মানুষ হিসাবে আমরা একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যাই : লেডি গাগা
jugantor
তবু যাই এগিয়ে
মানুষ হিসাবে আমরা একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যাই : লেডি গাগা

  সুমন্ত গুপ্ত  

৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

২০০৫ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সংগীত জগতে যাত্রা শুরু লেডি গাগার। এ পর্যন্ত প্রকাশিত তিনটি অ্যালবামই লেডি গাগাকে এনে দিয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। ২০০৮ সালে গাগার প্রথম অ্যালবাম দ্য ফেম বাজারে আসে। পরের বছর আসে তার দ্বিতীয় অ্যালবাম দ্য ফেমমন স্টার। সর্বশেষ ২০১১ সালে মুক্তি পায় গাগার তৃতীয় অ্যালবাম বর্ন দিস ওয়ে। অ্যালবাম বিক্রির নতুন নতুন রেকর্ড যেমন করেছেন লেডি গাগা, তেমনি খুদে ব্লগ লেখার ওয়েবসাইট টুইটারেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে রয়েছেন হলিউড তারকাদের মধ্যে শীর্ষে। গানের পাশাপাশি তিনি একাধিক ছবিতেও অভিনয় করেছেন। লেডি গাগার আসল নাম ফানি জোয়ান অ্যাঞ্জেলিনা জার্মা নোটা। লেডি গাগার ওপর লিখিত হয়েছে একটি জীবনীগ্রন্থ। গ্রন্থটি রচনা করেছেন এমিলি হার্বার্ট (ভার্জিনিয়া ব্ল্যাক বার্নের ছদ্মনাম)। বইটি যুক্তরাজ্যে প্রকাশ করে জন ব্ল্যাক পাবলিশিং এবং যুক্তরাষ্ট্রে লেডি গাগা : বিহাইন্ড দ্য ফেম নামে প্রকাশ করে অভারলুক প্রেস। বইটিতে জন্ম, প্রাথমিক জীবন ও গায়িকা হিসাবে কর্মজীবন শুরুর বর্ণনা রয়েছে। গান দিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে শুরু করে বিলবোর্ড, টাইম ও ফোর্বস সাময়িকীর ক্ষমতাবানদের তালিকাতেও উঠেছে তার নাম। গত ১৬ অক্টোবর তিনি এল সাময়িকীর ‘উইম্যানইন হলিউড’ সম্মাননা গ্রহণ করেন। তার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন জেনিফার লোপেজ। সম্মাননা গ্রহণ করে লেডি গাগা তার অনুভূতি প্রকাশ করেন উপস্থিত সবার সামনে। তাতে উঠে আসে তার জীবন সংগ্রামের কথা। তার বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো আমাদের ডিপ্রজন্মের পাঠকদের জন্য। কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমার জীবনটা কখনো এ পর্যায়ে এসে পৌঁছাবে, কোনো দিন শুধুই নারী হওয়ার জন্য আমাকে বিশেষভাবে সম্মান জানানো হবে। এটি আমার কল্পনার বাইরে ছিল। জীবনে এমন একটি দিনের কথা ভাবতেও পারিনি। সত্যিই আমি অনেক সৌভাগ্যবান এমন একটি পরিবারের অংশ হতে পেরে। আজ এ অনুষ্ঠানে আসার জন্য তৈরি হওয়ার সময় একের পর এক পোশাক বদলাচ্ছিলাম। কখনো আঁটসাঁট গাউন পরছিলাম, কখনো দেখছিলাম উঁচু কোনো হিল জুতায় আমাকে কেমন মানায়। হীরার গয়না থেকে শুরু করে হাজার হাজার পাথর-পুঁতি বসানো ভারী পোশাক, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সিল্কের জামা-একের পর এক পরে দেখছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে, সেসবে নিজেকে দেখে খুব অস্বস্তি লাগছিল। তখন মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম-হলিউডে একজন নারীর আসল মানে কী? আমরা শুধু বিনোদন দেওয়ার কোনো ভোগ্য বস্তু নই। আমরা সাধারণ একটা ছবি নই, যা দেখলে কারও মুখে হাসি ফুটবে বা কারও উত্তেজনা বাড়বে। আমরা আজীবন চলতে থাকা কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতার অংশও নই, যারা সব সময় সৌন্দর্য নিয়ে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই থাকবে। আমরা হলিউডের নারীরা এক একজন একেকটা স্বতন্ত্র কণ্ঠ। আমাদের চিন্তাধারা গভীর, পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী, বিশ্বাস দৃঢ়। সে সময় কথা বলার আর প্রতিবাদ করার শক্তি রাখি, যখন আমাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। প্রায় ১০টির মতো জামা বদলের পর প্রচণ্ড খারাপ লাগা নিয়ে যখন আমি ভাবছিলাম যে, এসবের পরও দিন শেষে লালগালিচায় আমি কী পরলাম, কীভাবে সাজলাম, এগুলোই হবে আলোচনার বিষয়; ঠিক সেসময় আমার চোখে পড়ল আলমারির একপাশে পড়ে থাকা মার্ক জ্যাক বেরনক শাকরা একটা স্যুটের দিকে। এ পোশাকটা ছেলেদের স্যুটের মতো, তবে ঢিলেঢালা, মেয়েদের জন্য নকশা করা। আমি সেটাই পরলাম কতগুলো উৎসুক চোখের বিস্মিত দৃষ্টি দেখার জন্য। এরপর ‘রিডার্টেতে তোমাকে দারুণ লাগত!’, একজন বললেন। ‘কেলভিনক্লেইনের রাফসিমন সে কিন্তু বেশ মানাত তোমাকে’, এটি বললেন আরেকজন। ‘আচ্ছা ব্র্যান্ডন ম্যাক্সওয়েল বাডি ওরের ব্যাপারে ভেবে দেখেছিলে?’-লালগালিচায় এভাবে একের পর এক প্রশ্ন আমার দিকে তেড়ে আসছিল। তখন আমি কেঁদে ফেললাম। এসব তো নিতান্তই পোশাক! হ্যাঁ, গাউন পরিনি, আমি পরে এসেছি ছেলেদের মতো ঢোলা স্যুট-প্যান্ট। কিন্তু এ স্যুটে আমাকে আজ আমি খুঁজে পেয়েছি। এ ঢিলেঢালা স্যুটে আমি বুঝতে পেরেছি ঠিক, ভেতর থেকে আমি কী, কেমন। আর তখনোই আমি বুঝতে পেরেছি, আমার ঠিক এ সময়ে কী বলা উচিত, কী প্রকাশ করা উচিত। আমি আজ আমার সব ক্ষমতা ফেরত চাই। এ বিনোদন জগতেরই প্রভাবশালী একজনের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। এখনো একজন নারী হিসাবে সেই নির্যাতনকারীর নাম বলার মতো সাহস আমার হয়নি। আমি আজও এ কারণে কোনো শক্তি পাই না, সাহস পাই না। কিন্তু আজ আমি ঠিক করেছি, আর না, আমি আমার হারানো সেই শক্তি ফেরত চাই। তাই আজ আমি ছেলেদের জন্য তৈরি এ উদ্ভট স্যুট-প্যান্ট পরেছি। আমি সবাইকে বোঝাতে চাই যে, আমার শক্তি এ পোশাকের চেয়েও অনেক ঊর্ধ্বে। আমার বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর, সেই বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর আমি একেবারে বদল যাই। আমার ভেতরের একটা অংশ মরে যায় সে দিনই। এর কথা আমি কাউকে বলতে পারিনি। আমি সেই বদলে যাওয়াকে সব সময়ই এড়িয়ে গেছি। নিজেকে লজ্জায় কুঁকড়ে রেখেছি। ভেবেছি, দোষটা বুঝি আমারই ছিল। এমনকি আজও অনেক সময় সবার সামনে দাঁড়াতে আমার লজ্জা লাগে। মনে হয়, আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, সবই আমার দোষে। এমনও অনেকদিন যায়, যখন নিজেকে অপরাধী ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না। এ অনুভূতিগুলো আমি হলিউডের প্রভাবশালী কিছু পুরুষের কাছে অনেকবারই প্রকাশ করেছি, কিন্তু কেউ আমাকে কখনো সাহায্য করেনি। কীভাবে ন্যায়বিচার পেতে পারি আমি, সেই পথ কেউ কখনো আমাকে দেখায়নি। এমনকি আমার বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থায়ও কেউ আমাকে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়নি। তারা ভয়ে লুকিয়ে ছিল। ভেবেছিল, আমাকে ন্যায়ের পথ দেখালে হয়তো তাদেরও অনেক গুমর ফাঁস হয়ে যাবে। তারা লুকিয়েছিল, তাই আমিও নিজেকে একটা সময় লুকিয়ে রাখতে শুরু করি। আমি অনেকদিন নিজেকে দাবিয়ে রেখেছিলাম। তবে একটা সময় যৌন নির্যাতনের মানসিক যন্ত্রণা ও অপরাধবোধ আমার শারীরিক ব্যথা আর অনেক রোগের কারণ হতে শুরু করে। সেই শারীরিক ব্যথা নিয়ে বাধ্য হয়ে আমাকে যেতে হয় চিকিৎসকের কাছে। এ সময়ে বিশ্বে প্রতি চারজনে একজন মানসিক রোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৩০ কোটি মানুষ ভুগছে অবসাদ ও হতাশায়। ছয় কোটি মানুষ বেঁচে আছে বাই পোলার ডিজঅর্ডার নিয়ে। সিজো ফ্রেনিয়ায় ভোগা মানুষের সংখ্যা এখন ২ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছেছে। আর প্রতি বছর বিশ্বের ৮ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে আত্মহত্যা করে। নিু ও মধ্যম আয়ের দেশে মানসিক রোগে ভোগা ৭৬ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষই কোনো ধরনের চিকিৎসার সুযোগ পায় না। এমনকি ধনী দেশগুলোতেও ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ মানসিক রোগীর এ একই সমস্যা, তারা চিকিৎসার সুযোগ পায় না। আমার স্বপ্ন, প্রতিটি দেশের, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিক্ষক বা থেরাপিস্ট থাকুক। তাই চলুন আমরা আওয়াজ তুলি। শুধু নারী বা পুরুষ আলাদা করে নয়। মানুষ হিসাবে আমরা একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যাই সমতা আর সুস্থতার দিকে। এ সমতা আর সুস্থতা নারী-পুরুষসহ সব পরিচয়ের, সব শ্রেণির মানুষের জন্য।

তবু যাই এগিয়ে

মানুষ হিসাবে আমরা একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যাই : লেডি গাগা

 সুমন্ত গুপ্ত 
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

২০০৫ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সংগীত জগতে যাত্রা শুরু লেডি গাগার। এ পর্যন্ত প্রকাশিত তিনটি অ্যালবামই লেডি গাগাকে এনে দিয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। ২০০৮ সালে গাগার প্রথম অ্যালবাম দ্য ফেম বাজারে আসে। পরের বছর আসে তার দ্বিতীয় অ্যালবাম দ্য ফেমমন স্টার। সর্বশেষ ২০১১ সালে মুক্তি পায় গাগার তৃতীয় অ্যালবাম বর্ন দিস ওয়ে। অ্যালবাম বিক্রির নতুন নতুন রেকর্ড যেমন করেছেন লেডি গাগা, তেমনি খুদে ব্লগ লেখার ওয়েবসাইট টুইটারেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে রয়েছেন হলিউড তারকাদের মধ্যে শীর্ষে। গানের পাশাপাশি তিনি একাধিক ছবিতেও অভিনয় করেছেন। লেডি গাগার আসল নাম ফানি জোয়ান অ্যাঞ্জেলিনা জার্মা নোটা। লেডি গাগার ওপর লিখিত হয়েছে একটি জীবনীগ্রন্থ। গ্রন্থটি রচনা করেছেন এমিলি হার্বার্ট (ভার্জিনিয়া ব্ল্যাক বার্নের ছদ্মনাম)। বইটি যুক্তরাজ্যে প্রকাশ করে জন ব্ল্যাক পাবলিশিং এবং যুক্তরাষ্ট্রে লেডি গাগা : বিহাইন্ড দ্য ফেম নামে প্রকাশ করে অভারলুক প্রেস। বইটিতে জন্ম, প্রাথমিক জীবন ও গায়িকা হিসাবে কর্মজীবন শুরুর বর্ণনা রয়েছে। গান দিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে শুরু করে বিলবোর্ড, টাইম ও ফোর্বস সাময়িকীর ক্ষমতাবানদের তালিকাতেও উঠেছে তার নাম। গত ১৬ অক্টোবর তিনি এল সাময়িকীর ‘উইম্যানইন হলিউড’ সম্মাননা গ্রহণ করেন। তার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন জেনিফার লোপেজ। সম্মাননা গ্রহণ করে লেডি গাগা তার অনুভূতি প্রকাশ করেন উপস্থিত সবার সামনে। তাতে উঠে আসে তার জীবন সংগ্রামের কথা। তার বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো আমাদের ডিপ্রজন্মের পাঠকদের জন্য। কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমার জীবনটা কখনো এ পর্যায়ে এসে পৌঁছাবে, কোনো দিন শুধুই নারী হওয়ার জন্য আমাকে বিশেষভাবে সম্মান জানানো হবে। এটি আমার কল্পনার বাইরে ছিল। জীবনে এমন একটি দিনের কথা ভাবতেও পারিনি। সত্যিই আমি অনেক সৌভাগ্যবান এমন একটি পরিবারের অংশ হতে পেরে। আজ এ অনুষ্ঠানে আসার জন্য তৈরি হওয়ার সময় একের পর এক পোশাক বদলাচ্ছিলাম। কখনো আঁটসাঁট গাউন পরছিলাম, কখনো দেখছিলাম উঁচু কোনো হিল জুতায় আমাকে কেমন মানায়। হীরার গয়না থেকে শুরু করে হাজার হাজার পাথর-পুঁতি বসানো ভারী পোশাক, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সিল্কের জামা-একের পর এক পরে দেখছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে, সেসবে নিজেকে দেখে খুব অস্বস্তি লাগছিল। তখন মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম-হলিউডে একজন নারীর আসল মানে কী? আমরা শুধু বিনোদন দেওয়ার কোনো ভোগ্য বস্তু নই। আমরা সাধারণ একটা ছবি নই, যা দেখলে কারও মুখে হাসি ফুটবে বা কারও উত্তেজনা বাড়বে। আমরা আজীবন চলতে থাকা কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতার অংশও নই, যারা সব সময় সৌন্দর্য নিয়ে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই থাকবে। আমরা হলিউডের নারীরা এক একজন একেকটা স্বতন্ত্র কণ্ঠ। আমাদের চিন্তাধারা গভীর, পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী, বিশ্বাস দৃঢ়। সে সময় কথা বলার আর প্রতিবাদ করার শক্তি রাখি, যখন আমাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। প্রায় ১০টির মতো জামা বদলের পর প্রচণ্ড খারাপ লাগা নিয়ে যখন আমি ভাবছিলাম যে, এসবের পরও দিন শেষে লালগালিচায় আমি কী পরলাম, কীভাবে সাজলাম, এগুলোই হবে আলোচনার বিষয়; ঠিক সেসময় আমার চোখে পড়ল আলমারির একপাশে পড়ে থাকা মার্ক জ্যাক বেরনক শাকরা একটা স্যুটের দিকে। এ পোশাকটা ছেলেদের স্যুটের মতো, তবে ঢিলেঢালা, মেয়েদের জন্য নকশা করা। আমি সেটাই পরলাম কতগুলো উৎসুক চোখের বিস্মিত দৃষ্টি দেখার জন্য। এরপর ‘রিডার্টেতে তোমাকে দারুণ লাগত!’, একজন বললেন। ‘কেলভিনক্লেইনের রাফসিমন সে কিন্তু বেশ মানাত তোমাকে’, এটি বললেন আরেকজন। ‘আচ্ছা ব্র্যান্ডন ম্যাক্সওয়েল বাডি ওরের ব্যাপারে ভেবে দেখেছিলে?’-লালগালিচায় এভাবে একের পর এক প্রশ্ন আমার দিকে তেড়ে আসছিল। তখন আমি কেঁদে ফেললাম। এসব তো নিতান্তই পোশাক! হ্যাঁ, গাউন পরিনি, আমি পরে এসেছি ছেলেদের মতো ঢোলা স্যুট-প্যান্ট। কিন্তু এ স্যুটে আমাকে আজ আমি খুঁজে পেয়েছি। এ ঢিলেঢালা স্যুটে আমি বুঝতে পেরেছি ঠিক, ভেতর থেকে আমি কী, কেমন। আর তখনোই আমি বুঝতে পেরেছি, আমার ঠিক এ সময়ে কী বলা উচিত, কী প্রকাশ করা উচিত। আমি আজ আমার সব ক্ষমতা ফেরত চাই। এ বিনোদন জগতেরই প্রভাবশালী একজনের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। এখনো একজন নারী হিসাবে সেই নির্যাতনকারীর নাম বলার মতো সাহস আমার হয়নি। আমি আজও এ কারণে কোনো শক্তি পাই না, সাহস পাই না। কিন্তু আজ আমি ঠিক করেছি, আর না, আমি আমার হারানো সেই শক্তি ফেরত চাই। তাই আজ আমি ছেলেদের জন্য তৈরি এ উদ্ভট স্যুট-প্যান্ট পরেছি। আমি সবাইকে বোঝাতে চাই যে, আমার শক্তি এ পোশাকের চেয়েও অনেক ঊর্ধ্বে। আমার বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর, সেই বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর আমি একেবারে বদল যাই। আমার ভেতরের একটা অংশ মরে যায় সে দিনই। এর কথা আমি কাউকে বলতে পারিনি। আমি সেই বদলে যাওয়াকে সব সময়ই এড়িয়ে গেছি। নিজেকে লজ্জায় কুঁকড়ে রেখেছি। ভেবেছি, দোষটা বুঝি আমারই ছিল। এমনকি আজও অনেক সময় সবার সামনে দাঁড়াতে আমার লজ্জা লাগে। মনে হয়, আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, সবই আমার দোষে। এমনও অনেকদিন যায়, যখন নিজেকে অপরাধী ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না। এ অনুভূতিগুলো আমি হলিউডের প্রভাবশালী কিছু পুরুষের কাছে অনেকবারই প্রকাশ করেছি, কিন্তু কেউ আমাকে কখনো সাহায্য করেনি। কীভাবে ন্যায়বিচার পেতে পারি আমি, সেই পথ কেউ কখনো আমাকে দেখায়নি। এমনকি আমার বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থায়ও কেউ আমাকে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়নি। তারা ভয়ে লুকিয়ে ছিল। ভেবেছিল, আমাকে ন্যায়ের পথ দেখালে হয়তো তাদেরও অনেক গুমর ফাঁস হয়ে যাবে। তারা লুকিয়েছিল, তাই আমিও নিজেকে একটা সময় লুকিয়ে রাখতে শুরু করি। আমি অনেকদিন নিজেকে দাবিয়ে রেখেছিলাম। তবে একটা সময় যৌন নির্যাতনের মানসিক যন্ত্রণা ও অপরাধবোধ আমার শারীরিক ব্যথা আর অনেক রোগের কারণ হতে শুরু করে। সেই শারীরিক ব্যথা নিয়ে বাধ্য হয়ে আমাকে যেতে হয় চিকিৎসকের কাছে। এ সময়ে বিশ্বে প্রতি চারজনে একজন মানসিক রোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৩০ কোটি মানুষ ভুগছে অবসাদ ও হতাশায়। ছয় কোটি মানুষ বেঁচে আছে বাই পোলার ডিজঅর্ডার নিয়ে। সিজো ফ্রেনিয়ায় ভোগা মানুষের সংখ্যা এখন ২ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছেছে। আর প্রতি বছর বিশ্বের ৮ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে আত্মহত্যা করে। নিু ও মধ্যম আয়ের দেশে মানসিক রোগে ভোগা ৭৬ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষই কোনো ধরনের চিকিৎসার সুযোগ পায় না। এমনকি ধনী দেশগুলোতেও ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ মানসিক রোগীর এ একই সমস্যা, তারা চিকিৎসার সুযোগ পায় না। আমার স্বপ্ন, প্রতিটি দেশের, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিক্ষক বা থেরাপিস্ট থাকুক। তাই চলুন আমরা আওয়াজ তুলি। শুধু নারী বা পুরুষ আলাদা করে নয়। মানুষ হিসাবে আমরা একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যাই সমতা আর সুস্থতার দিকে। এ সমতা আর সুস্থতা নারী-পুরুষসহ সব পরিচয়ের, সব শ্রেণির মানুষের জন্য।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন