মেঘনার লোনা পানিতে আহার খোঁজেন নুর বেগম
jugantor
মেঘনার লোনা পানিতে আহার খোঁজেন নুর বেগম

  শিপু ফরাজী  

০৯ মে ২০২২, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

চরফ্যাশন ও মনপুরার সীমান্ত নদী মেঘনায় জাল টানছিলেন চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ গ্রামের নুর বেগম। স্বামী নুরনবী মারা গেছেন অনেকদিন হয়ে গেছে। পেশায় ছিলেন মাঝি। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সংসারের হাল ধরেন। মেঘনা নদীতে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে এভাবেই সংসারের হাল ধরে রেখেছেন শক্ত হাতে। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই নুর বেগমের। জীবনের সঙ্গে হার না মানা অবিরাম সংগ্রাম শুরু হয়েছে তার ১০-১১ বছর বয়স থেকেই।

এক গরিব পরিবারে জন্ম নুর বেগমের। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। অভাবের সংসারে লেখাপড়া তেমন হয়ে ওঠেনি। অল্প বয়সেই বাবার সঙ্গে নদীতে জাল টেনে রেণু পোনা ধরতেন। এ প্রসঙ্গে নুর বেগম বলেন, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে সমান তালে মেঘনার বুক থেকে রেণু পোনা ধরতেন। ওই রেণু পোনা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনে বিক্রি করতেন দেশের বিভিন্ন মৎস্য ঘেরে। সারা দিনের পরিশ্রমের পর রেণুর পোনা বিক্রি করে আয় হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। সেই যে শুরু, এখন পর্যন্ত এ মেঘনা নদীর সঙ্গেই আমার জীবনের মিতালি। এখনো এ রেণু পোনা ধরেই চলে আমার সংসার। এ আয় দিয়েই ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের সব খরচ চালাই। নদীতে মাছ ধরতে গিয়েই পরিচয় নুর নবী মাঝির সঙ্গে। পরে দুজনে সংসার পাতি চরফ্যাশন উপজেলার চর মাদ্রাজ গ্রামে। সংসার চলছিল দুজনের সমান পরিশ্রমে। দুজনই মাছ বিক্রি করে যা পেতাম, তাতে সাদামাটাভাবেই চলছিল সব। এর মধ্যেই কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। সংসারের চাহিদা যখন বাড়তে থাকে, তখন বিয়ের সতেরো বছরের মাথায় স্বামী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মারা যায়। আবারও আমার জীবনে দুর্বিষহ অবস্থা নেমে আসে। সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। এ দুর্দিনের মধ্যেও শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছি, তেমনি টানছি মাছ ধরার জাল। মেঘনার নদীতেই মাছ ধরে কোনো রকমে সংসার চালাই। জীবনের প্রয়োজনে আর পেছন ফিরে তাকাইনি; বরং নদীর সঙ্গে আমার জীবনের সম্পর্ক গভীর থেকে আরও গভীরতর হয়েছে। ভোরবেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত, আবার কোনো কোনো সময় দুপুরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে জাল টেনে মাছ ধরি।

নুর বেগম আরও জানান, শুধু তিনি নয় এ নদীতে মাছ ধরে তার এলাকার এবং আশপাশের অনেক নারী-পুরুষ। এ নদীর সঙ্গে মিশে আছে তাদের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান।

মেঘনার লোনা পানিতে আহার খোঁজেন নুর বেগম

 শিপু ফরাজী 
০৯ মে ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

চরফ্যাশন ও মনপুরার সীমান্ত নদী মেঘনায় জাল টানছিলেন চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ গ্রামের নুর বেগম। স্বামী নুরনবী মারা গেছেন অনেকদিন হয়ে গেছে। পেশায় ছিলেন মাঝি। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সংসারের হাল ধরেন। মেঘনা নদীতে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে এভাবেই সংসারের হাল ধরে রেখেছেন শক্ত হাতে। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই নুর বেগমের। জীবনের সঙ্গে হার না মানা অবিরাম সংগ্রাম শুরু হয়েছে তার ১০-১১ বছর বয়স থেকেই।

এক গরিব পরিবারে জন্ম নুর বেগমের। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। অভাবের সংসারে লেখাপড়া তেমন হয়ে ওঠেনি। অল্প বয়সেই বাবার সঙ্গে নদীতে জাল টেনে রেণু পোনা ধরতেন। এ প্রসঙ্গে নুর বেগম বলেন, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে সমান তালে মেঘনার বুক থেকে রেণু পোনা ধরতেন। ওই রেণু পোনা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনে বিক্রি করতেন দেশের বিভিন্ন মৎস্য ঘেরে। সারা দিনের পরিশ্রমের পর রেণুর পোনা বিক্রি করে আয় হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। সেই যে শুরু, এখন পর্যন্ত এ মেঘনা নদীর সঙ্গেই আমার জীবনের মিতালি। এখনো এ রেণু পোনা ধরেই চলে আমার সংসার। এ আয় দিয়েই ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের সব খরচ চালাই। নদীতে মাছ ধরতে গিয়েই পরিচয় নুর নবী মাঝির সঙ্গে। পরে দুজনে সংসার পাতি চরফ্যাশন উপজেলার চর মাদ্রাজ গ্রামে। সংসার চলছিল দুজনের সমান পরিশ্রমে। দুজনই মাছ বিক্রি করে যা পেতাম, তাতে সাদামাটাভাবেই চলছিল সব। এর মধ্যেই কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। সংসারের চাহিদা যখন বাড়তে থাকে, তখন বিয়ের সতেরো বছরের মাথায় স্বামী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মারা যায়। আবারও আমার জীবনে দুর্বিষহ অবস্থা নেমে আসে। সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। এ দুর্দিনের মধ্যেও শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছি, তেমনি টানছি মাছ ধরার জাল। মেঘনার নদীতেই মাছ ধরে কোনো রকমে সংসার চালাই। জীবনের প্রয়োজনে আর পেছন ফিরে তাকাইনি; বরং নদীর সঙ্গে আমার জীবনের সম্পর্ক গভীর থেকে আরও গভীরতর হয়েছে। ভোরবেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত, আবার কোনো কোনো সময় দুপুরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে জাল টেনে মাছ ধরি।

নুর বেগম আরও জানান, শুধু তিনি নয় এ নদীতে মাছ ধরে তার এলাকার এবং আশপাশের অনেক নারী-পুরুষ। এ নদীর সঙ্গে মিশে আছে তাদের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন