নয়, করোনা এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে- এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। প্রশাসন সতর্ক আছে, তারা চেষ্টা করছে। আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার দরকার নেই, তবে আমাদের অবশ্যই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এর কোনো ভ্যাকসিন নেই, কার্যকরী কোনো ওষুধও নেই। লক্ষণ দেখে কিছু চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে ভালো খবর হল, অধিকাংশ কিন্তু ভালো হয়ে যায়, ৮০ শতাংশ রোগী ভালো হয়। ঘরে বসে চিকিৎসা সম্ভব; এমনকি ডাক্তারের কাছে না গেলেও ঘরে বসে ভালো হয়। মাত্র ২০ শতাংশের হাসপাতালে ভর্তি লাগতে পারে। এর মধ্যে ২-৩ শতাংশ আইসিইউ লাগে।

যেহেতু রোগটা ছোঁয়াচে, তাই আশপাশে যদি কোনো রোগী থাকে তার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। যিনি রোগী তার নিজের মাস্ক পরতে হবে। যেখানে-সেখানে থু থু ফেলবে না, হাঁচি-কাশিতে টিস্যু ব্যবহার করার পর যেখানে-সেখানে ফেলবে না। রুমাল ব্যবহার করলে সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে নেবে। ভাইরাসটি হাতের মাধ্যমে ছড়ায় বেশি। হাতে হাঁচি-কাশি দিলে তা ধুয়ে নিতে হবে। এটি এতটাই ছোঁয়াচে, হাতে ভাইরাস থাকলে এ হাত যেখানে স্পর্শ করবে সেখানেই ছড়াবে।

বাইরে থেকে আসবেন, দরজার হাতল ধরবেন সেখানে ভাইরাস লেগে যাবে। চেয়ারে বসবেন, টেলিফোন, কিবোর্ড যেখানে স্পর্শ করবেন সেখানেই ভাইরাস লেগে যাবে। এজন্য হাত নিয়মিত কয়েকবার সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন। নিজের ঘর ও আসবাবপত্র পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য হল এটি ভারি। এটি বাতাসে ছড়ায় না। আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি দিলে তা নিচে পড়ে যায়। সুতরাং ঘর, ফ্লোর, কার্পেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

আরেকটি হল অল্প অল্প পানি বারবার খাবে গলাটা যাতে ভিজা থাকে। শুষ্ক গলা থাকলে ভাইরাস আক্রান্ত বেশি হয়। হাত না ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না। ফলমূল, সালাত পরিষ্কার করে ধুয়ে খাবেন। খাবার ভালো করে সিদ্ধ করে খাবেন।

কারও ঘরে যদি গৃহপালিত পশু-পাখি থাকে এবং সেগুলোকে রোগা মনে হয় তাহলে তা আলাদা করে দেবেন। যদি পরিচর্যা করতেই হয় তাহলে মাস্ক পরে নেবেন, গাউন পরে নেবেন এবং হাতটি সুন্দর করে ধুয়ে নেবেন। কারণ এগুলোর মাধ্যমে ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। আর হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি কমিয়ে দেয়া। বাজারে যেখানে জনসমাগম বেশি তা এড়িয়ে চলাই ভালো।

আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়- বাইরে থেকে প্রচুর লোক আসছে। কোয়ারেন্টিন তারা মানেনি। তারা যদি ছড়িয়ে ফেলে আমরা তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বুঝতে পারব। প্রথমত, সবাইকে মনে রাখতে হবে, সর্দি-জ্বর বাংলাদেশে একটি স্বাভাবিক বিষয়। শীতকাল, গরমকাল যে কোনো সময় হতে পারে। সুতরাং সর্দি-জ্বর হলেই সবাই ভয় পাবেন না, এটি করোনাভাইরাস।

দ্বিতীয়ত, যারা বাইরে থেকে আসছে তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, যোগাযোগের এলাকা বা তিনি যেখানে যেখানে গেছেন সেখানকার কারও যদি সর্দি-কাশি হয় তাদের আমরা অবশ্যই সতর্ক হতে বলব। তাদের ঝুঁকি রয়ে গেছে। ভিড় এড়িয়ে চলা বিশেষ করে বয়স্কদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। যারা অন্যান্য রোগে ভোগেন তারাও পারতপক্ষে বাইরে যাবেন না। আর বাচ্চাদের তো স্কুল বন্ধই করা হয়েছে; কিন্তু তারা ঘুরছে বিভিন্ন জায়গায়। এটি যাতে একদমই না করে, তারা (শিশু) ঘরেই থাকবে।

কারও যদি করোনা পজিটিভ হয় তাহলে আক্রান্ত রোগীকে আলাদা করতে হবে, হাসপাতালে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি, যার লক্ষণ আছে তাকে আলাদা করে রাখাকে বলে আইসোলেশন। আর সুস্থ মানুষ, সুপ্ত অবস্থায় ভাইরাস থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এখনও কোনো লক্ষণ নেই। এমন ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখাকে বলে কোয়ারেন্টিন।

গ্রন্থনা : এম এস আই খান

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন