নোনাজলের জীবনকাব্য
মতিজান বিবি। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। ভাঁজ পড়েছে চেহারায়। কুঁচকেছে শরীরের চামড়া। বয়সের ভার, আর রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে যার চলাই দায়! সেই মতিজান বসে নেই। চলছে তার জীবন-সংগ্রাম। ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে এখনো নদীতে যান। পেটের তাগিদে বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন। যা আয় হয়, তাতেই চলে মতিজানের সংসার।
এভাবেই নৌকায় মতিজানের কেটেছে শৈশব আর কৈশোর। যে বয়সে সহপাঠীদের সঙ্গে মতিজানের হই-হুল্লোড় করে গোল্লাছুট আর কানামাছি খেলার কথা ছিল, সেই বয়সে সংসারের বোঝা বইতে হয়েছিল তাকে। কোমল হাতে তুলে নিতে হয়েছিল নৌকার বৈঠা। স্কুলে গিয়ে পড়ালেখার বদলে জীবিকার প্রয়োজনে বৈঠা বাওয়া, আর মাছ ধরার প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল তাকে।
জীবনের ক্লান্তিলগ্নে এসেও জলকন্যা মতিজানের জীবন-সংগ্রাম থেমে নেই। তার এ সংগ্রামী জীবনের সঙ্গী স্বামী রুস্তম সরদার। দুজনেই মাছ শিকারি। তাদের ঠিকানা বলতে যা আছে, তা শুধুই একটি নৌকা। অবসরে সেই নৌকা নিয়ে থাকেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুর্গম জনপদ চরমোন্তাজ ইউনিয়নের স্লুইস ঘাটের খালে।
তাদের জীবনের গল্প শুনতেই শনিবার সকালে যান এ প্রতিবেদক। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানা যায়, খুব সকালে মতিজান মাছ শিকারে গেছেন। তাই ট্রলারযোগে প্রতিবেদকও ছুটে যান সেখানে। গিয়ে দেখা যায়, বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে মতিজানের নৌকা। ঢেউয়ের তালে তালে তার নৌকাটিও তখন দুলছে। নৌকার সামনে বসে আছে মতিজান। একদিকে পা দিয়ে বৈঠা বাইছেন, অন্যদিকে বড়শি ফেলেছেন নদীতে। মাছের অপেক্ষায় তিক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছেন পানিতেও।
এমন অবস্থায় প্রতিবেদকের ক্যামেরার ক্লিকে মতিজানের দৃষ্টি ঘোরে। সব ক্লান্তি ছাপিয়ে হেসে ওঠেন মতিজান। গল্পের ছলে বলেন জীবন কাহিনি। আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাউফল উপজেলার ধূলিয়া এলাকায় সাজানো-গোছানো সংসার ছিল মতিজানদের। ছিল ঘরবাড়ি। কিন্তু নদীভাঙনে এখন নিঃস্ব। তাই ২০ বছর বয়সে স্বামীকে নিয়ে নৌকায় পাড়ি জমায় রাঙ্গাবালীতে। সেই থেকেই নৌকায় বসবাস।
মতিজান বিবি বলেন, ‘বাবারে এক্কালে (এক সময়) সব আছিল। আছিল ঘরবাড়ি, জায়গা-জমিও। কিন্তু ভাঙনে (ভাঙনে) আমাগো (আমাদের) সব নিয়া নেছে। এরপর স্বামীরে নিয়া এইহানে (এখানে) আইছি। প্যাডের (পেটের) জ্বালা মিটাইতে মাছ ধরা শুরু করছি।’ এ বয়সে পরিশ্রম করতে কষ্ট হয় কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাগো জীবনডাই (জীবন) এরম (এ রকম)। বইয়া (বসে) থাকলে খামু কী? কে খাওয়াইবে (খাওয়াবে)?।’ জানা যায়, মতিজানের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের সবার বিয়ে হয়েছে। আলাদা নৌকায় মা-বাবার মতোই তাদেরও মাছ ধরা পেশা।
মতিজানের মতোই বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে দেখা মেলে আরেক জলকন্যা আছমা বেগমের। বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। এক হাত দিয়ে নদীতে জাল ফেলছেন। আরেক হাত দিয়ে বৈঠা বাইছেন। নৌকার ছাউনির মধ্যে চলছে রান্নাবান্নাও।
কথা হয় আছমার সঙ্গে। তিনি জানান, তার বয়স যখন ৮-১০ বছর-তখন তাদেরও ভিটেবাড়ি হারায় নদীভাঙনে। সহায়-সম্পদ হারিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে নৌকায় জন্মভূমি বাউফলের ধূলিয়া থেকে রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজে পাড়ি জমায় আছমা। তখন থেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে মাছ ধরে জীবনের গল্প শুরু করেন। এখনো স্বামী চাঁন মিয়াকে নিয়ে নদীতে মাছ ধরেন এ জলকন্যা। তার এক মেয়ে আর তিন ছেলের পেশাও একই।
আছমা বেগম বলেন, ‘ভাঙনে (ভাঙনে) আমরা নিঃস্ব হইয়া গেছি। এহন (এখন) জায়গা-জমি কিচ্ছু নাই। আমাগো বাবা-মা যেইভাবে আমাগোরে নদীতে রাখছে। আমাগো পোলাপানও সেইভাবে নদীতে আছে। মাছটাচ ধইররাই প্যাট (পেট) চালাই।’
মতিজান-আছমার মতো নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে প্রায় ৪০ বছর আগ থেকে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের স্লুইসের খালে নৌকা নিয়ে বসবাস শুরু করেন এক জনগোষ্ঠী। যাদের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে সবকিছুই নৌকা ঘিরে। তাদের একমাত্র পেশা মাছ শিকার। স্থানীয়দের কাছে তারা ‘মান্তা সম্প্রদায়’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। গলাচিপায় কর্মরত প্রবীণ সাংবাদিক শংকর লাল দাশ জানান, ‘জলেভাসা জীবনের কারণেই তাদের সম্প্রদায়ের নাম ‘মান্তা’ রাখা হয়। এ মান্তা সম্প্রদায়ের জীবন-মান উন্নয়নে আমরা অনেকেই কাজ করেছিলাম। আর এখনো সেই কাজ অব্যাহত চলছে।’
জানা যায়, প্রথম পাঁচটি নৌকা নিয়ে তারা এখানে এসেছিল। বর্তমানে ওই এলাকায় ৮৬টি মান্তা পরিবারের বসবাস রয়েছে। এরই মধ্যে শিশু রয়েছে এক শতাধিক। এসব পরিবারে কর্মোঠ নারী সদস্যরা। তাদের ওপর নির্ভর করেই চলে পরিবারের অন্য সদস্যরা। তাদের মতে, ঘরোয়া কাজে যেমন নারীরা পারদর্শী তেমনি মাছ শিকারেও তারা অভিজ্ঞ। বৈঠা বাওয়ায়ও বেশ পটু।
তবে বংশ পরম্পরায় জলেভেসে চলা মান্তা সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, তাদের অনেকেই ভোটাধিকারের সুযোগ ও সরকারি বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ২৯টি পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে তাদের দেওয়া হয়েছে স্বপ্নের ঠিকানা। এখন তারা ডাঙার সেমিপাকা ঘরে থাকেন, আর নদীতে গিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কিন্তু এখনো প্রায় ৫৭টি পরিবার রয়েছে। যাদের ঠিকানা নদীতেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘মান্তা সম্প্রদায়ের লোকজন সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় এসেছে। ইতোমধ্যে মুজিববর্ষের ঘরসহ স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছে ২৯ জন। বাকিরাও পর্যায়ক্রমে ঘর পাবে। তাদের জন্য ঘর নির্মাণে ইতোমধ্যে বালু ফেলার কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘মান্তা শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে স্কুল নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।’
এদিকে শিক্ষার আলো যাদের কাছে ছিল বিলাসিতা, সেই মান্তারা পড়ালেখা শিখছে। জাগো নারী নামক একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ভাসমান বোট স্কুলের প্রি-প্রাইমারিতে পড়ালেখা করছে ৫০ শিশু। ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবরে এ কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এখনো শিক্ষার আলোর বাইরে আছে ৫০ জনেরও বেশি শিশু। বোট স্কুলপড়ুয়া শিশু রাকিব হোসেন ও জামিলা বলেন, ‘তাদের বাবা-মা নদীতে মাছ ধরেন। আর তারা সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে যান, পড়ালেখা করেন।’
ভাসমান বোট স্কুলের শিক্ষক আইয়ুব খান বলেন, ‘মান্তারা আগে ডাঙার মানুষের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার হতো। কিন্তু এখন তারা ডাঙার মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছে। দূর হচ্ছে সেই বৈষম্যও।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডাঙার শিশুদের মতোই তারাও পড়ালেখা করছে। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন বুনছে। বাবা-মা কষ্ট করলেও সন্তাদের নতুন জীবন দিতে স্কুলগামী করছে অনেকেই।’
নোনাজলের জীবনকাব্য
কামরুল হাসান
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মতিজান বিবি। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। ভাঁজ পড়েছে চেহারায়। কুঁচকেছে শরীরের চামড়া। বয়সের ভার, আর রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে যার চলাই দায়! সেই মতিজান বসে নেই। চলছে তার জীবন-সংগ্রাম। ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে এখনো নদীতে যান। পেটের তাগিদে বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন। যা আয় হয়, তাতেই চলে মতিজানের সংসার।
এভাবেই নৌকায় মতিজানের কেটেছে শৈশব আর কৈশোর। যে বয়সে সহপাঠীদের সঙ্গে মতিজানের হই-হুল্লোড় করে গোল্লাছুট আর কানামাছি খেলার কথা ছিল, সেই বয়সে সংসারের বোঝা বইতে হয়েছিল তাকে। কোমল হাতে তুলে নিতে হয়েছিল নৌকার বৈঠা। স্কুলে গিয়ে পড়ালেখার বদলে জীবিকার প্রয়োজনে বৈঠা বাওয়া, আর মাছ ধরার প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল তাকে।
জীবনের ক্লান্তিলগ্নে এসেও জলকন্যা মতিজানের জীবন-সংগ্রাম থেমে নেই। তার এ সংগ্রামী জীবনের সঙ্গী স্বামী রুস্তম সরদার। দুজনেই মাছ শিকারি। তাদের ঠিকানা বলতে যা আছে, তা শুধুই একটি নৌকা। অবসরে সেই নৌকা নিয়ে থাকেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুর্গম জনপদ চরমোন্তাজ ইউনিয়নের স্লুইস ঘাটের খালে।
তাদের জীবনের গল্প শুনতেই শনিবার সকালে যান এ প্রতিবেদক। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানা যায়, খুব সকালে মতিজান মাছ শিকারে গেছেন। তাই ট্রলারযোগে প্রতিবেদকও ছুটে যান সেখানে। গিয়ে দেখা যায়, বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে মতিজানের নৌকা। ঢেউয়ের তালে তালে তার নৌকাটিও তখন দুলছে। নৌকার সামনে বসে আছে মতিজান। একদিকে পা দিয়ে বৈঠা বাইছেন, অন্যদিকে বড়শি ফেলেছেন নদীতে। মাছের অপেক্ষায় তিক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছেন পানিতেও।
এমন অবস্থায় প্রতিবেদকের ক্যামেরার ক্লিকে মতিজানের দৃষ্টি ঘোরে। সব ক্লান্তি ছাপিয়ে হেসে ওঠেন মতিজান। গল্পের ছলে বলেন জীবন কাহিনি। আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাউফল উপজেলার ধূলিয়া এলাকায় সাজানো-গোছানো সংসার ছিল মতিজানদের। ছিল ঘরবাড়ি। কিন্তু নদীভাঙনে এখন নিঃস্ব। তাই ২০ বছর বয়সে স্বামীকে নিয়ে নৌকায় পাড়ি জমায় রাঙ্গাবালীতে। সেই থেকেই নৌকায় বসবাস।
মতিজান বিবি বলেন, ‘বাবারে এক্কালে (এক সময়) সব আছিল। আছিল ঘরবাড়ি, জায়গা-জমিও। কিন্তু ভাঙনে (ভাঙনে) আমাগো (আমাদের) সব নিয়া নেছে। এরপর স্বামীরে নিয়া এইহানে (এখানে) আইছি। প্যাডের (পেটের) জ্বালা মিটাইতে মাছ ধরা শুরু করছি।’ এ বয়সে পরিশ্রম করতে কষ্ট হয় কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাগো জীবনডাই (জীবন) এরম (এ রকম)। বইয়া (বসে) থাকলে খামু কী? কে খাওয়াইবে (খাওয়াবে)?।’ জানা যায়, মতিজানের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের সবার বিয়ে হয়েছে। আলাদা নৌকায় মা-বাবার মতোই তাদেরও মাছ ধরা পেশা।
মতিজানের মতোই বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে দেখা মেলে আরেক জলকন্যা আছমা বেগমের। বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। এক হাত দিয়ে নদীতে জাল ফেলছেন। আরেক হাত দিয়ে বৈঠা বাইছেন। নৌকার ছাউনির মধ্যে চলছে রান্নাবান্নাও।
কথা হয় আছমার সঙ্গে। তিনি জানান, তার বয়স যখন ৮-১০ বছর-তখন তাদেরও ভিটেবাড়ি হারায় নদীভাঙনে। সহায়-সম্পদ হারিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে নৌকায় জন্মভূমি বাউফলের ধূলিয়া থেকে রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজে পাড়ি জমায় আছমা। তখন থেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে মাছ ধরে জীবনের গল্প শুরু করেন। এখনো স্বামী চাঁন মিয়াকে নিয়ে নদীতে মাছ ধরেন এ জলকন্যা। তার এক মেয়ে আর তিন ছেলের পেশাও একই।
আছমা বেগম বলেন, ‘ভাঙনে (ভাঙনে) আমরা নিঃস্ব হইয়া গেছি। এহন (এখন) জায়গা-জমি কিচ্ছু নাই। আমাগো বাবা-মা যেইভাবে আমাগোরে নদীতে রাখছে। আমাগো পোলাপানও সেইভাবে নদীতে আছে। মাছটাচ ধইররাই প্যাট (পেট) চালাই।’
মতিজান-আছমার মতো নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে প্রায় ৪০ বছর আগ থেকে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের স্লুইসের খালে নৌকা নিয়ে বসবাস শুরু করেন এক জনগোষ্ঠী। যাদের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে সবকিছুই নৌকা ঘিরে। তাদের একমাত্র পেশা মাছ শিকার। স্থানীয়দের কাছে তারা ‘মান্তা সম্প্রদায়’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। গলাচিপায় কর্মরত প্রবীণ সাংবাদিক শংকর লাল দাশ জানান, ‘জলেভাসা জীবনের কারণেই তাদের সম্প্রদায়ের নাম ‘মান্তা’ রাখা হয়। এ মান্তা সম্প্রদায়ের জীবন-মান উন্নয়নে আমরা অনেকেই কাজ করেছিলাম। আর এখনো সেই কাজ অব্যাহত চলছে।’
জানা যায়, প্রথম পাঁচটি নৌকা নিয়ে তারা এখানে এসেছিল। বর্তমানে ওই এলাকায় ৮৬টি মান্তা পরিবারের বসবাস রয়েছে। এরই মধ্যে শিশু রয়েছে এক শতাধিক। এসব পরিবারে কর্মোঠ নারী সদস্যরা। তাদের ওপর নির্ভর করেই চলে পরিবারের অন্য সদস্যরা। তাদের মতে, ঘরোয়া কাজে যেমন নারীরা পারদর্শী তেমনি মাছ শিকারেও তারা অভিজ্ঞ। বৈঠা বাওয়ায়ও বেশ পটু।
তবে বংশ পরম্পরায় জলেভেসে চলা মান্তা সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, তাদের অনেকেই ভোটাধিকারের সুযোগ ও সরকারি বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ২৯টি পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে তাদের দেওয়া হয়েছে স্বপ্নের ঠিকানা। এখন তারা ডাঙার সেমিপাকা ঘরে থাকেন, আর নদীতে গিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কিন্তু এখনো প্রায় ৫৭টি পরিবার রয়েছে। যাদের ঠিকানা নদীতেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘মান্তা সম্প্রদায়ের লোকজন সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় এসেছে। ইতোমধ্যে মুজিববর্ষের ঘরসহ স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছে ২৯ জন। বাকিরাও পর্যায়ক্রমে ঘর পাবে। তাদের জন্য ঘর নির্মাণে ইতোমধ্যে বালু ফেলার কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘মান্তা শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে স্কুল নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।’
এদিকে শিক্ষার আলো যাদের কাছে ছিল বিলাসিতা, সেই মান্তারা পড়ালেখা শিখছে। জাগো নারী নামক একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ভাসমান বোট স্কুলের প্রি-প্রাইমারিতে পড়ালেখা করছে ৫০ শিশু। ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবরে এ কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এখনো শিক্ষার আলোর বাইরে আছে ৫০ জনেরও বেশি শিশু। বোট স্কুলপড়ুয়া শিশু রাকিব হোসেন ও জামিলা বলেন, ‘তাদের বাবা-মা নদীতে মাছ ধরেন। আর তারা সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে যান, পড়ালেখা করেন।’
ভাসমান বোট স্কুলের শিক্ষক আইয়ুব খান বলেন, ‘মান্তারা আগে ডাঙার মানুষের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার হতো। কিন্তু এখন তারা ডাঙার মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছে। দূর হচ্ছে সেই বৈষম্যও।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডাঙার শিশুদের মতোই তারাও পড়ালেখা করছে। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন বুনছে। বাবা-মা কষ্ট করলেও সন্তাদের নতুন জীবন দিতে স্কুলগামী করছে অনেকেই।’
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023