সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম প্রস্তুতিতে পিছিয়ে
এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম ব্যুরো
২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ঝুঁকিতে এগিয়ে চট্টগ্রাম। বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর থাকার কারণে যেমন এ ঝুঁকি; তেমনি প্রবাসীদের জেলা (দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি) হওয়ার কারণেও ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
মূলত এসব কারণেই স্বয়ং জেলা সিভিল সার্জন চট্টগ্রামে করোনার ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকি’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকির দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও করোনা নিয়ন্ত্রণ বা মোকাবেলায় যে প্রস্তুতি দরকার সে দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম।
যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিনের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যার যেমন সংকট আছে, তেমনি কিছু কিছু হাসপাতালে অস্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হলেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রামে আসেনি করোনা শনাক্তকরণ কিট। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরেননি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও।
এদিকে চট্টগ্রামে তিনটি এক্সপোর্ট প্রসেজিং জোন (ইপিজেড) এলাকায় কয়েকশ’ কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি মিরসরাইয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কর্ণফুলী টানেল নির্মাণাধীন। ইপিজেডের কারখানা এবং নির্মাণাধীন বেশকিছু প্রকল্পে বিদেশি নাগরিকরা কর্মরত। তাছাড়া দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ প্রবাসী নাগরিকের সংখ্যা চট্টগ্রামে বেশি। মূলত এ কারণেই চট্টগ্রামে করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত কোনো করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়নি। চট্টগ্রামে গত রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত ১১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এ নিয়ে ৯৭৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামে করোনা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি হিসেবে আইসোলেশনের জন্য ৪৫০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে মোট ৩৫০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি জেলার ১৪টি উপজেলায় ১০০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও রেলওয়ে হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই দুটি হাসপাতালে কাউকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়নি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, শনিবার রাতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সর্বশেষ ফ্লাইটটি আসে। ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে রাখা ৯৭৩ জনকে আমরা মনিটরিংয়ের আওতায় রেখেছি। সবাইকে কোয়ারেন্টিন মেনে চলার অনুরোধ করছি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিআইটিআইডিতে কিট এলে আমাদের জানানো হবে। তবে ওই হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন চিকিৎসক এবং দুইজন টেকনিশিয়ান এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় রয়েছেন। তারা প্রশিক্ষণ শেষ করে কিট নিয়ে আসবেন।
এদিকে দেরিতে হলেও করোনাভাইরাস সচেতনতায় ও গুজব প্রতিরোধে হটলাইন (০১৪০০-৪০০৪০০) চালু করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে চিকিৎসকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন না মানায় এ পর্যন্ত ১৯ জনকে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আতঙ্কে ফাঁকা চট্টগ্রাম নগরী : নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলো করোনা আতঙ্কে ফাঁকা হয়ে গেছে। নগরীর রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, কাঁচাবাজার, উন্মুক্ত উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নগরীর সড়কেও কমেছে যাত্রী পরিবহন। এছাড়া সড়কে চলা পরিবহনেও ছিল না যাত্রীর চাপ। কাঁচাবাজারগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল কম।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম প্রস্তুতিতে পিছিয়ে
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ঝুঁকিতে এগিয়ে চট্টগ্রাম। বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর থাকার কারণে যেমন এ ঝুঁকি; তেমনি প্রবাসীদের জেলা (দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি) হওয়ার কারণেও ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
মূলত এসব কারণেই স্বয়ং জেলা সিভিল সার্জন চট্টগ্রামে করোনার ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকি’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকির দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও করোনা নিয়ন্ত্রণ বা মোকাবেলায় যে প্রস্তুতি দরকার সে দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম।
যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিনের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যার যেমন সংকট আছে, তেমনি কিছু কিছু হাসপাতালে অস্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হলেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রামে আসেনি করোনা শনাক্তকরণ কিট। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরেননি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও।
এদিকে চট্টগ্রামে তিনটি এক্সপোর্ট প্রসেজিং জোন (ইপিজেড) এলাকায় কয়েকশ’ কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি মিরসরাইয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কর্ণফুলী টানেল নির্মাণাধীন। ইপিজেডের কারখানা এবং নির্মাণাধীন বেশকিছু প্রকল্পে বিদেশি নাগরিকরা কর্মরত। তাছাড়া দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ প্রবাসী নাগরিকের সংখ্যা চট্টগ্রামে বেশি। মূলত এ কারণেই চট্টগ্রামে করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত কোনো করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়নি। চট্টগ্রামে গত রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত ১১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এ নিয়ে ৯৭৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামে করোনা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি হিসেবে আইসোলেশনের জন্য ৪৫০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে মোট ৩৫০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি জেলার ১৪টি উপজেলায় ১০০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও রেলওয়ে হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই দুটি হাসপাতালে কাউকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়নি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, শনিবার রাতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সর্বশেষ ফ্লাইটটি আসে। ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে রাখা ৯৭৩ জনকে আমরা মনিটরিংয়ের আওতায় রেখেছি। সবাইকে কোয়ারেন্টিন মেনে চলার অনুরোধ করছি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিআইটিআইডিতে কিট এলে আমাদের জানানো হবে। তবে ওই হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন চিকিৎসক এবং দুইজন টেকনিশিয়ান এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় রয়েছেন। তারা প্রশিক্ষণ শেষ করে কিট নিয়ে আসবেন।
এদিকে দেরিতে হলেও করোনাভাইরাস সচেতনতায় ও গুজব প্রতিরোধে হটলাইন (০১৪০০-৪০০৪০০) চালু করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে চিকিৎসকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন না মানায় এ পর্যন্ত ১৯ জনকে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আতঙ্কে ফাঁকা চট্টগ্রাম নগরী : নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলো করোনা আতঙ্কে ফাঁকা হয়ে গেছে। নগরীর রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, কাঁচাবাজার, উন্মুক্ত উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নগরীর সড়কেও কমেছে যাত্রী পরিবহন। এছাড়া সড়কে চলা পরিবহনেও ছিল না যাত্রীর চাপ। কাঁচাবাজারগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল কম।