দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুর পুষ্টি
jugantor
দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুর পুষ্টি

  আখতারুন নাহার আলো  

২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের প্রাক-স্কুল বয়সি শিশু বলা হয়। এ সময় বাচ্চাদের মধ্যে আসে দুরন্তপনার ভাব। এ অতিরিক্ত ছোটাছুটির জন্য চাই শক্তি ও সুস্থতা। শিশুর দুবছর বয়সে ওজন বাড়ে জন্ম সময় থেকে চারগুণ। তারপর বছরে দুই থেকে সাড়ে তিন কেজি করে বাড়তে থাকে। ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশও এ সময় ঘটে থাকে। এ সময় তাদের প্রোটিনের চাহিদা যেমন বেশি থাকে, তেমনি প্রোটিন-ক্যালরির মারাত্মক ঘাটতিতে অপুষ্টিজনিত রোগ যেমন-কোয়াশিয়রকর ও ম্যারাসমাস হতে দেখা যায়। সাধারণত এক বছর বয়সে দাঁত উঠে যায় বলে শক্ত খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ জন্মে। এ সময় রুচির বিকাশ ঘটে বলে খাবারের বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন। যেমন-দুধ কেবল পান যোগ্যভাবে না দিয়ে দুধ-সেমাই, পায়েস, দুধ-সুজি, দুধ রুটি, দুধ-কলা-ভাত দিলে ভালো হয়। তেমনি ডিম সিদ্ধ ও পোচ না দিয়ে হালুয়া, পুডিং, কাস্টার্ড, ডিমসহ স্যুপ, ডিম-নুড্লস দেওয়া যেতে পারে। আলুর ক্ষেত্রে আলুর চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলুর পায়েস, আলুর চপ দিতে পারেন। এ ছাড়া প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে দেওয়া যাবে খিচুড়ি, ডালের বড়া, বেসনের বড়া, ডালপুরী, ডালের হালুয়া ইত্যাদি। ছোট মাছ পিষেও বড়া করে দেওয়া যায়। এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘এ’র চাহিদা পূরণ হবে।

ভিটামিন ‘এ’র জন্য দৈনিক প্রয়োজন আধা লিটার দুধ, ডিম ১টি, মাছ বা মাংস ৬০ গ্রাম, সবজি ৫-৭ গ্রাম, ফল ১টি, গাজর, আলু, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি ৬০ গ্রাম। ভাত-মাছ-ডাল ৯০ গ্রামের মতো। ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতির জন্য বিভিন্ন ধরনের চোখের রোগ হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ধরনের সবজির সঙ্গে বাচ্চাদের শাক খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। এতে যেমন বিভিন্ন ধরনের খাবারের অভ্যাস গড়ে উঠবে তেমনি হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে। শিশুদের কখনো গুরুপাক খাবার কিছুতেই দেওয়া উচিত নয়। এ সময় মোট খাবারের সময়ের সংখ্যা কমিয়ে ৪-৫ বারে নিয়ে আসতে হবে। দৈহিক বৃদ্ধির জন্য দুধ-ডিম-মাছ-মাংস-ডাল-বাদাম প্রতিদিনই খাবারে থাকতে হবে। শিশুর পেট খারাপ হলে ঘনঘন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এ সময় পানি স্বল্পতা দেখা যায় বলে শিশু একেবারে শক্তিহীন হয়ে পড়ে। রক্ত আমাশয় ও সংক্রামক পেটের অসুখে শিশুর পথ্য হবে-মাছ-মাংসের স্টু, পানি, পোচ ডিম, নরম ভাত, নরম ছানা, মাখন তোলা দুধ ইত্যাদি। অন্ত্রের প্রদাহের কারণে সেল্যুলেজ বা আঁশযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। সর্বোপরি শিশুর পুষ্টি কেবল খাবারের ওপরই নির্ভর করে না। এর জন্য চাই উপযুক্ত আলো-বাতাস, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।

দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুর পুষ্টি

 আখতারুন নাহার আলো 
২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের প্রাক-স্কুল বয়সি শিশু বলা হয়। এ সময় বাচ্চাদের মধ্যে আসে দুরন্তপনার ভাব। এ অতিরিক্ত ছোটাছুটির জন্য চাই শক্তি ও সুস্থতা। শিশুর দুবছর বয়সে ওজন বাড়ে জন্ম সময় থেকে চারগুণ। তারপর বছরে দুই থেকে সাড়ে তিন কেজি করে বাড়তে থাকে। ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশও এ সময় ঘটে থাকে। এ সময় তাদের প্রোটিনের চাহিদা যেমন বেশি থাকে, তেমনি প্রোটিন-ক্যালরির মারাত্মক ঘাটতিতে অপুষ্টিজনিত রোগ যেমন-কোয়াশিয়রকর ও ম্যারাসমাস হতে দেখা যায়। সাধারণত এক বছর বয়সে দাঁত উঠে যায় বলে শক্ত খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ জন্মে। এ সময় রুচির বিকাশ ঘটে বলে খাবারের বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন। যেমন-দুধ কেবল পান যোগ্যভাবে না দিয়ে দুধ-সেমাই, পায়েস, দুধ-সুজি, দুধ রুটি, দুধ-কলা-ভাত দিলে ভালো হয়। তেমনি ডিম সিদ্ধ ও পোচ না দিয়ে হালুয়া, পুডিং, কাস্টার্ড, ডিমসহ স্যুপ, ডিম-নুড্লস দেওয়া যেতে পারে। আলুর ক্ষেত্রে আলুর চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলুর পায়েস, আলুর চপ দিতে পারেন। এ ছাড়া প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে দেওয়া যাবে খিচুড়ি, ডালের বড়া, বেসনের বড়া, ডালপুরী, ডালের হালুয়া ইত্যাদি। ছোট মাছ পিষেও বড়া করে দেওয়া যায়। এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘এ’র চাহিদা পূরণ হবে।

ভিটামিন ‘এ’র জন্য দৈনিক প্রয়োজন আধা লিটার দুধ, ডিম ১টি, মাছ বা মাংস ৬০ গ্রাম, সবজি ৫-৭ গ্রাম, ফল ১টি, গাজর, আলু, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি ৬০ গ্রাম। ভাত-মাছ-ডাল ৯০ গ্রামের মতো। ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতির জন্য বিভিন্ন ধরনের চোখের রোগ হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ধরনের সবজির সঙ্গে বাচ্চাদের শাক খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। এতে যেমন বিভিন্ন ধরনের খাবারের অভ্যাস গড়ে উঠবে তেমনি হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে। শিশুদের কখনো গুরুপাক খাবার কিছুতেই দেওয়া উচিত নয়। এ সময় মোট খাবারের সময়ের সংখ্যা কমিয়ে ৪-৫ বারে নিয়ে আসতে হবে। দৈহিক বৃদ্ধির জন্য দুধ-ডিম-মাছ-মাংস-ডাল-বাদাম প্রতিদিনই খাবারে থাকতে হবে। শিশুর পেট খারাপ হলে ঘনঘন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এ সময় পানি স্বল্পতা দেখা যায় বলে শিশু একেবারে শক্তিহীন হয়ে পড়ে। রক্ত আমাশয় ও সংক্রামক পেটের অসুখে শিশুর পথ্য হবে-মাছ-মাংসের স্টু, পানি, পোচ ডিম, নরম ভাত, নরম ছানা, মাখন তোলা দুধ ইত্যাদি। অন্ত্রের প্রদাহের কারণে সেল্যুলেজ বা আঁশযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। সর্বোপরি শিশুর পুষ্টি কেবল খাবারের ওপরই নির্ভর করে না। এর জন্য চাই উপযুক্ত আলো-বাতাস, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন