পর্যটকদের পরিবেশবান্ধব ভ্রমণে
চর কুকরিমুকরিতে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প ‘হোম-স্টে’ সার্ভিস প্রবর্তনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শারামিন আক্তার। লিখেছেন-
শিপু ফরাজী
১৬ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন। দ্বীপের পূর্বদিকে প্রমত্তা মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেল। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ ও মেঘনার মিলনস্থল। শারামিন আক্তার কুকরিমুকরির অবহেলিত গ্রাম বাবুগঞ্জের এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তার বাবা ছিলেন ফরেস্ট গার্ড। ১৯৯৯ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন। এর কিছু দিন পর তার বিয়ে হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান। এরই মধ্যে তিনি স্বামীর কাছ থেকে নানা প্রবঞ্চনার ও নির্যাতনের শিকার হন। একদিন তাকে ছেড়ে চলে যায় তার স্বামী। আর কোনো খোঁজ নেয়নি তাদের। বাবাও চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। অভাবের সংসারে মেয়ে ও বাবা-মায়ের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে হিমশিম খান তিনি। সংসারের খরচ চালাতে ছোটখাটো চাকরি নেন। সেই আয় দিয়েই টানাপোড়েনের মধ্যে চলতে থাকে সংসার।
২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চর কুকরিমুকরিতে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন শীর্ষক ভ্যালু চেইন প্রকল্পের অধীনে ছোট ছোট বাড়িতে অবকাঠামোর উন্নয়ন করে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত কার্যক্রম হাতে নেয়। এরই অংশ হন শারামিন আক্তার। তিনি পর্যটনবান্ধব হোম-স্টে করার অনুদান পান। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
শারামিন আক্তারের মতে, হোম-স্টেতে দেশি ও বিদেশি উভয় পর্যটকরা আসেন। থাকার পাশাপাশি খাবার-দাবারের সুযোগও রয়েছে। কম খরচে উন্নত পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা রেখেই করা হয়েছে ‘হোম-স্টে’ সার্ভিস। আমার বাবার বাড়িতে একটি ঘর নিয়ে ‘হোম-স্টে’ সার্ভিস করেছি। এখানে রয়েছে সাতটি কক্ষ। পর্যটকদের সুবিধার জন্য রয়েছে ড্রয়িং রুমও। অন্যান্য সুবিধা তো রয়েছেই। বড় হোটেলে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পড়ে একটি কক্ষের ভাড়া। এখানে সেরকম কক্ষের ভাড়া পড়ে অনেক কম। ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় একটি কক্ষ পাওয়া যায়। যা পর্যটকদের জন্য লাভজনক। এতে পর্যটকরা পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক পরিবেশে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে কুকরিমুকরিতে পর্যটক ভ্রমণের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সেই সঙ্গে আমার আয়ের পথও সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকটি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এর ফলে সংসারে আর্থিক পরিবর্তন হয়েছে।
শারামিন আক্তারের হোম-স্টে’তে প্রায় সব সময়ই বুকিং থাকে। আগের বুকিং থাকায় ২০টি পর্যটক গ্রুপকে সেবা প্রদানে অপারগতা জানিয়েছেন তিনি। এই হোম-স্টে’তে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ পর্যটক সেবা গ্রহণ করেছেন। তিনি আয় করেছেন প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ আয় থেকে আরও ৩টি কক্ষ বাড়িয়েছেন। প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন স্থানীয় অবহেলিত নারীদের তার হোম-স্টে পরিচালনার কাজে নিয়োগ করে স্বাবলম্বী করেছেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পর্যটকদের পরিবেশবান্ধব ভ্রমণে
চর কুকরিমুকরিতে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প ‘হোম-স্টে’ সার্ভিস প্রবর্তনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শারামিন আক্তার। লিখেছেন-
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন। দ্বীপের পূর্বদিকে প্রমত্তা মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেল। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ ও মেঘনার মিলনস্থল। শারামিন আক্তার কুকরিমুকরির অবহেলিত গ্রাম বাবুগঞ্জের এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তার বাবা ছিলেন ফরেস্ট গার্ড। ১৯৯৯ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন। এর কিছু দিন পর তার বিয়ে হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান। এরই মধ্যে তিনি স্বামীর কাছ থেকে নানা প্রবঞ্চনার ও নির্যাতনের শিকার হন। একদিন তাকে ছেড়ে চলে যায় তার স্বামী। আর কোনো খোঁজ নেয়নি তাদের। বাবাও চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। অভাবের সংসারে মেয়ে ও বাবা-মায়ের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে হিমশিম খান তিনি। সংসারের খরচ চালাতে ছোটখাটো চাকরি নেন। সেই আয় দিয়েই টানাপোড়েনের মধ্যে চলতে থাকে সংসার।
২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চর কুকরিমুকরিতে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন শীর্ষক ভ্যালু চেইন প্রকল্পের অধীনে ছোট ছোট বাড়িতে অবকাঠামোর উন্নয়ন করে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত কার্যক্রম হাতে নেয়। এরই অংশ হন শারামিন আক্তার। তিনি পর্যটনবান্ধব হোম-স্টে করার অনুদান পান। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
শারামিন আক্তারের মতে, হোম-স্টেতে দেশি ও বিদেশি উভয় পর্যটকরা আসেন। থাকার পাশাপাশি খাবার-দাবারের সুযোগও রয়েছে। কম খরচে উন্নত পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা রেখেই করা হয়েছে ‘হোম-স্টে’ সার্ভিস। আমার বাবার বাড়িতে একটি ঘর নিয়ে ‘হোম-স্টে’ সার্ভিস করেছি। এখানে রয়েছে সাতটি কক্ষ। পর্যটকদের সুবিধার জন্য রয়েছে ড্রয়িং রুমও। অন্যান্য সুবিধা তো রয়েছেই। বড় হোটেলে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পড়ে একটি কক্ষের ভাড়া। এখানে সেরকম কক্ষের ভাড়া পড়ে অনেক কম। ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় একটি কক্ষ পাওয়া যায়। যা পর্যটকদের জন্য লাভজনক। এতে পর্যটকরা পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক পরিবেশে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে কুকরিমুকরিতে পর্যটক ভ্রমণের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সেই সঙ্গে আমার আয়ের পথও সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকটি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এর ফলে সংসারে আর্থিক পরিবর্তন হয়েছে।
শারামিন আক্তারের হোম-স্টে’তে প্রায় সব সময়ই বুকিং থাকে। আগের বুকিং থাকায় ২০টি পর্যটক গ্রুপকে সেবা প্রদানে অপারগতা জানিয়েছেন তিনি। এই হোম-স্টে’তে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ পর্যটক সেবা গ্রহণ করেছেন। তিনি আয় করেছেন প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ আয় থেকে আরও ৩টি কক্ষ বাড়িয়েছেন। প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন স্থানীয় অবহেলিত নারীদের তার হোম-স্টে পরিচালনার কাজে নিয়োগ করে স্বাবলম্বী করেছেন।