মাকে নিয়ে আলোচিত গান
মাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গান। সেসব গানে মাকে নিয়ে থাকা বিভিন্ন রকম কথা শ্রোতাদের আপ্লুত করে। বারবার মাকে মনে করিয়ে দেয়। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দেয়।
শ্রোতানন্দিত গানগুলো সৃষ্টির পেছনের গল্প যেমন অতুলনীয় তেমনই হৃদয়ঘনিষ্ঠ। মাকে নিয়ে তেমনই কয়েকটি শ্রোতাপ্রিয় গান নিয়ে এ আয়োজন।
মায়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম : মাকে নিয়ে এ পর্যন্ত যত গান হয়েছে তার মধ্যে অত্যধিক আলোচিত ফকির আলমগীরের এ গানটি। ফকির আলমগীর তার মাকে নিয়ে ফরিদপুরে যাচ্ছেন। আরিচাঘাটে যাওয়ার পথে অন্ধ এক বাউলের সঙ্গে দেখা হয়। দোতারা বাজিয়ে দেহতত্ত্বের গান গাইছেন। গানটা শুনেই তার কানে লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ডার বের করে গানটা ধারণ করে নেন তিনি। পরে গানটি বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে নিজের মতো তৈরি করে কণ্ঠে ধারণ করেন। এটি ১৯৭৭ সালের কথা। নব্বইয়ের দশকে অজিত রায় বিটিভির জন্য গানটি আবার রেকর্ড করান।
মাগো মা, ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা : খুরশিদ আলমের গাওয়া প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা দিলীপ বিশ্বাসের ‘সমাধি’ ছবির গান এটি। এর গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পর্দায় এ গানে ঠোঁট মেলান নায়করাজ রাজ্জাক। গানটি প্রসঙ্গে খুরশিদ আলম বলেন, ‘এ গানের কথা ও সুর তৈরি হতে দুই-তিন দিন লেগে যায়। এরপর রেকর্ডিং হয় কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে। সাধারণত ছবি মুক্তি পাওয়ার পরই গান হিট হয়। কিন্তু সত্যদা যেন আগেই বুঝে গিয়েছিলেন, গানটি হিট হবে। তিনি আমাকে বললেন, যত দিন তুই বেঁচে থাকবি, ততদিন তোকে এই গানটা গাইতে হবে। আমি যেখানে গান গাইতে যাই, এ গানটি গাইতে হয়।’
মায়ের মতো আপন কেহ নাই রে : মাকে নিয়ে প্রকাশিত অন্যতম সেরা গানের মাঝে ‘মায়ের মতো আপন কেহ নাই রে’ অন্যতম। রুমানা ইসলামের গাওয়া এই গানটি লিখেছেন এবং সুর করেছিলেন খান আতাউর রহমান। ‘দিন যায় কথা থাকে’ অ্যালবামের এই গানটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। এ গানটি এখনও শ্রোতাদের মুখে মুখে শোনা যায়।
এমন একটা মা দে না : ১৯৭৪ সাল। ফেরদৌস ওয়াহিদ তখন কলেজে পড়েন। প্রয়াত শিল্পী ফিরোজ সাঁই ওয়াহিদকে একদিন ডেকে বললেন, একটা গান গাইতে হবে। গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন ডা. নাসির আহমেদ। গানটা শোনেন তিনি। খুবই পছন্দ হয়। ফিরোজ সাঁই বললেন, ‘গানটি তোমার গলায় খুব মানাবে। আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তুমি শুধু টাকা জোগাড় কর।’ গানটি রেকর্ড করতে মোট খরচ হবে ৩৩০ টাকা। এত টাকা ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে ছিল না। চার বন্ধুর সহযোগিতায় টাকা জোগাড় হয়। এরপর ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করেন শিল্পী। ১৯৭৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিটিভির বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানে গানটি প্রচার হয়। চারদিকে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। গানটির বয়স আজ প্রায় ৪০ বছর। এখনও গানটি অনেক জনপ্রিয়।
১০ মাস ১০ দিন ধরে গর্ভধারণ : ১৯৯৭ সালে প্রিন্স মাহমুদের মা মারা যান। চারদিকে কেবল মাকে খুঁজে বেড়াতেন তিনি। এ রকম একটা মানসিক কষ্টের ভেতরই ‘মা’ গানটি লিখেছেন তিনি। গানটি সুর করার পর অনেক ভেবে প্রিন্স ঠিক করলেন, জেমসকে দিয়ে গানটি গাওয়াবেন। জেমসের মাও বেঁচে নেই। ১৯৯৯ সালে ‘এখনও দুচোখে বন্যা’ মিশ্র অ্যালবামে গানটি প্রকাশ হয়। এরপর বাকিটা ইতিহাস। এটি জেমসের ক্যারিয়ারে অন্যতম একটি গান হয়ে জ্বলজ্বল করছে এখনও।
আম্মাজান : ‘আম্মাজান, আম্মাজান, চোখের মণি আম্মাজান, প্রাণের খনি আম্মাজান, বুকের ধ্বনি আম্মাজান’- ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’ ছবির গান এটি। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে ও আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে গাওয়া গান এটি। বাংলাদেশীয় সঙ্গীতে মা নিয়ে যত গান আছে তার মধ্যে অন্যতম সেরা গান এটি।
ওই আকাশের তারায় তারায় : ২০০৬ সালের রমজান মাস। ভোরবেলা সেহরি খেয়ে মাত্র বসেছে ইমন। এমন সময় গীতিকার আসিফ ইকবালের ফোন এল। কান্নাভেজা কণ্ঠ। ভয় পেয়ে গেল ইমন। কী হয়েছে- জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, ‘১৪ বছর আগে এই দিনে মাকে হারিয়েছি। আজ প্রথমবার আমি মাকে স্বপ্নে দেখেছি। খুব খারাপ লাগছে।’ ‘মাকে ভেবে চারটা লাইন লেখা শোনান ইমনকে। ইমন শুনেই বলে ওঠে- ভাই, আমি আপনার গানটা সুর করতে চাই। গানটা রাশেদকে দিয়ে গাওয়ান ইমন। তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার ওই রাউন্ডটি প্রচার হওয়ার পর এ গানটি দিয়েই বিখ্যাত হয়ে যান রাশেদ। মাকে নিয়ে আবেগী গানগুলোর মধ্যে এটির স্থানও শীর্ষে।
মাকে নিয়ে আরও বিখ্যাত গান রয়েছে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতাঙ্গনে। মুজিব পরদেশীর ‘আমি বন্দি কারাগারে মা, মনির খানের ‘কোন মাটিতে তৈরি রে তুই মা’ কিংবা ‘এই সেই ঘর’, আগুনের ‘একাত্তরের মা জননী’, এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া, ‘জন্ম দিয়েছো আমাকে ও মা তুমি প্রিয় মা’ পলাশের গাওয়া, ‘মা... তুমি আমার আগে যেও না গো মরে’, আমিরুল মোমেনীন মানিকের ‘মা যে দশ মাস দশ দিন’, কুমার বিশ্বজিতের ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত আঁধার কালো’ গানগুলো এখনও মানুষের কণ্ঠে মুখরিত হয়।
মাকে নিয়ে আলোচিত গান
হাসান সাইদুল
০৯ মে ২০১৯, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গান। সেসব গানে মাকে নিয়ে থাকা বিভিন্ন রকম কথা শ্রোতাদের আপ্লুত করে। বারবার মাকে মনে করিয়ে দেয়। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দেয়।
শ্রোতানন্দিত গানগুলো সৃষ্টির পেছনের গল্প যেমন অতুলনীয় তেমনই হৃদয়ঘনিষ্ঠ। মাকে নিয়ে তেমনই কয়েকটি শ্রোতাপ্রিয় গান নিয়ে এ আয়োজন।
মায়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম : মাকে নিয়ে এ পর্যন্ত যত গান হয়েছে তার মধ্যে অত্যধিক আলোচিত ফকির আলমগীরের এ গানটি। ফকির আলমগীর তার মাকে নিয়ে ফরিদপুরে যাচ্ছেন। আরিচাঘাটে যাওয়ার পথে অন্ধ এক বাউলের সঙ্গে দেখা হয়। দোতারা বাজিয়ে দেহতত্ত্বের গান গাইছেন। গানটা শুনেই তার কানে লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ডার বের করে গানটা ধারণ করে নেন তিনি। পরে গানটি বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে নিজের মতো তৈরি করে কণ্ঠে ধারণ করেন। এটি ১৯৭৭ সালের কথা। নব্বইয়ের দশকে অজিত রায় বিটিভির জন্য গানটি আবার রেকর্ড করান।
মাগো মা, ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা : খুরশিদ আলমের গাওয়া প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা দিলীপ বিশ্বাসের ‘সমাধি’ ছবির গান এটি। এর গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পর্দায় এ গানে ঠোঁট মেলান নায়করাজ রাজ্জাক। গানটি প্রসঙ্গে খুরশিদ আলম বলেন, ‘এ গানের কথা ও সুর তৈরি হতে দুই-তিন দিন লেগে যায়। এরপর রেকর্ডিং হয় কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে। সাধারণত ছবি মুক্তি পাওয়ার পরই গান হিট হয়। কিন্তু সত্যদা যেন আগেই বুঝে গিয়েছিলেন, গানটি হিট হবে। তিনি আমাকে বললেন, যত দিন তুই বেঁচে থাকবি, ততদিন তোকে এই গানটা গাইতে হবে। আমি যেখানে গান গাইতে যাই, এ গানটি গাইতে হয়।’
মায়ের মতো আপন কেহ নাই রে : মাকে নিয়ে প্রকাশিত অন্যতম সেরা গানের মাঝে ‘মায়ের মতো আপন কেহ নাই রে’ অন্যতম। রুমানা ইসলামের গাওয়া এই গানটি লিখেছেন এবং সুর করেছিলেন খান আতাউর রহমান। ‘দিন যায় কথা থাকে’ অ্যালবামের এই গানটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। এ গানটি এখনও শ্রোতাদের মুখে মুখে শোনা যায়।
এমন একটা মা দে না : ১৯৭৪ সাল। ফেরদৌস ওয়াহিদ তখন কলেজে পড়েন। প্রয়াত শিল্পী ফিরোজ সাঁই ওয়াহিদকে একদিন ডেকে বললেন, একটা গান গাইতে হবে। গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন ডা. নাসির আহমেদ। গানটা শোনেন তিনি। খুবই পছন্দ হয়। ফিরোজ সাঁই বললেন, ‘গানটি তোমার গলায় খুব মানাবে। আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তুমি শুধু টাকা জোগাড় কর।’ গানটি রেকর্ড করতে মোট খরচ হবে ৩৩০ টাকা। এত টাকা ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে ছিল না। চার বন্ধুর সহযোগিতায় টাকা জোগাড় হয়। এরপর ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করেন শিল্পী। ১৯৭৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিটিভির বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানে গানটি প্রচার হয়। চারদিকে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। গানটির বয়স আজ প্রায় ৪০ বছর। এখনও গানটি অনেক জনপ্রিয়।
১০ মাস ১০ দিন ধরে গর্ভধারণ : ১৯৯৭ সালে প্রিন্স মাহমুদের মা মারা যান। চারদিকে কেবল মাকে খুঁজে বেড়াতেন তিনি। এ রকম একটা মানসিক কষ্টের ভেতরই ‘মা’ গানটি লিখেছেন তিনি। গানটি সুর করার পর অনেক ভেবে প্রিন্স ঠিক করলেন, জেমসকে দিয়ে গানটি গাওয়াবেন। জেমসের মাও বেঁচে নেই। ১৯৯৯ সালে ‘এখনও দুচোখে বন্যা’ মিশ্র অ্যালবামে গানটি প্রকাশ হয়। এরপর বাকিটা ইতিহাস। এটি জেমসের ক্যারিয়ারে অন্যতম একটি গান হয়ে জ্বলজ্বল করছে এখনও।
আম্মাজান : ‘আম্মাজান, আম্মাজান, চোখের মণি আম্মাজান, প্রাণের খনি আম্মাজান, বুকের ধ্বনি আম্মাজান’- ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’ ছবির গান এটি। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে ও আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে গাওয়া গান এটি। বাংলাদেশীয় সঙ্গীতে মা নিয়ে যত গান আছে তার মধ্যে অন্যতম সেরা গান এটি।
ওই আকাশের তারায় তারায় : ২০০৬ সালের রমজান মাস। ভোরবেলা সেহরি খেয়ে মাত্র বসেছে ইমন। এমন সময় গীতিকার আসিফ ইকবালের ফোন এল। কান্নাভেজা কণ্ঠ। ভয় পেয়ে গেল ইমন। কী হয়েছে- জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, ‘১৪ বছর আগে এই দিনে মাকে হারিয়েছি। আজ প্রথমবার আমি মাকে স্বপ্নে দেখেছি। খুব খারাপ লাগছে।’ ‘মাকে ভেবে চারটা লাইন লেখা শোনান ইমনকে। ইমন শুনেই বলে ওঠে- ভাই, আমি আপনার গানটা সুর করতে চাই। গানটা রাশেদকে দিয়ে গাওয়ান ইমন। তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার ওই রাউন্ডটি প্রচার হওয়ার পর এ গানটি দিয়েই বিখ্যাত হয়ে যান রাশেদ। মাকে নিয়ে আবেগী গানগুলোর মধ্যে এটির স্থানও শীর্ষে।
মাকে নিয়ে আরও বিখ্যাত গান রয়েছে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতাঙ্গনে। মুজিব পরদেশীর ‘আমি বন্দি কারাগারে মা, মনির খানের ‘কোন মাটিতে তৈরি রে তুই মা’ কিংবা ‘এই সেই ঘর’, আগুনের ‘একাত্তরের মা জননী’, এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া, ‘জন্ম দিয়েছো আমাকে ও মা তুমি প্রিয় মা’ পলাশের গাওয়া, ‘মা... তুমি আমার আগে যেও না গো মরে’, আমিরুল মোমেনীন মানিকের ‘মা যে দশ মাস দশ দিন’, কুমার বিশ্বজিতের ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত আঁধার কালো’ গানগুলো এখনও মানুষের কণ্ঠে মুখরিত হয়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023