থাকছেন না কেউ কোয়ারেন্টিনে
সিলেট বিভাগে প্রবাসী আতঙ্ক
আবদুর রশিদ রেনু, সিলেট ব্যুরো
২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চীনে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর রোববার পর্যন্ত সিলেটের চার জেলায় ২৬ হাজার ৮৪৩ প্রবাসী দেশে আসেন। দেশের আসার পর স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না তারা। যাদের অনেকেই চলে যান গ্রামের বাড়িতে। এ অবস্থায় বিভাগজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা আতঙ্ক। দেশে আসা প্রবাসীদের মধ্যে সঙ্গনিরোধে (হোম কোয়ারেন্টিন) আছেন মাত্র ১৯৫৪ জন। এদের মধ্যে আবার অনেকেই মানছেন না আদেশ, ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অনেককে জরিমানাও করা হচ্ছে। সর্বশেষ রোববার বিভাগের চার জেলায় আরও ৩১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়। এ নিয়ে বিভাগে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সংখ্যা এক হাজার ৭৪৭ জন। প্রবাসী ছাড়াও তাদের স্বজনরাও রয়েছেন এ তালিকায়। প্রায় ২৭ হাজার প্রবাসী সিলেট এলেও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকাদের সংখ্য খুবই নগণ্য হওয়ায় করোনা সংক্রমণ আতঙ্কে রয়েছেন জনসাধারণ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- সবকটি জেলা উপজেলায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে করোনা প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে প্রবাস থেকে আসা লোকজনের নামের তালিকা করা হচ্ছে। এবং তাদের অবাধে চলাফেরা না করতেও নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। আর সম্প্রতি যারা দেশে এসেছেন তাদের তালিকা করে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হচ্ছে।
সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ আহমদ জানান, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সম্প্রতি বিদেশ ফেরতদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সবকটি গ্রামের মসজিদে এ বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে আগতদের ১৪ দিন মসজিদে না আসতেও বলা হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান যুগান্তরকে জানান, গত ১০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ১ হাজার ৯৫৪ জনের মধ্যে রোববার পর্যন্ত ৬৭ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। ফলে এখন নতুন ৩১৮ জনসহ এক হাজার ৮৮৭ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় গত ১০ দিনে আমেরিকা, মালয়েশিয়া, দুবাই, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৬৪ প্রবাসী আসেন। প্রবাসীরা দেশে আসার পর হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রকাশ্যে হাটবাজার ও মসজিদগুলোয় যাতায়াত করছেন। এতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় লোকজন। গত দু’দিনে কয়েকজন প্রবাসীকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে হবিগঞ্জে বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন ২ হাজার ৬৪৯ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের তালিকা ইতিমধ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন মাত্র ৩৩৮ জন। বাকিদের অনেকেই প্রকাশ্যে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদিকে বিদেশ ফেরত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোদের তালিকা তৈরিতে একযোগে কাজ করছে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সোমবারের মধ্যে তালিকা সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ তালিকা গত ৩ মাসের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে প্রবেশ করেছেন তাদের। এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যারা সম্প্রতি এসেছেন তাদের তালিকা আলাদা করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সামগ্রির মারাত্মক সংকট রয়েছে। চাহিদা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে শিগগিরই পৌঁছে দেয়া হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সিলেট বিভাগে প্রবাসী আতঙ্ক
থাকছেন না কেউ কোয়ারেন্টিনে
চীনে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর রোববার পর্যন্ত সিলেটের চার জেলায় ২৬ হাজার ৮৪৩ প্রবাসী দেশে আসেন। দেশের আসার পর স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না তারা। যাদের অনেকেই চলে যান গ্রামের বাড়িতে। এ অবস্থায় বিভাগজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা আতঙ্ক। দেশে আসা প্রবাসীদের মধ্যে সঙ্গনিরোধে (হোম কোয়ারেন্টিন) আছেন মাত্র ১৯৫৪ জন। এদের মধ্যে আবার অনেকেই মানছেন না আদেশ, ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অনেককে জরিমানাও করা হচ্ছে। সর্বশেষ রোববার বিভাগের চার জেলায় আরও ৩১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়। এ নিয়ে বিভাগে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সংখ্যা এক হাজার ৭৪৭ জন। প্রবাসী ছাড়াও তাদের স্বজনরাও রয়েছেন এ তালিকায়। প্রায় ২৭ হাজার প্রবাসী সিলেট এলেও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকাদের সংখ্য খুবই নগণ্য হওয়ায় করোনা সংক্রমণ আতঙ্কে রয়েছেন জনসাধারণ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- সবকটি জেলা উপজেলায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে করোনা প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে প্রবাস থেকে আসা লোকজনের নামের তালিকা করা হচ্ছে। এবং তাদের অবাধে চলাফেরা না করতেও নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। আর সম্প্রতি যারা দেশে এসেছেন তাদের তালিকা করে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হচ্ছে।
সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ আহমদ জানান, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সম্প্রতি বিদেশ ফেরতদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সবকটি গ্রামের মসজিদে এ বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে আগতদের ১৪ দিন মসজিদে না আসতেও বলা হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান যুগান্তরকে জানান, গত ১০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ১ হাজার ৯৫৪ জনের মধ্যে রোববার পর্যন্ত ৬৭ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। ফলে এখন নতুন ৩১৮ জনসহ এক হাজার ৮৮৭ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় গত ১০ দিনে আমেরিকা, মালয়েশিয়া, দুবাই, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৬৪ প্রবাসী আসেন। প্রবাসীরা দেশে আসার পর হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রকাশ্যে হাটবাজার ও মসজিদগুলোয় যাতায়াত করছেন। এতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় লোকজন। গত দু’দিনে কয়েকজন প্রবাসীকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে হবিগঞ্জে বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন ২ হাজার ৬৪৯ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের তালিকা ইতিমধ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন মাত্র ৩৩৮ জন। বাকিদের অনেকেই প্রকাশ্যে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদিকে বিদেশ ফেরত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোদের তালিকা তৈরিতে একযোগে কাজ করছে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সোমবারের মধ্যে তালিকা সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ তালিকা গত ৩ মাসের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে প্রবেশ করেছেন তাদের। এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যারা সম্প্রতি এসেছেন তাদের তালিকা আলাদা করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সামগ্রির মারাত্মক সংকট রয়েছে। চাহিদা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে শিগগিরই পৌঁছে দেয়া হবে।