ঈর্ষণীয় সফল মানুষ
আমাদের কালের ঈর্ষণীয়ভাবে সফল একজন মানুষ আলী যাকের। বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে তার অবদান যেমন অপরিসীম, তেমনি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের যে নবপর্যায়ের সংগ্রাম সেখানে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি এমন সব চরিত্র নির্মাণ করেছেন বাংলা মঞ্চের জন্য সেটি কিন্তু আজকে বসে ভাবাও আমাদের জন্য খুব কঠিন।
আমরা যদি গ্যালিলিওর দিকে তাকাই, আমরা যদি নূরুলদিনের সারাজীবনের কথা বলি, তাহলে দেখব এই চরিত্রগুলো মঞ্চে তার মধ্য দিয়ে তার অভিনয়ের কারণে ভাস্বর হয়েছে বাংলা মঞ্চে এবং ছড়িয়ে গেছে সমাজের বিভিন্ন জায়গায়। সেটি কিন্তু আলী যাকেরের মতো একজন অসাধারণ অভিনেতার পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।
নির্দেশক হিসেবেও তিনি সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। তার পরিচালিত নাটকগুলো দর্শকপ্রিয় হয়েছিল ব্যাপকভাবে। আর সামাজিক এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে তিনি যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন সেটি তার একার ব্যক্তিগত অর্জন নয়। তার অর্জনটি সমষ্টির ছিল। এটি তিনি বিশ্বাস করতেন বলেই সেটি ঘটেছে। যেমন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি তার একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন ১৯৭১ সালে।
শব্দসৈনিক হিসেবে তিনি ইংরেজি সংবাদ পাঠ করতেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। এছাড়া আমাদের শরণার্থীরা ছিল তাদের ওখানে গিয়ে হাসান ইমামসহ তারা নানারকম অনুষ্ঠান করেছেন। সেই আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধোত্তরকালে এক দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং সে সংগ্রাম এখন পর্যন্ত জারি আছে। তিনি যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করতেন ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মানুষের সমঅধিকার এবং গণতন্ত্র সে লড়াই এখনও জারি আছে এবং আলী যাকের জীবনের শেষদিন এবং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সেই আদর্শে অবিচল ছিলেন।
এটি খুব কঠিন কাজ। দীর্ঘ সময় ধরে নিজ আদর্শে বিশ্বাসের প্রতি অবিচল থাকা, এটি কিন্তু সহজ কাজ নয়। এই কাজটি আলী যাকের করে দেখিয়েছেন। এটি একটি আদর্শ সৃষ্টিকারী কাজ বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি আমরা যদি দেখি মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনার জায়গায় মৌলবাদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তিনি একজন সমাজকর্মী সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আশির দশকের সেই উত্তাল দিনগুলোতে, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে, বিরানব্বইয়ের গণআদালতে, ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবং সর্বোপরি আমাদের গণজাগরণ মঞ্চসহ প্রতিটি জায়গায় আলী যাকেরের উপস্থিতি সরব ছিল। তিনি উপস্থিত ছিলেন শারীরিকভাবে এবং তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি সফল মানুষও বটে। তার স্ত্রী একজন স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী। তার কন্যা এবং পুত্র দু’জনই মিডিয়াতে অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী। আমি মনে করি ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে এবং একজন শিল্পী হিসেবে সর্বোপরি তিনি যে সাফল্য পেয়েছেন তা ঈর্ষণীয়। আমি মনে করি ঈর্ষণীয় নয় সেটি আদর্শও বটে। নতুন প্রজন্ম তার এ জীবন ঝুরি থেকে নিশ্চিতভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামী দিনে তারা পথ চলবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ঈর্ষণীয় সফল মানুষ
আমাদের কালের ঈর্ষণীয়ভাবে সফল একজন মানুষ আলী যাকের। বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে তার অবদান যেমন অপরিসীম, তেমনি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের যে নবপর্যায়ের সংগ্রাম সেখানে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি এমন সব চরিত্র নির্মাণ করেছেন বাংলা মঞ্চের জন্য সেটি কিন্তু আজকে বসে ভাবাও আমাদের জন্য খুব কঠিন।
আমরা যদি গ্যালিলিওর দিকে তাকাই, আমরা যদি নূরুলদিনের সারাজীবনের কথা বলি, তাহলে দেখব এই চরিত্রগুলো মঞ্চে তার মধ্য দিয়ে তার অভিনয়ের কারণে ভাস্বর হয়েছে বাংলা মঞ্চে এবং ছড়িয়ে গেছে সমাজের বিভিন্ন জায়গায়। সেটি কিন্তু আলী যাকেরের মতো একজন অসাধারণ অভিনেতার পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।
নির্দেশক হিসেবেও তিনি সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। তার পরিচালিত নাটকগুলো দর্শকপ্রিয় হয়েছিল ব্যাপকভাবে। আর সামাজিক এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে তিনি যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন সেটি তার একার ব্যক্তিগত অর্জন নয়। তার অর্জনটি সমষ্টির ছিল। এটি তিনি বিশ্বাস করতেন বলেই সেটি ঘটেছে। যেমন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি তার একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন ১৯৭১ সালে।
শব্দসৈনিক হিসেবে তিনি ইংরেজি সংবাদ পাঠ করতেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। এছাড়া আমাদের শরণার্থীরা ছিল তাদের ওখানে গিয়ে হাসান ইমামসহ তারা নানারকম অনুষ্ঠান করেছেন। সেই আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধোত্তরকালে এক দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং সে সংগ্রাম এখন পর্যন্ত জারি আছে। তিনি যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করতেন ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মানুষের সমঅধিকার এবং গণতন্ত্র সে লড়াই এখনও জারি আছে এবং আলী যাকের জীবনের শেষদিন এবং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সেই আদর্শে অবিচল ছিলেন।
এটি খুব কঠিন কাজ। দীর্ঘ সময় ধরে নিজ আদর্শে বিশ্বাসের প্রতি অবিচল থাকা, এটি কিন্তু সহজ কাজ নয়। এই কাজটি আলী যাকের করে দেখিয়েছেন। এটি একটি আদর্শ সৃষ্টিকারী কাজ বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি আমরা যদি দেখি মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনার জায়গায় মৌলবাদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তিনি একজন সমাজকর্মী সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আশির দশকের সেই উত্তাল দিনগুলোতে, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে, বিরানব্বইয়ের গণআদালতে, ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবং সর্বোপরি আমাদের গণজাগরণ মঞ্চসহ প্রতিটি জায়গায় আলী যাকেরের উপস্থিতি সরব ছিল। তিনি উপস্থিত ছিলেন শারীরিকভাবে এবং তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি সফল মানুষও বটে। তার স্ত্রী একজন স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী। তার কন্যা এবং পুত্র দু’জনই মিডিয়াতে অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী। আমি মনে করি ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে এবং একজন শিল্পী হিসেবে সর্বোপরি তিনি যে সাফল্য পেয়েছেন তা ঈর্ষণীয়। আমি মনে করি ঈর্ষণীয় নয় সেটি আদর্শও বটে। নতুন প্রজন্ম তার এ জীবন ঝুরি থেকে নিশ্চিতভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামী দিনে তারা পথ চলবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।