বাংলায় বহুকাল ধরে চলে আসছে ঋতু বৈচিত্র্যে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। বছরে এ ছয় ঋতুর দেখা বিশ্বের খুব কম দেশেই দেখা যায়। কিন্তু দিনদিনই এ ঐতিহ্য ও গর্বের আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। কৃষিপ্রধান এ দেশে আবহাওয়া বদলের ফলে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। বর্তমানে মূলত গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত এ তিন ঋতুর দিকে ধাবিত হচ্ছে এ অঞ্চল।
গ্রীষ্মকালের আগমন খ্রিস্টীয় সনের মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন বা বাংলায় বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে হওয়ার কথা হলেও গরমের আগমন ঘটছে বেশ আগেই। এখন মার্চ মাস থেকেই গরম পড়তে শুরু করে এবং শীত আসার পূর্ব পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়। এখন বর্ষাকালজুড়ে জানান দেয় গ্রীষ্মের উপস্থিতি। মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট আর বাংলা সনের আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দুই মাস বর্ষাকাল হলেও দেশের গ্রামে-গঞ্জে বর্ষার পানির স্রোত বাড়ে শ্রাবণের শেষ কিংবা ভাদ্র মাসের দিকে।
হেমন্তেও বর্ষার মতো বৃষ্টি : মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য ডিসেম্বর (বাংলা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ) মাসে ঋতু বদলের নিয়মে হেমন্ত থাকার কথা। কিন্তু অব্যাহত পরিবেশদূষণের ফলে ভাঙতে শুরু করেছে এ নিয়মের বলয়। গত বছর ১৯ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা তিনদিনের অতিভারি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২১ অক্টোবর সকাল ৯টার পর্যন্ত (পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায়) ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল; যা ছিল গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড এবং গত দেড়যুগের মধ্যে ঢাকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। তার আগের দিন ২০ অক্টোবর ভোর ৬টা থেকে ২১ অক্টোবর বিকাল ৩টা পর্যন্ত টানা বর্ষণে শুধু রাজধানীতেই ২৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এটি এখন পর্যন্ত অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যমতে, এর আগে ২১ বছর আগে ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছিল। ২০১৭ সালে সে রেকর্ড ভেঙে শুধু রাজধানীতেই টানা ২৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়।
শৈত্যপ্রবাহ ছাড়া রাজধানীতে নেই শীত : অন্যদিকে মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি বা বাংলা সনের পৌষ ও মাঘ মাসে শীতের আগমন ঘটার কথা থাকলেও সারা দেশে এখন একই সময়ে শীত পড়ছে না। দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা লক্ষ্য করা গেলেও অন্যান্য অঞ্চলে শীতের আগমন ঘটে দেরিতে। আর দেশের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ না বইলে রাজধানী ঢাকায় শীতের আগমন ততটা অনুভব করতে পারে না নগরবাসী। সময় পরিবর্তন হয়ে এখন কেবল জানুয়ারি মাসে শীতের আগমন ঘটে।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজওয়ান হোসেন ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, প্রতি বছর স্বাভাবিকভাবেই জানুয়ারি মাসে শীত পড়ে। হিমালয় থেকে আসা শীতল বায়ু প্রবাহের কারণে এ দিকের তাপমাত্রা কমে যায়। উপমহাদেশের উচ্চ বলয় প্রবাহ ও ঊর্ধ্বাকাশে জেড উইং প্রবাহ নিচে নেমে আসে। এ কারণে শীতের প্রকোপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন বেশি অনুভব হচ্ছে। আর ঘন কুয়াশার কারণে শীতের মাত্রা আরও বেড়েছে।
আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন ও তীব্রতার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশদূষণের ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফলে ক্রমেই তাপমাত্রার তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। এটি সরাসরি মাটির ওপর কোনো প্রভাব না ফেললেও উদ্ভিত বা শস্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।