বদলে গেছে শিক্ষার চিত্র
jugantor
মোবাইলে প্রাথমিকের উপবৃত্তি
বদলে গেছে শিক্ষার চিত্র

  মোছা. নাছিমা খানম  

৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে অভিভাবকদের অনাগ্রহের চিত্র তো আমাদের দেশে খুব পুরোনো নয়; মাত্র কয়েক বছর আগেও হরহামেশাই দেখেছি এ চিত্র। শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে গিয়ে এ চিত্রটা আরও বেশি করে চোখে পড়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে যে চিত্রটা এমন করে পালটে যাবে তখন সেটা ভাবতে পারিনি। এখন বাচ্চারা আনন্দ নিয়ে স্কুলে আসছে, আর এক সময়ের অনাগ্রহী বাবা-মায়েরাও এখন আগ্রহ নিয়ে তাদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিচ্ছেন। হঠাৎ ঝলকের মতো চিত্রকল্প এভাবে বদলে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় অনুসঙ্গ হিসাবে কাজ করেছে উপবৃত্তি।

তবে সরকার উপবৃত্তি দিতে শুরু করার পরও কিন্তু এক্ষেত্রে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছি আমরা। তালিকায় থাকা সুবিধাভোগীদের উপবৃত্তি পাওয়া, না পাওয়ার ইস্যু ছিল। তালিকাভুক্তি নিয়েও ছিল নানা কথা। কিন্তু সত্যিই দিন বদলে গেছে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য যেটি লাগে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা সেটি আসলে পরিচ্ছন্ন ডেটাবেজ তৈরি এবং স্বচ্ছভাবে উপবৃত্তিই নিশ্চিত করেছে।

এ জন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ পাওনা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শিক্ষার মান উন্নয়নে যে উপবৃত্তি তিনি চালু করেছেন, সেটা অসাধারণ একটা কাজ হয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে আমাদের প্রথম কাজ হলো, শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা। এরপর আমাদের কাজ হলো শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এরপর হলো পড়াশোনা।

আমাদের যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছেন, তাদের শিশুদের স্কুলে ভর্তি ও উপস্থিতিতে দারুণ প্রভাব পড়েছে। এ পরিবারগুলোতে এ অর্থ অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। এ শিশুদের স্কুলের পোশাক কেনা, উপকরণ কেনা, স্কুল ব্যাগ কেনা; এসবের খরচ হিসাবে পাচ্ছে টাকাটা। এতে পরিবারগুলো শিক্ষার প্রতি খুবই উৎসাহিত হচ্ছে। এতে বাচ্চারাও খুব আনন্দ পায়। তারা মনে করে, এটা তাদের নিজেদের টাকা। পরিবারগুলোতে উপবৃত্তি পাওয়ার ফলে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যাপারে খুব আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কারণ, স্কুলে তারা বাচ্চাদের পড়াচ্ছে, তাতে তো কোনো টাকা লাগছেই না। বই পাচ্ছে বিনামূল্যে। এখন আবার সরকার উলটো টাকা দিচ্ছে। এটা দারুণ একটা ব্যাপার। আগে যেসব পরিবার স্কুলে শিশুকে পাঠানোর ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিল, তারা এখন সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। অনেক পরিবারের বাচ্চারা প্রাইভেট স্কুল বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের পাঠাত। এখন তারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে বাচ্চাদের। এতে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে দরিদ্র পরিবারগুলোতে। যেসব অভিভাবক নিজেরা শিক্ষার সুযোগ পাননি, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না, তারা এখন শিশুকে কাজে না পাঠিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন। আমার কর্মক্ষেত্র মুন্সীগঞ্জের কথা বলি। এটা মূলত একটা শিল্প এলাকা। এখানে এ ছাড়া প্রচুর আলু চাষ হয়। ফলে বাইরে থেকে অনেক মানুষ আসে এখানে শ্রমিক ও কৃষক হিসাবে। এদের পরিবারগুলো থেকে আগে শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে কম আগ্রহ পেত। এখন আমরা জরিপ করে দেখতে পাই, এসব পরিবারের সব শিশু বিদ্যালয়ে আসছে। এর কারণ অবশ্যই উপবৃত্তি। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এ উপবৃত্তি বিতরণের জন্য তালিকা করি। আগে এটা ম্যানুয়ালি করা হতো। এখন পুরো ব্যাপারটা ডিজিটাল হয়েছে। আমরা শুরুতে শিক্ষার্থীর কিছু তথ্য সংগ্রহ করি। তার নাম, শ্রেণি, জন্ম নিবন্ধন নম্বর নিই। এ ছাড়া মায়ের বা বাবার বা কোনো বৈধ অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি গ্রহণ করি। এর সঙ্গে ওই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই নিবন্ধিত নগদ নম্বর নেওয়া হয়। এসব সংগ্রহের কাজ করেন শিক্ষকরা। তারপর প্রধান শিক্ষক অনুমোদন দিলে দুধাপ পার হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসে। তখন আমরা যাচাই করে অনুমোদন দিয়ে জাতীয় স্তরে পাঠাই। কয়েক ধাপে এ নম্বরগুলো যাচাইবাছাই হয়। আগে একটা সময়ে এখানে বেশ কিছু অস্বচ্ছতার সুযোগ ছিল হয়তো। এখন আর সেসব নেই। ফলে আগের চেয়ে এখন ভাতা বিতরণ অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল সেবা ‘নগদ’-এ সেবাটা দিচ্ছে। আমার এ উপজেলায় আমি দেখছি, খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে উপবৃত্তি বিতরণ হচ্ছে। এখানে শিশুরা ভালোভাবে টাকা পাচ্ছে। নগদকে ধন্যবাদ। আশা করব, এভাবেই তারা দেশের শিক্ষার জন্য কাজ করে যাবে।

লেখক : উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মুন্সীগঞ্জ সদর

মোবাইলে প্রাথমিকের উপবৃত্তি

বদলে গেছে শিক্ষার চিত্র

 মোছা. নাছিমা খানম 
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে অভিভাবকদের অনাগ্রহের চিত্র তো আমাদের দেশে খুব পুরোনো নয়; মাত্র কয়েক বছর আগেও হরহামেশাই দেখেছি এ চিত্র। শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে গিয়ে এ চিত্রটা আরও বেশি করে চোখে পড়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে যে চিত্রটা এমন করে পালটে যাবে তখন সেটা ভাবতে পারিনি। এখন বাচ্চারা আনন্দ নিয়ে স্কুলে আসছে, আর এক সময়ের অনাগ্রহী বাবা-মায়েরাও এখন আগ্রহ নিয়ে তাদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিচ্ছেন। হঠাৎ ঝলকের মতো চিত্রকল্প এভাবে বদলে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় অনুসঙ্গ হিসাবে কাজ করেছে উপবৃত্তি।

তবে সরকার উপবৃত্তি দিতে শুরু করার পরও কিন্তু এক্ষেত্রে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছি আমরা। তালিকায় থাকা সুবিধাভোগীদের উপবৃত্তি পাওয়া, না পাওয়ার ইস্যু ছিল। তালিকাভুক্তি নিয়েও ছিল নানা কথা। কিন্তু সত্যিই দিন বদলে গেছে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য যেটি লাগে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা সেটি আসলে পরিচ্ছন্ন ডেটাবেজ তৈরি এবং স্বচ্ছভাবে উপবৃত্তিই নিশ্চিত করেছে।

এ জন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ পাওনা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শিক্ষার মান উন্নয়নে যে উপবৃত্তি তিনি চালু করেছেন, সেটা অসাধারণ একটা কাজ হয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে আমাদের প্রথম কাজ হলো, শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা। এরপর আমাদের কাজ হলো শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এরপর হলো পড়াশোনা।

আমাদের যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছেন, তাদের শিশুদের স্কুলে ভর্তি ও উপস্থিতিতে দারুণ প্রভাব পড়েছে। এ পরিবারগুলোতে এ অর্থ অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। এ শিশুদের স্কুলের পোশাক কেনা, উপকরণ কেনা, স্কুল ব্যাগ কেনা; এসবের খরচ হিসাবে পাচ্ছে টাকাটা। এতে পরিবারগুলো শিক্ষার প্রতি খুবই উৎসাহিত হচ্ছে। এতে বাচ্চারাও খুব আনন্দ পায়। তারা মনে করে, এটা তাদের নিজেদের টাকা। পরিবারগুলোতে উপবৃত্তি পাওয়ার ফলে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যাপারে খুব আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কারণ, স্কুলে তারা বাচ্চাদের পড়াচ্ছে, তাতে তো কোনো টাকা লাগছেই না। বই পাচ্ছে বিনামূল্যে। এখন আবার সরকার উলটো টাকা দিচ্ছে। এটা দারুণ একটা ব্যাপার। আগে যেসব পরিবার স্কুলে শিশুকে পাঠানোর ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিল, তারা এখন সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। অনেক পরিবারের বাচ্চারা প্রাইভেট স্কুল বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের পাঠাত। এখন তারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে বাচ্চাদের। এতে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে দরিদ্র পরিবারগুলোতে। যেসব অভিভাবক নিজেরা শিক্ষার সুযোগ পাননি, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না, তারা এখন শিশুকে কাজে না পাঠিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন। আমার কর্মক্ষেত্র মুন্সীগঞ্জের কথা বলি। এটা মূলত একটা শিল্প এলাকা। এখানে এ ছাড়া প্রচুর আলু চাষ হয়। ফলে বাইরে থেকে অনেক মানুষ আসে এখানে শ্রমিক ও কৃষক হিসাবে। এদের পরিবারগুলো থেকে আগে শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে কম আগ্রহ পেত। এখন আমরা জরিপ করে দেখতে পাই, এসব পরিবারের সব শিশু বিদ্যালয়ে আসছে। এর কারণ অবশ্যই উপবৃত্তি। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এ উপবৃত্তি বিতরণের জন্য তালিকা করি। আগে এটা ম্যানুয়ালি করা হতো। এখন পুরো ব্যাপারটা ডিজিটাল হয়েছে। আমরা শুরুতে শিক্ষার্থীর কিছু তথ্য সংগ্রহ করি। তার নাম, শ্রেণি, জন্ম নিবন্ধন নম্বর নিই। এ ছাড়া মায়ের বা বাবার বা কোনো বৈধ অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি গ্রহণ করি। এর সঙ্গে ওই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই নিবন্ধিত নগদ নম্বর নেওয়া হয়। এসব সংগ্রহের কাজ করেন শিক্ষকরা। তারপর প্রধান শিক্ষক অনুমোদন দিলে দুধাপ পার হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসে। তখন আমরা যাচাই করে অনুমোদন দিয়ে জাতীয় স্তরে পাঠাই। কয়েক ধাপে এ নম্বরগুলো যাচাইবাছাই হয়। আগে একটা সময়ে এখানে বেশ কিছু অস্বচ্ছতার সুযোগ ছিল হয়তো। এখন আর সেসব নেই। ফলে আগের চেয়ে এখন ভাতা বিতরণ অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল সেবা ‘নগদ’-এ সেবাটা দিচ্ছে। আমার এ উপজেলায় আমি দেখছি, খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে উপবৃত্তি বিতরণ হচ্ছে। এখানে শিশুরা ভালোভাবে টাকা পাচ্ছে। নগদকে ধন্যবাদ। আশা করব, এভাবেই তারা দেশের শিক্ষার জন্য কাজ করে যাবে।

লেখক : উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মুন্সীগঞ্জ সদর

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন