কোভিড-১৯ ঠেকানোর চেষ্টায় বরিশালের মানুষ
সাইদুর রহমান পান্থ, বরিশাল ব্যুরো
২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সারা বিশ্বের মধ্যে বরিশালের সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন তৎপর হয়ে পড়েছে।
ইতিমধ্যে বিভাগে গত ১ মাসে প্রবাস থেকে আসা প্রায় ১০ হাজার মানুষের মধ্যে রোববার পর্যন্ত মাত্র ১৫১০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
এ নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে গোটা বরিশাল বিভাগে। চলছে প্রবাসীদের খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া। এদিকে নৌযান থেকে শুরু করে কোনো যানবাহনে কোভিড-১৯ ঠেকানোর কোনো প্রস্তুতি না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই গন্তব্যে ছুটছেন লাখো যাত্রী। অপর দিকে প্রায় আড়াই মাস ধরে চীন থেকে কোনো কাঁচামাল বরিশালে না আসার ফলে সংকটে পড়েছে কয়েকশ শিল্প প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা এখন দর্শনার্থী শূন্য।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৫১০ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৪৫০ জনকে কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা ১৫১০ জনের অধিকাংশই প্রবাসী।
তবে বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত কারও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, বরিশাল বিভাগে ১০ হাজারের ওপর বিদেশ ফেরতের যে সংখ্যা শোনা যাচ্ছে, বাস্তবে তার চিত্র ভিন্ন।
অনেকেই গ্রামের বাড়ির ঠিকানা বরিশাল দেখিয়েছেন। কিন্তু তারা বিদেশ থেকে এসে বরিশালে আদৌ আসেননি। তবে সুনির্দিষ্ট করে বিদেশ ফেরতদের শনাক্ত করতে গ্রাম পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে।
বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, প্রবাসীদের আগমনে শঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। এদের আগেভাগে পর্যবেক্ষণে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এখন যার বাড়ির পাশে প্রবাসী তারাই আতঙ্কিত। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে সভা করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এদিকে গত ৫ দিন আগেও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে যেখানে মানুষের ঢল নেমেছিল সেই পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা এখন দর্শনার্থীশূন্য। কুয়াকাটার ব্যবসায়ী ও হোটেল-মোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, এমন নিষেধাজ্ঞায় স্থবিরতা নেমে এসেছে পর্যটনশিল্পে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মাদারীপুরের সঙ্গে বরিশালের জেলা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ঢাকা সদরঘাটসহ দক্ষিণের সব নদীবন্দরে লঞ্চের প্রবেশ মুখেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা হেক্সিসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে যাত্রীদের। সবমিলিয়ে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে সর্বাত্মক চেষ্টা।
এদিকে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ থাকায় উৎপাদন প্রশ্নে চরম সংকটে পড়েছে বরিশালের কয়েকশ শিল্প প্রতিষ্ঠান। আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ নগরীতে ছোট বড় মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৭২২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরো কাঁচামালই আসে চীন থেকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন এসব কারখানার মালিক।
অপরদিকে করোনা মোকাবেলার সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তুতি নেই নৌ ও সড়কপথে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশে চলাচলকারী ডবল ও ট্রিপল ডেকার প্রায় দেড় হাজার যাত্রীবাহী লঞ্চই কেবল নয়, অভ্যন্তরীণ রুটের কয়েক হাজার ছোট ছোট নৌ-যানগুলোর ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। লঞ্চে ভ্রমণ করা যাত্রীদের জন্য আলাদা করে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।
অথচ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব লঞ্চ যাত্রীরা। এসব লঞ্চে প্রতিদিন ভ্রমণ করে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ। এদিকে নোভেল করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) চিকিৎসকরা। সম্প্রতি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন চিকিৎসকরা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
কোভিড-১৯ ঠেকানোর চেষ্টায় বরিশালের মানুষ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সারা বিশ্বের মধ্যে বরিশালের সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন তৎপর হয়ে পড়েছে।
ইতিমধ্যে বিভাগে গত ১ মাসে প্রবাস থেকে আসা প্রায় ১০ হাজার মানুষের মধ্যে রোববার পর্যন্ত মাত্র ১৫১০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
এ নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে গোটা বরিশাল বিভাগে। চলছে প্রবাসীদের খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া। এদিকে নৌযান থেকে শুরু করে কোনো যানবাহনে কোভিড-১৯ ঠেকানোর কোনো প্রস্তুতি না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই গন্তব্যে ছুটছেন লাখো যাত্রী। অপর দিকে প্রায় আড়াই মাস ধরে চীন থেকে কোনো কাঁচামাল বরিশালে না আসার ফলে সংকটে পড়েছে কয়েকশ শিল্প প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা এখন দর্শনার্থী শূন্য।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৫১০ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৪৫০ জনকে কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা ১৫১০ জনের অধিকাংশই প্রবাসী।
তবে বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত কারও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, বরিশাল বিভাগে ১০ হাজারের ওপর বিদেশ ফেরতের যে সংখ্যা শোনা যাচ্ছে, বাস্তবে তার চিত্র ভিন্ন।
অনেকেই গ্রামের বাড়ির ঠিকানা বরিশাল দেখিয়েছেন। কিন্তু তারা বিদেশ থেকে এসে বরিশালে আদৌ আসেননি। তবে সুনির্দিষ্ট করে বিদেশ ফেরতদের শনাক্ত করতে গ্রাম পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে।
বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, প্রবাসীদের আগমনে শঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। এদের আগেভাগে পর্যবেক্ষণে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এখন যার বাড়ির পাশে প্রবাসী তারাই আতঙ্কিত। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে সভা করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এদিকে গত ৫ দিন আগেও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে যেখানে মানুষের ঢল নেমেছিল সেই পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা এখন দর্শনার্থীশূন্য। কুয়াকাটার ব্যবসায়ী ও হোটেল-মোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, এমন নিষেধাজ্ঞায় স্থবিরতা নেমে এসেছে পর্যটনশিল্পে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মাদারীপুরের সঙ্গে বরিশালের জেলা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ঢাকা সদরঘাটসহ দক্ষিণের সব নদীবন্দরে লঞ্চের প্রবেশ মুখেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা হেক্সিসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে যাত্রীদের। সবমিলিয়ে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে সর্বাত্মক চেষ্টা।
এদিকে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ থাকায় উৎপাদন প্রশ্নে চরম সংকটে পড়েছে বরিশালের কয়েকশ শিল্প প্রতিষ্ঠান। আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ নগরীতে ছোট বড় মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৭২২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরো কাঁচামালই আসে চীন থেকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন এসব কারখানার মালিক।
অপরদিকে করোনা মোকাবেলার সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তুতি নেই নৌ ও সড়কপথে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশে চলাচলকারী ডবল ও ট্রিপল ডেকার প্রায় দেড় হাজার যাত্রীবাহী লঞ্চই কেবল নয়, অভ্যন্তরীণ রুটের কয়েক হাজার ছোট ছোট নৌ-যানগুলোর ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। লঞ্চে ভ্রমণ করা যাত্রীদের জন্য আলাদা করে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।
অথচ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব লঞ্চ যাত্রীরা। এসব লঞ্চে প্রতিদিন ভ্রমণ করে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ। এদিকে নোভেল করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) চিকিৎসকরা। সম্প্রতি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন চিকিৎসকরা।