নারীর চোখে নারী
৮ মার্চ পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবস উপলক্ষ্যে নারীর চাওয়া-পাওয়া ও স্বাধীনতা নিয়ে কী ভাবছেন নারী শিক্ষার্থীরা? জানার চেষ্টা করেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ ও মারুফ হোসেন
উন্নয়নেই মিলবে মুক্তি
সমাজের উন্নয়নে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। তবুও সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীকে হতে হচ্ছে হেয়প্রতিপন্ন, নানা নির্যাতনের শিকার। সমাজে নারীর প্রতি সব বৈষম্য-অসম্মান দূর করতে প্রয়োজন নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়ন পুরুষের হাত ধরে নয়, প্রকৃত ক্ষমতা নিজেই গড়তে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। পরাধীনতার শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে নারীকে। নারীর কর্মসংস্থান ও সামাজিক অবস্থান ঠিক করতে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। একটি দেশের-সমাজের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। সম্মান-অধিকার রাষ্ট্রের কাছে নারীদের প্রাপ্য। এ সম্মান ও অধিকার অর্জিত হলেই নারীর মুক্তি মিলবে। তখন আর আলাদা করে দিবস পালন করতে হবে না।
সাফা আক্তার নোলক, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিটি মুহূর্ত হোক নিরাপদ
স্বাধীনতার এতদিন পরও নারীরা নিরাপদ নয়। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই দেখা যায় ধর্ষণ, খুন, নারীর প্রতি নানা সহিংসতার খবর। প্রায়ই শোনা যায় রাস্তাঘাটে এমনকি ক্যাম্পাসেও উত্ত্যক্ত হচ্ছে নারীরা। সবকিছু দেখেও আমাদের চুপ করে থাকাটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের মনুষত্ব ও বিবেকের জোরে নারীর প্রতি এমন অন্যায়কে প্রতিহত করতে হবে। কঠোর আইন প্রণয়ন করে প্রতিটি মুহূর্তে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যেন নারী হয় স্বাধীন। পায় চলার পূর্ণ স্বাধীনতা। নারীকে নারী হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার, সমাজ, প্রশাসন সবাইকে একযোগে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
মাহরুমা আক্তার শিফা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
নিরাপত্তায় চাই আইনের সঠিক প্রয়োগ
নারীর কাছে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি খুব আতঙ্কের। নিজগৃহ থেকে কর্মস্থল-সর্বত্র এ চূড়ান্ত বর্বরতার শিকার হয় নারী। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও সঠিক এবং সময়োপযোগী প্রয়োগ অনেক সময় দৃশ্যমান নয়। একটি মামলার ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আর ততদিনে এমন আরও অসংখ্য বর্বরতার ঘটনা ঘটে যায়। আইনের প্রয়োগ না হলে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষরূপী পশুরা পরে সিরিয়াল রেপিস্ট হয়ে ওঠে। নারীকে নিরাপদ রাখতে হলে আইনের সঠিক প্রয়োগের বিকল্প নেই। সে সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনকেও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতে হবে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বেশিরভাগ ভিকটিম আইনের আশ্রয় নিতে চায় না। পুলিশ প্রশাসন মামলা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে পাশে থাকলে নারী তার ন্যায্য বিচার পাবে।
দিলরুবা ইসলাম জিন্নাত, ইংরেজি বিভাগ, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা
প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে এগিয়ে যাক
নারী মানে হাজারও স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই করে যাওয়া এক টুকরো আত্মবিশ্বাস। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নারীর অবস্থান নিয়ে হাজারও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। যতটা অধিকার একজন নারীর প্রাপ্য, নারী ঠিক ততটুকু অধিকার ভোগ করতে পারছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। নিজের শখ, আহ্লাদ, ইচ্ছা বিসর্জন দেওয়া এই নারী কোনো না কোনোভাবে অবহেলার শিকার হয়। এক কথায় বলতে গেলে, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নারী এখনো অবহেলিত। নানা অন্যায়ের শিকার। এ অবহেলার দেয়াল ভেঙে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যাক নারী। তবেই মিলবে নারী দিবসের স্বার্থকতা। সভ্যতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিতে হাতে হাত রেখে পুরুষের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত নারীরা। এবং নারী তা করছেও। পুরুষের উচিত নারীকে নারী নয়, একজন সহকর্মী মনে করা।
ইসরাত জাহান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা নারী, আমরা পারি
নারীর অধিকার বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা বিশ্বে নতুন কিছু নয়। বেশি রাত করে বাসায় ফেরা যাবে না-কারণ আমরা মেয়ে! ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে পড়তে গেলে প্রতি বছর ফিল্ডে যেতে হয়, পাহাড়ে উঠতে হয়-মেয়েরা এসব করতে পারবে না। তাই মেয়েদের এ বিষয় নিয়ে পড়া শুধু বিলাসিতা! এমনটাই মনে করেন অনেকে। অথচ বর্তমানে ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েরাও এ বিষয়ে পড়াশোনা করছে। উঁচু উঁচু পাহাড় জয় করছে। নিশাত মজুমদারও একজন নারী। শুধু এক্ষেত্রে নয়, বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের বিচরণ পুরুষসম। পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম যোগ্য নয় নারী। আমরা নারীরা চাইলে সব করতে পারি। শুধু এ বিশ্বাসটুকু নিজেদের মাঝে স্থাপন করতে হবে আমাদের।
ফারহানা আফসার মৌরী, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
নারীর চোখে নারী
৮ মার্চ পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবস উপলক্ষ্যে নারীর চাওয়া-পাওয়া ও স্বাধীনতা নিয়ে কী ভাবছেন নারী শিক্ষার্থীরা? জানার চেষ্টা করেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ ও মারুফ হোসেন
উন্নয়নেই মিলবে মুক্তি
সমাজের উন্নয়নে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। তবুও সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীকে হতে হচ্ছে হেয়প্রতিপন্ন, নানা নির্যাতনের শিকার। সমাজে নারীর প্রতি সব বৈষম্য-অসম্মান দূর করতে প্রয়োজন নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়ন পুরুষের হাত ধরে নয়, প্রকৃত ক্ষমতা নিজেই গড়তে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। পরাধীনতার শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে নারীকে। নারীর কর্মসংস্থান ও সামাজিক অবস্থান ঠিক করতে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। একটি দেশের-সমাজের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। সম্মান-অধিকার রাষ্ট্রের কাছে নারীদের প্রাপ্য। এ সম্মান ও অধিকার অর্জিত হলেই নারীর মুক্তি মিলবে। তখন আর আলাদা করে দিবস পালন করতে হবে না।
সাফা আক্তার নোলক, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিটি মুহূর্ত হোক নিরাপদ
স্বাধীনতার এতদিন পরও নারীরা নিরাপদ নয়। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই দেখা যায় ধর্ষণ, খুন, নারীর প্রতি নানা সহিংসতার খবর। প্রায়ই শোনা যায় রাস্তাঘাটে এমনকি ক্যাম্পাসেও উত্ত্যক্ত হচ্ছে নারীরা। সবকিছু দেখেও আমাদের চুপ করে থাকাটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের মনুষত্ব ও বিবেকের জোরে নারীর প্রতি এমন অন্যায়কে প্রতিহত করতে হবে। কঠোর আইন প্রণয়ন করে প্রতিটি মুহূর্তে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যেন নারী হয় স্বাধীন। পায় চলার পূর্ণ স্বাধীনতা। নারীকে নারী হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার, সমাজ, প্রশাসন সবাইকে একযোগে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
মাহরুমা আক্তার শিফা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
নিরাপত্তায় চাই আইনের সঠিক প্রয়োগ
নারীর কাছে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি খুব আতঙ্কের। নিজগৃহ থেকে কর্মস্থল-সর্বত্র এ চূড়ান্ত বর্বরতার শিকার হয় নারী। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও সঠিক এবং সময়োপযোগী প্রয়োগ অনেক সময় দৃশ্যমান নয়। একটি মামলার ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আর ততদিনে এমন আরও অসংখ্য বর্বরতার ঘটনা ঘটে যায়। আইনের প্রয়োগ না হলে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষরূপী পশুরা পরে সিরিয়াল রেপিস্ট হয়ে ওঠে। নারীকে নিরাপদ রাখতে হলে আইনের সঠিক প্রয়োগের বিকল্প নেই। সে সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনকেও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতে হবে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বেশিরভাগ ভিকটিম আইনের আশ্রয় নিতে চায় না। পুলিশ প্রশাসন মামলা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে পাশে থাকলে নারী তার ন্যায্য বিচার পাবে।
দিলরুবা ইসলাম জিন্নাত, ইংরেজি বিভাগ, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা
প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে এগিয়ে যাক
নারী মানে হাজারও স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই করে যাওয়া এক টুকরো আত্মবিশ্বাস। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নারীর অবস্থান নিয়ে হাজারও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। যতটা অধিকার একজন নারীর প্রাপ্য, নারী ঠিক ততটুকু অধিকার ভোগ করতে পারছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। নিজের শখ, আহ্লাদ, ইচ্ছা বিসর্জন দেওয়া এই নারী কোনো না কোনোভাবে অবহেলার শিকার হয়। এক কথায় বলতে গেলে, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নারী এখনো অবহেলিত। নানা অন্যায়ের শিকার। এ অবহেলার দেয়াল ভেঙে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যাক নারী। তবেই মিলবে নারী দিবসের স্বার্থকতা। সভ্যতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিতে হাতে হাত রেখে পুরুষের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত নারীরা। এবং নারী তা করছেও। পুরুষের উচিত নারীকে নারী নয়, একজন সহকর্মী মনে করা।
ইসরাত জাহান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা নারী, আমরা পারি
নারীর অধিকার বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা বিশ্বে নতুন কিছু নয়। বেশি রাত করে বাসায় ফেরা যাবে না-কারণ আমরা মেয়ে! ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে পড়তে গেলে প্রতি বছর ফিল্ডে যেতে হয়, পাহাড়ে উঠতে হয়-মেয়েরা এসব করতে পারবে না। তাই মেয়েদের এ বিষয় নিয়ে পড়া শুধু বিলাসিতা! এমনটাই মনে করেন অনেকে। অথচ বর্তমানে ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েরাও এ বিষয়ে পড়াশোনা করছে। উঁচু উঁচু পাহাড় জয় করছে। নিশাত মজুমদারও একজন নারী। শুধু এক্ষেত্রে নয়, বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের বিচরণ পুরুষসম। পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম যোগ্য নয় নারী। আমরা নারীরা চাইলে সব করতে পারি। শুধু এ বিশ্বাসটুকু নিজেদের মাঝে স্থাপন করতে হবে আমাদের।
ফারহানা আফসার মৌরী, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়