পেঁয়াজি বিক্রি করে জীবন চলে মোকলে রানীর
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলাধীন রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা মিনাবাজার প্রত্যন্ত এলাকার বাজারের ঝুপড়ি ঘরের বারান্দায় পেঁয়াজি ভাজেন মোকলে রানী। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গ্রাহক ভিড় জমায় এ ঝুপড়ি ঘরে পেঁয়াজি খেতে। ঘরের ভিতরে আসবাবপত্র বলতে রয়েছে তিনটি বেঞ্চ। সেখানেই পেঁয়াজি খেতে বসেন গ্রাহকরা। প্রতিদিন বিকালে বাজারের স্থানীয় দোকান থেকে তেল, পেঁয়াজ, মরিচ, ডাল, আটা, চিনিসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাকিতে নিয়ে পেঁয়াজি বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি। বিক্রির পর দোকানের দাম মিটিয়ে যা থাকে তাই দিয়ে সংসার চলে মোকলে রানীর।
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলাধীন রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা মিনাবাজার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মোকলে রানী স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় এক যুগ আগে। স্বামী গোলজার হোসেন মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করতেন। একখণ্ড জমি কিংবা একটি ভালো ঘর কিছুই করা সম্ভব হয়নি তার। স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদ তো দূরের কথা মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রীর জন্য রেখে গেছেন দুটি কন্যাসন্তান। এ প্রসঙ্গে মোকলে রানী বলেন, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসারের সব ব্যয় মিটানোর পর দুই মেয়ের বিয়ে দেন। বড় মেয়ে সংসার করছেন। দুটি সন্তান রেখে ছোট মেয়ের স্বামী মারা গেছে। ছোট মেয়ে তার দুই সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে আবার বিয়ে করেছে। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতাম। বয়স বাড়ায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে কষ্ট হয়। ঝিয়ের কাজের বিকল্প হিসাবে স্থানীয়দের সহায়তায় মিনাবাজারের এক কোনায় একটি ঝুপড়ি ঘরে পেঁয়াজি ও গুলগুলি ভাজতে শুরু করি। প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পেঁয়াজি বিক্রি করে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার ও নাতি-নাতনির লেখাপড়ার খরচ চালাই।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ রাস্তা ফাঁকা করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। এতে যে কোনো সময় এ ঘরটিও ভাঙা পড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ঘর ভাঙি দিলে কুত্তি যামো বাহে? মোর তো কোন জাগা-জমি নাই বাবা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রাস্তার জমিতে ঘর করে আছেন তিনি। এ যেন জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ মোকলে রানীর জীবন চক্র। মিনাবাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আ. মজিদ আর্মি ও সুমন মিয়াসহ অনেকে জানান, মোকলে রানী পেঁয়াজি ও গুলগুলি ভেজে বিক্রি করে যা আয় হয় তাই দিয়ে নিজের পেট এবং নাতি-নাতনির লেখাপড়ার খরচ চালান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। খোঁজ খবর নিয়ে আমরা মোকলে রানীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পেঁয়াজি বিক্রি করে জীবন চলে মোকলে রানীর
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলাধীন রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা মিনাবাজার প্রত্যন্ত এলাকার বাজারের ঝুপড়ি ঘরের বারান্দায় পেঁয়াজি ভাজেন মোকলে রানী। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গ্রাহক ভিড় জমায় এ ঝুপড়ি ঘরে পেঁয়াজি খেতে। ঘরের ভিতরে আসবাবপত্র বলতে রয়েছে তিনটি বেঞ্চ। সেখানেই পেঁয়াজি খেতে বসেন গ্রাহকরা। প্রতিদিন বিকালে বাজারের স্থানীয় দোকান থেকে তেল, পেঁয়াজ, মরিচ, ডাল, আটা, চিনিসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাকিতে নিয়ে পেঁয়াজি বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি। বিক্রির পর দোকানের দাম মিটিয়ে যা থাকে তাই দিয়ে সংসার চলে মোকলে রানীর।
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলাধীন রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা মিনাবাজার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মোকলে রানী স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় এক যুগ আগে। স্বামী গোলজার হোসেন মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করতেন। একখণ্ড জমি কিংবা একটি ভালো ঘর কিছুই করা সম্ভব হয়নি তার। স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদ তো দূরের কথা মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রীর জন্য রেখে গেছেন দুটি কন্যাসন্তান। এ প্রসঙ্গে মোকলে রানী বলেন, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসারের সব ব্যয় মিটানোর পর দুই মেয়ের বিয়ে দেন। বড় মেয়ে সংসার করছেন। দুটি সন্তান রেখে ছোট মেয়ের স্বামী মারা গেছে। ছোট মেয়ে তার দুই সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে আবার বিয়ে করেছে। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতাম। বয়স বাড়ায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে কষ্ট হয়। ঝিয়ের কাজের বিকল্প হিসাবে স্থানীয়দের সহায়তায় মিনাবাজারের এক কোনায় একটি ঝুপড়ি ঘরে পেঁয়াজি ও গুলগুলি ভাজতে শুরু করি। প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পেঁয়াজি বিক্রি করে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার ও নাতি-নাতনির লেখাপড়ার খরচ চালাই।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ রাস্তা ফাঁকা করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। এতে যে কোনো সময় এ ঘরটিও ভাঙা পড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ঘর ভাঙি দিলে কুত্তি যামো বাহে? মোর তো কোন জাগা-জমি নাই বাবা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রাস্তার জমিতে ঘর করে আছেন তিনি। এ যেন জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ মোকলে রানীর জীবন চক্র। মিনাবাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আ. মজিদ আর্মি ও সুমন মিয়াসহ অনেকে জানান, মোকলে রানী পেঁয়াজি ও গুলগুলি ভেজে বিক্রি করে যা আয় হয় তাই দিয়ে নিজের পেট এবং নাতি-নাতনির লেখাপড়ার খরচ চালান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। খোঁজ খবর নিয়ে আমরা মোকলে রানীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।