সিলেটে আদালত প্রাঙ্গণে লিয়াকত বাহিনীর তাণ্ডব
jugantor
উদ্বিগ্ন আইনজীবী ও সচেতন মহল
সিলেটে আদালত প্রাঙ্গণে লিয়াকত বাহিনীর তাণ্ডব
দুই সাংবাদিক আহত * অল্পে রক্ষা পান হত্যা মামলার বাদী * সাংবাদিকদের প্রতিবাদ

  সিলেট ব্যুরো  

২৬ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে এসে আদালত প্রাঙ্গণে তাণ্ডব চালাল সিলেটের ত্রাস আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে গুরুতর আহত হন যমুনা টেলিভিশন সিলেট ব্যুরোর ভিডিও জার্নালিস্ট নিরানন্দ পাল ও যুগান্তরের ফটো সাংবাদিক মামুন হাসান। হায়েনাদের হাত থেকে অল্পে রক্ষা পান খোদ হোসেন আহমদ হত্যা মামলার বাদী। পাথরখেকো লিয়াকত আলী বাহিনীর হামলার মুখে তিনি দৌড়ে তার আইনজীবীর চেম্বারে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য়-এর বিচারক আতিকুল হায়দারের আদালতে প্রবাসী হোসেন আহমদ হত্যা মামলার আসামি লিয়াকতসহ তার বাহিনীর ৭৭ আসামির মধ্যে ৩১ জন হাজির হন। এর মধ্যে আদালত একজন ছাড়া বাকি ৩০ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা আদালত প্রাঙ্গণে গেলে লিয়াকত বাহিনীর ক্যাডাররা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটানো হয়। ভাংচুর করা হয় সাংবাদিকদের ক্যামেরা। এতে গুরুতর আহত হন সাংবাদিক নিরানন্দ পাল ও মামুন হাসান। পরে তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিরানন্দের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাকে ৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ক্যামেরার ভাঙা টুকরা আদালত প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে।

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. মাইনুল জাকির জানান, মামলার ৭৭ আসামির মধ্যে লিয়াকত আলীসহ ৩৫ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়, পরে আরও ২৮ জন জামিন নেয়। বৃহস্পতিবার ৩১ জন আসামি আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করলে আদালত ফয়েজ আহমদ বাবর ছাড়া বাকি আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের সহকারী কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান জানান, শ্রীপুর পাথর কোয়ারিতে সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় আদালত ৩০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

সিলেটের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেনি, কেন এমন ঘটল। ঘটনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, জেলা বারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হোসেন হত্যা মামলার বাদী আমিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করায় ওরা আমাকে আগেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতেই আমার ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। আদালত থেকে বের হওয়ার পরই আমাকে ঝাপটে ধরার চেষ্টা করে লিয়াকত বাহিনীর অনুসারীরা। কৌশলে আমি দ্রুত সটকে পড়ে রক্ষা পাই। এ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করার সময়ই ওরা সাংবাদিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে আমার আইনজীবীর চেম্বারে আশ্রয় নেই।

বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএসএম আবদুল গফুর যুগান্তরকে বলেন, মামলার বাদী আমার চেম্বারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কোর্ট ইন্সপেক্টরকে অবগত করা হয়েছে। তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল কুদ্দুছ যুগান্তরকে বলেন, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আমরা দেখছি। এরই মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল হতে বলা হয়েছে।

জেলা বার সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন যুগান্তরকে বলেন, আমার জানামতে এমন ঘটনা এ প্রথম। সিলেটে এজলাসের দ্বারপ্রান্তে এমন ঘটনায় আমি চরম উদ্বিগ্ন। জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ হতে পারে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতরা মোটেও এর দায় এড়াতে পারেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) আহ্বায়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে- সাধারণ নাগরিক, সাংবাদিক, বাদী, সাক্ষীরা নিরাপদ নন। আমি উদ্বিগ্ন খোদ বিচারকদের নিরাপত্তা নিয়ে। এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতি জোরালো ভূমিকা নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের আলটিমেটাম : পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আদালত প্রাঙ্গণে যমুনা টেলিভিশনের সিলেট অফিসের স্টাফ ক্যামেরাপারসন ও ইমজার নির্বাহী সদস্য নিরানন্দ পাল এবং যুগান্তরের সিলেট ব্যুরোর স্টাফ ফটোগ্রাফার মামুন হাসানের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা ও ক্যামেরা ভাংচুরের ঘটনায় জরুরি সভা করেছে ইলেকট্রুনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা)। বৃহস্পতিবার জিন্দাবাজারের ইমজার কার্যালয়ে সভায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। হামলার জন্য জৈন্তাপুর উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ও যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমদ বাবর এবং তার সহযোগীদের দায়ী করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় বক্তারা আদালত প্রাঙ্গণে দুর্বৃত্তদের হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দাবি জানান। এছাড়া এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইমজা সভাপতি আল আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মনজুর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন ইমজার সাবেক সভাপতি মঈনুল হক বুলবুল, বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, বর্তমান সহ-সভাপতি শামসুল ইসলাম শামীম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন শিহাব, সা লিটন চৌধুরী, আনিস রহমান, আবদুল আলীম শাহ, সজল ছত্রী, ইমজা সদস্য এস আলম আলমগীর, আশরাফুল কবীর, শ্যামানন্দ দাশ, গোপাল বর্ধন, মারুফ আহমদ, শামীম হোসাইন, শফি আহমদ, মুজিবুর রহমান ডালিম, মোয়াজ্জেম সাজু, দেবাশীষ দেবু, প্রত্যুষ তালুকদার, এএ চৌধুরী শিপার, দীপক বৈদ্য, বদরুর রহমান বাবর, শাহীন আহমদ, আহমাদ সেলিম, অনিল পাল, শাহ দিদার আলম নবেল, দ্বিগেন সিংহ, রুহিন আহমদ, মাইদুল ইসলাম রাসেল, এস সুটন সিংহ, দেবাশীষ দাশ, হাসান শিকদার সেলিম, কমলজিৎ শাওন, ইমজার সহযোগী সদস্য ও জেলা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক এস সুটন সিংহ ও সহযোগী সদস্য শেখ নাসিরসহ আরও অনেকে।

হামলার নিন্দা : সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সিলেটের দুটি প্রেস ক্লাবের নেতারা। বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম নবেল, সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ। বিবৃতিতে তারা বলেন, আদালত চত্বরে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর নির্দেশে তার অনুসারী সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ওপর যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা প্রমাণ করেছে, পেশিশক্তি দিয়ে তারা গণমাধ্যমকে দাবিয়ে রাখতে চায়। নেতারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

গোলাপগঞ্জ সাংবাদিকদের নিন্দা ও প্রতিবাদ : গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সাংবাদিক মামুন হাসান এবং নিরানন্দ পালের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটের গোলাপগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা। ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন গোলাপগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি আবদুুল আহাদ, গোলাপগঞ্জ অনলাইন প্রেস ক্লাব সভাপতি এম আবদুল জলিল, রিপোর্টার ইউনিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি হারিছ আলী, গোলাপগঞ্জ সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম, অনলাইন প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি জাহিদ উদ্দিন, রিপোর্টার ইউনিটির প্রচার সম্পাদক খালেদ হোসেন, সাংবাদিক আবদুল আজিজ, রুবেল আহমদ ও ফাহাদ আহমদ। তারা বলেন, এ ধরনের হামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

উদ্বিগ্ন আইনজীবী ও সচেতন মহল

সিলেটে আদালত প্রাঙ্গণে লিয়াকত বাহিনীর তাণ্ডব

দুই সাংবাদিক আহত * অল্পে রক্ষা পান হত্যা মামলার বাদী * সাংবাদিকদের প্রতিবাদ
 সিলেট ব্যুরো 
২৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে এসে আদালত প্রাঙ্গণে তাণ্ডব চালাল সিলেটের ত্রাস আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে গুরুতর আহত হন যমুনা টেলিভিশন সিলেট ব্যুরোর ভিডিও জার্নালিস্ট নিরানন্দ পাল ও যুগান্তরের ফটো সাংবাদিক মামুন হাসান। হায়েনাদের হাত থেকে অল্পে রক্ষা পান খোদ হোসেন আহমদ হত্যা মামলার বাদী। পাথরখেকো লিয়াকত আলী বাহিনীর হামলার মুখে তিনি দৌড়ে তার আইনজীবীর চেম্বারে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য়-এর বিচারক আতিকুল হায়দারের আদালতে প্রবাসী হোসেন আহমদ হত্যা মামলার আসামি লিয়াকতসহ তার বাহিনীর ৭৭ আসামির মধ্যে ৩১ জন হাজির হন। এর মধ্যে আদালত একজন ছাড়া বাকি ৩০ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা আদালত প্রাঙ্গণে গেলে লিয়াকত বাহিনীর ক্যাডাররা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটানো হয়। ভাংচুর করা হয় সাংবাদিকদের ক্যামেরা। এতে গুরুতর আহত হন সাংবাদিক নিরানন্দ পাল ও মামুন হাসান। পরে তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিরানন্দের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাকে ৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ক্যামেরার ভাঙা টুকরা আদালত প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে।

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. মাইনুল জাকির জানান, মামলার ৭৭ আসামির মধ্যে লিয়াকত আলীসহ ৩৫ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়, পরে আরও ২৮ জন জামিন নেয়। বৃহস্পতিবার ৩১ জন আসামি আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করলে আদালত ফয়েজ আহমদ বাবর ছাড়া বাকি আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের সহকারী কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান জানান, শ্রীপুর পাথর কোয়ারিতে সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় আদালত ৩০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

সিলেটের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেনি, কেন এমন ঘটল। ঘটনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, জেলা বারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হোসেন হত্যা মামলার বাদী আমিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করায় ওরা আমাকে আগেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতেই আমার ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। আদালত থেকে বের হওয়ার পরই আমাকে ঝাপটে ধরার চেষ্টা করে লিয়াকত বাহিনীর অনুসারীরা। কৌশলে আমি দ্রুত সটকে পড়ে রক্ষা পাই। এ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করার সময়ই ওরা সাংবাদিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে আমার আইনজীবীর চেম্বারে আশ্রয় নেই।

বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএসএম আবদুল গফুর যুগান্তরকে বলেন, মামলার বাদী আমার চেম্বারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কোর্ট ইন্সপেক্টরকে অবগত করা হয়েছে। তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল কুদ্দুছ যুগান্তরকে বলেন, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আমরা দেখছি। এরই মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল হতে বলা হয়েছে।

জেলা বার সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন যুগান্তরকে বলেন, আমার জানামতে এমন ঘটনা এ প্রথম। সিলেটে এজলাসের দ্বারপ্রান্তে এমন ঘটনায় আমি চরম উদ্বিগ্ন। জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ হতে পারে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতরা মোটেও এর দায় এড়াতে পারেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) আহ্বায়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে- সাধারণ নাগরিক, সাংবাদিক, বাদী, সাক্ষীরা নিরাপদ নন। আমি উদ্বিগ্ন খোদ বিচারকদের নিরাপত্তা নিয়ে। এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতি জোরালো ভূমিকা নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের আলটিমেটাম : পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আদালত প্রাঙ্গণে যমুনা টেলিভিশনের সিলেট অফিসের স্টাফ ক্যামেরাপারসন ও ইমজার নির্বাহী সদস্য নিরানন্দ পাল এবং যুগান্তরের সিলেট ব্যুরোর স্টাফ ফটোগ্রাফার মামুন হাসানের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা ও ক্যামেরা ভাংচুরের ঘটনায় জরুরি সভা করেছে ইলেকট্রুনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা)। বৃহস্পতিবার জিন্দাবাজারের ইমজার কার্যালয়ে সভায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। হামলার জন্য জৈন্তাপুর উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ও যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমদ বাবর এবং তার সহযোগীদের দায়ী করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় বক্তারা আদালত প্রাঙ্গণে দুর্বৃত্তদের হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দাবি জানান। এছাড়া এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইমজা সভাপতি আল আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মনজুর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন ইমজার সাবেক সভাপতি মঈনুল হক বুলবুল, বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, বর্তমান সহ-সভাপতি শামসুল ইসলাম শামীম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন শিহাব, সা লিটন চৌধুরী, আনিস রহমান, আবদুল আলীম শাহ, সজল ছত্রী, ইমজা সদস্য এস আলম আলমগীর, আশরাফুল কবীর, শ্যামানন্দ দাশ, গোপাল বর্ধন, মারুফ আহমদ, শামীম হোসাইন, শফি আহমদ, মুজিবুর রহমান ডালিম, মোয়াজ্জেম সাজু, দেবাশীষ দেবু, প্রত্যুষ তালুকদার, এএ চৌধুরী শিপার, দীপক বৈদ্য, বদরুর রহমান বাবর, শাহীন আহমদ, আহমাদ সেলিম, অনিল পাল, শাহ দিদার আলম নবেল, দ্বিগেন সিংহ, রুহিন আহমদ, মাইদুল ইসলাম রাসেল, এস সুটন সিংহ, দেবাশীষ দাশ, হাসান শিকদার সেলিম, কমলজিৎ শাওন, ইমজার সহযোগী সদস্য ও জেলা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক এস সুটন সিংহ ও সহযোগী সদস্য শেখ নাসিরসহ আরও অনেকে।

হামলার নিন্দা : সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সিলেটের দুটি প্রেস ক্লাবের নেতারা। বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম নবেল, সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ। বিবৃতিতে তারা বলেন, আদালত চত্বরে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর নির্দেশে তার অনুসারী সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ওপর যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা প্রমাণ করেছে, পেশিশক্তি দিয়ে তারা গণমাধ্যমকে দাবিয়ে রাখতে চায়। নেতারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

গোলাপগঞ্জ সাংবাদিকদের নিন্দা ও প্রতিবাদ : গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সাংবাদিক মামুন হাসান এবং নিরানন্দ পালের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটের গোলাপগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা। ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন গোলাপগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি আবদুুল আহাদ, গোলাপগঞ্জ অনলাইন প্রেস ক্লাব সভাপতি এম আবদুল জলিল, রিপোর্টার ইউনিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি হারিছ আলী, গোলাপগঞ্জ সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম, অনলাইন প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি জাহিদ উদ্দিন, রিপোর্টার ইউনিটির প্রচার সম্পাদক খালেদ হোসেন, সাংবাদিক আবদুল আজিজ, রুবেল আহমদ ও ফাহাদ আহমদ। তারা বলেন, এ ধরনের হামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন