‘বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে সফল হব’
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার। লিখেছেন-
আহাদ আলী মোল্লা
০৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
হতে চেয়েছিলাম ডাক্তার, ভেবেছিলাম বিদেশে গিয়ে আরও লেখাপড়া করব। সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। ভাগ্যক্রমে চলে এসেছি প্রশাসনে। এ জন্য কোনো আফসোস নেই। একজন নারী হিসাবে উপজেলা প্রশাসনের তাবৎ তদারকিতে আমার কোনো সমস্যা হয় না। যেহেতু আমাদের প্রশাসনিক কাজ ২৪ ঘণ্টার। কখনো কখনো পরিবারকে সময় দিতে পারি না। বিশেষ করে আমার দুই শিশুসন্তানকে। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের কারণে ওদের সেভাবে সময় দিতে পারি না। ওরা মাকে সব সময় কাছে পাচ্ছে না।’ বললেন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার।
তাছলিমা আক্তার চতুর্থ নারী ইউএনও হিসাবে এ বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দামুড়হুদায় যোগদান করেন। তিনি জেলার একমাত্র নারী ইউএনও। তাছলিমা আক্তার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করছেন। যেখানেই বাল্যবিয়ে সেখানেই ছুটছেন তিনি। এ ছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও নারী কর্মীদের সুরক্ষায়ও বিশেষভাবে কাজ করছেন।
এলাকার নারী, কিশোর-কিশোরীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাছলিমা আক্তার বলেন, ছেলেমেয়েদের গড়ে তুলতে বাবা-মা সন্তানদের শিক্ষা, তাদের আচরণ-ব্যবহার ইত্যাদির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবেন। ছেলেমেয়ের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। তারা কোথায় থাকছে, কী করছে সেদিকে খেয়াল রাখা খুবই প্রয়োজন। কলেজে প্রবেশের আগে স্কুলজীবনে কোনো শিক্ষার্থী যাতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ব্যবহার না করে সেদিকেও নজর রাখতে হবে অভিভাবকদের। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আমি প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করে থাকি।
তাছলিমা আক্তারের ছেলেবেলা কেটেছে ঢাকায়। পৈতৃক বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দীন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের চটিয়া গ্রামে। বাবা ইউনুছ আলী খান এয়ার ফোর্সে কর্মরত ছিলেন। মা সুফিয়া বেগম। ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল থেকে এসএসসি, বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। ৩১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে তাছলিমা আক্তার ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ঝিনাইদহে সহকারী কমিশনার হিসাবে যোগদান করেন। তার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেহেরিশ প্রিয়না শরিফ ও মেহরোজ আতিফা শরিফ। দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেন। তিনি সেই স্বপ্ন দেখাতে চান দেশের সব বাবা-মাকে ।
এ প্রসঙ্গে তাছলিমা আক্তার বলেন, কন্যাসন্তান বলে আমরা কেউ তাকে অবহেলা করব না। ছেলেমেয়ে যাই হোক, তাদের মানুষ করলেই একজন বাবা-মা সার্থক হন। নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য নয়। লক্ষ্য নিয়ে তাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাতে অবশ্যই সফলতা আসবে। আমি নিজে একজন নারী হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছি। বাবা-মাকে স্বস্তি দিতে পেরেছি। আমি চাই দেশের ছেলেমেয়েরা বড় স্বপ্ন দেখুক। একদিন না একদিন সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবেই।
একজন নারী হিসাবে উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে তাছলিমা আক্তার বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। সবার সহযোগিতা পাই। রাত-দিন ভেবে কাজ করি না। যখনই কোনো সমস্যার কথা শুনি সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধান করার চেষ্টা করি। চুয়াডাঙ্গায় বাল্যবিয়ের হার বেশি। দামুড়হুদাতেও অহরহ বাল্যবিয়ে হয়। কোথাও বাল্যবিয়ের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা বন্ধে ছুটে যাই। অভিভাবকদের বুঝিয়ে অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। অনেক অভিভাবক গোপনে বাল্যবিয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই থাকে না। তবে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে। সবার সহযোগিতা পেলে অবশ্যই সফল হব।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
‘বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে সফল হব’
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার। লিখেছেন-
হতে চেয়েছিলাম ডাক্তার, ভেবেছিলাম বিদেশে গিয়ে আরও লেখাপড়া করব। সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। ভাগ্যক্রমে চলে এসেছি প্রশাসনে। এ জন্য কোনো আফসোস নেই। একজন নারী হিসাবে উপজেলা প্রশাসনের তাবৎ তদারকিতে আমার কোনো সমস্যা হয় না। যেহেতু আমাদের প্রশাসনিক কাজ ২৪ ঘণ্টার। কখনো কখনো পরিবারকে সময় দিতে পারি না। বিশেষ করে আমার দুই শিশুসন্তানকে। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের কারণে ওদের সেভাবে সময় দিতে পারি না। ওরা মাকে সব সময় কাছে পাচ্ছে না।’ বললেন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার।
তাছলিমা আক্তার চতুর্থ নারী ইউএনও হিসাবে এ বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দামুড়হুদায় যোগদান করেন। তিনি জেলার একমাত্র নারী ইউএনও। তাছলিমা আক্তার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করছেন। যেখানেই বাল্যবিয়ে সেখানেই ছুটছেন তিনি। এ ছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও নারী কর্মীদের সুরক্ষায়ও বিশেষভাবে কাজ করছেন।
এলাকার নারী, কিশোর-কিশোরীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাছলিমা আক্তার বলেন, ছেলেমেয়েদের গড়ে তুলতে বাবা-মা সন্তানদের শিক্ষা, তাদের আচরণ-ব্যবহার ইত্যাদির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবেন। ছেলেমেয়ের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। তারা কোথায় থাকছে, কী করছে সেদিকে খেয়াল রাখা খুবই প্রয়োজন। কলেজে প্রবেশের আগে স্কুলজীবনে কোনো শিক্ষার্থী যাতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ব্যবহার না করে সেদিকেও নজর রাখতে হবে অভিভাবকদের। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আমি প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করে থাকি।
তাছলিমা আক্তারের ছেলেবেলা কেটেছে ঢাকায়। পৈতৃক বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দীন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের চটিয়া গ্রামে। বাবা ইউনুছ আলী খান এয়ার ফোর্সে কর্মরত ছিলেন। মা সুফিয়া বেগম। ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল থেকে এসএসসি, বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। ৩১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে তাছলিমা আক্তার ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ঝিনাইদহে সহকারী কমিশনার হিসাবে যোগদান করেন। তার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেহেরিশ প্রিয়না শরিফ ও মেহরোজ আতিফা শরিফ। দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেন। তিনি সেই স্বপ্ন দেখাতে চান দেশের সব বাবা-মাকে ।
এ প্রসঙ্গে তাছলিমা আক্তার বলেন, কন্যাসন্তান বলে আমরা কেউ তাকে অবহেলা করব না। ছেলেমেয়ে যাই হোক, তাদের মানুষ করলেই একজন বাবা-মা সার্থক হন। নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য নয়। লক্ষ্য নিয়ে তাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাতে অবশ্যই সফলতা আসবে। আমি নিজে একজন নারী হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছি। বাবা-মাকে স্বস্তি দিতে পেরেছি। আমি চাই দেশের ছেলেমেয়েরা বড় স্বপ্ন দেখুক। একদিন না একদিন সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবেই।
একজন নারী হিসাবে উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে তাছলিমা আক্তার বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। সবার সহযোগিতা পাই। রাত-দিন ভেবে কাজ করি না। যখনই কোনো সমস্যার কথা শুনি সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধান করার চেষ্টা করি। চুয়াডাঙ্গায় বাল্যবিয়ের হার বেশি। দামুড়হুদাতেও অহরহ বাল্যবিয়ে হয়। কোথাও বাল্যবিয়ের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা বন্ধে ছুটে যাই। অভিভাবকদের বুঝিয়ে অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। অনেক অভিভাবক গোপনে বাল্যবিয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই থাকে না। তবে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে। সবার সহযোগিতা পেলে অবশ্যই সফল হব।