সিইসি ও মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য: বিশিষ্টজনদের প্রশ্ন কার কথা সত্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৪ মার্চ ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নির্বাচনি অনিয়ম নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশের দুই বিশিষ্ট নাগরিক মনে করেন, এতে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থার সংকট আরও বেড়েছে।
তাদের মধ্যে দুজন প্রশ্ন রেখে বলেন, কার বক্তব্য সত্য। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের সত্য বাস্তব কথাগুলো অস্বীকার করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। তিনি যেমন কাজ করছেন, তেমনি মন্তব্য করেছেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন বিশ্লেষক ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে সিইসি এভাবে বক্তব্য না দিলেও পারতেন। এ রকম হওয়া উচিত নয়।
মঙ্গলবার জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের রেশ ধরে সিইসি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে তিনি কাজ করেন না। ব্যক্তিস্বার্থে ও কোনো একটা উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য এবং এ কমিশনকে অপদস্থ করতে যখন যতটুকু করা দরকার, ততটুকু করেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, ইসিকে কতখানি হেয় করা যায়, কতখানি নিচে নামানো যায়, কতখানি অপদস্থ করা যায়- তা তিনি (মাহবুব তালুকদার) করেই চলেছেন। সিইসির এ বক্তব্যের আগে মাহবুব তালুকদার নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোর গতি-প্রকৃতি দেখে আমার ধারণা হচ্ছে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনের যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও ভারসাম্য রক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা হচ্ছে না। এ সময় তিনি নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোটের হার নিয়েও কথা বলেন। এরপরই সিইসি তার বক্তব্য দেন।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচনে প্রকাশ্যে অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। সহিংসতা হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে। এসব ঘটনায় কমিশন তেমন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনার পদে থেকে মাহবুব তালুকদার সেই ঘটনার কিছুটা উল্লেখ করেছেন। বাস্তব কথা বলেছেন। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সেই সত্য ও বাস্তব কথাগুলো অস্বীকার করলেন। তিনি যেমন কাজ করছেন, তেমনি মন্তব্য করেছেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিইসি ও মাহবুব তালুকদারের দুই ধরনের বক্তব্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি। দুজনের দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো। মাহবুব তালুকদার যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার সত্যতা ভোটাররা ভালো জানেন। তবে নির্বাচন ভালো হচ্ছে তা ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচনে দেখা গেছে। পৌরসভা নির্বাচনে গোলাগুলির ঘটনায় কয়েকজন মারা গেলেও কমিশন থেকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। মানুষ ভোট দিতে যান না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে সেখানে ইসির নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এসব কারণে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। এর মধ্যে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এমন পরিস্থিতিতে একটি উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে সিইসি এভাবে বক্তব্য না রাখলেও পারতেন, অন্যভাবেও বলতে পারতেন। কিন্তু একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে যে ঘটনা ঘটল তাতে ইসির ওপর মানুষের আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হলো।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সিইসি ও মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য: বিশিষ্টজনদের প্রশ্ন কার কথা সত্য
নির্বাচনি অনিয়ম নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশের দুই বিশিষ্ট নাগরিক মনে করেন, এতে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থার সংকট আরও বেড়েছে।
তাদের মধ্যে দুজন প্রশ্ন রেখে বলেন, কার বক্তব্য সত্য। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের সত্য বাস্তব কথাগুলো অস্বীকার করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। তিনি যেমন কাজ করছেন, তেমনি মন্তব্য করেছেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন বিশ্লেষক ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে সিইসি এভাবে বক্তব্য না দিলেও পারতেন। এ রকম হওয়া উচিত নয়।
মঙ্গলবার জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের রেশ ধরে সিইসি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে তিনি কাজ করেন না। ব্যক্তিস্বার্থে ও কোনো একটা উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য এবং এ কমিশনকে অপদস্থ করতে যখন যতটুকু করা দরকার, ততটুকু করেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, ইসিকে কতখানি হেয় করা যায়, কতখানি নিচে নামানো যায়, কতখানি অপদস্থ করা যায়- তা তিনি (মাহবুব তালুকদার) করেই চলেছেন। সিইসির এ বক্তব্যের আগে মাহবুব তালুকদার নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোর গতি-প্রকৃতি দেখে আমার ধারণা হচ্ছে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনের যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও ভারসাম্য রক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা হচ্ছে না। এ সময় তিনি নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোটের হার নিয়েও কথা বলেন। এরপরই সিইসি তার বক্তব্য দেন।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচনে প্রকাশ্যে অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। সহিংসতা হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে। এসব ঘটনায় কমিশন তেমন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনার পদে থেকে মাহবুব তালুকদার সেই ঘটনার কিছুটা উল্লেখ করেছেন। বাস্তব কথা বলেছেন। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সেই সত্য ও বাস্তব কথাগুলো অস্বীকার করলেন। তিনি যেমন কাজ করছেন, তেমনি মন্তব্য করেছেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিইসি ও মাহবুব তালুকদারের দুই ধরনের বক্তব্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি। দুজনের দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো। মাহবুব তালুকদার যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার সত্যতা ভোটাররা ভালো জানেন। তবে নির্বাচন ভালো হচ্ছে তা ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচনে দেখা গেছে। পৌরসভা নির্বাচনে গোলাগুলির ঘটনায় কয়েকজন মারা গেলেও কমিশন থেকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। মানুষ ভোট দিতে যান না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে সেখানে ইসির নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এসব কারণে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। এর মধ্যে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এমন পরিস্থিতিতে একটি উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে সিইসি এভাবে বক্তব্য না রাখলেও পারতেন, অন্যভাবেও বলতে পারতেন। কিন্তু একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে যে ঘটনা ঘটল তাতে ইসির ওপর মানুষের আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হলো।