মুখের সব ক্ষত ক্যানসার নয়

 - ডা. নিতীশ কৃষ্ণ দাস 
১৮ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের মানুষ যতটা না ক্যানসার সচেতন তার চেয়ে বেশি রয়েছে ক্যানসার নিয়ে ভয়। মুখের কোনো ক্ষত না শুকালেই রোগীরা ভাবতে থাকে-এটি ক্যানসার কি-না?

মুখের কিছু কিছু ক্ষত আছে, যেগুলো পরে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। যেমন লিউকোপ্লাকিয়া, ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া ও ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস।

Leucoplakia সাধারণত পুরুষ এবং ধুমপায়ীদের বেশি হয়। এ রোগে মুখের দুই পাশে, জিহ্বার উপরিভাগে সাদা সাদা ছোপের মতো হয়। ছত্রাকের কারণেও অনেকের মুখে এরকম হতে পারে। ছত্রাকের কারণে হলে সেটি সাধারণত কাপড় দিয়ে ঘঁষা দিলে উঠে যায়।

কিন্তু লিউকোপ্লাকিয়ার ক্ষেত্রে সেরকম হয় না। এর মধ্যে নন-হোমোজেনাস লিউকোপ্লাকিয়া (পুরোটা সাদা না হয়ে সাদা-লাল হয়) ক্যানসারে রুপান্তরিত হতে পারে। প্রয়োজনে মাংস কেটে নিয়ে বায়োপসি পরীক্ষা করতে হবে।

লিউকোপ্লাকিয়ার চাইতে ভয়ংকর ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া । মুখের মধ্যে সাধারণত গালের ভেতরে দেখতে লাল লাল হয়। এ রোগ থেকে ক্যানসারে রূপান্তরের হার অন্যদের তুলনায় বেশি।

আরেকটি ক্যানসার পূর্ব রোগ হচ্ছে-ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস। এ রোগের প্রধান কারণ পান-সুপারি। এ রোগ মহিলাদের বেশি হয়। এর ফলে রোগীর মুখের হা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কিছু রোগী একদমই হা করতে পারে না। এ রোগ থেকেও ক্যানসারে পরিবর্তন হওয়ার পরিমাণ অনেক বেশি। তাই পান-সুপারি খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

ওরাল লাইকেন প্লানাস আরেকটি ক্যানসার পূর্ব রোগ। যদিও এ রোগ থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম। এ রোগ মহিলাদের বেশি হয়।

উপমহাদেশে মুখের ক্যানসারের শতকরা ৯৫ ভাগ হয় ধূমপানের কারণে। প্রতি বছর এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোক মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৮০০০-এর বেশি। মুখের ক্যানসার সর্বমোট ক্যানসারের প্রায় ৯ শতাংশ। উন্নত দেশে সেটা ২-৩ শতাংশ।

বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মুখের অভ্যন্তরে অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। এগুলোর মাঝে শুষ্ক মুখ, ব্যথা, মুখের জ্বালাপোড়া এবং স্বাদের পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। স্বাদের মধ্যে বিশেষ করে লবণাক্ত অথবা টক স্বাদ মুখে অনুভূত হতে পারে।

- ডা. নিতীশ কৃষ্ণ দাস

সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন