Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নাসিক নির্বাচনে ভোট কাল

প্রচারের শেষদিনে শোডাউন

শেষ মুহূর্তে সহিংসতার শঙ্কা * নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে চার হাজার সদস্য * ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের সবকটি ঝুঁকিপূর্ণ

Icon

কাজী জেবেল ও রাজু আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ থেকে

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রচারের শেষদিনে শোডাউন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের শোডাউনের মধ্য দিয়ে প্রচার শেষ হয়েছে। শুক্রবার শেষ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে অলিগলিতে প্রচার চালিয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবারও এ নগরী লোকে লোকারণ্য ছিল। শুক্রবার মধ্যরাতে প্রচারের সময় শেষ হয়। রোববার এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচারে বড় কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। তবে ভোটগ্রহণের আগ মুহূর্তে সহিংসতার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী-ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। বাকি পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুজনও একই ধরনের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু করতে বাড়তি ৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসক। রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের সবকটি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের পাহারায় পুলিশ ও আনসারের ১৭ জন হারে সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে বিজিবি ও র‌্যাবকে টহল দিতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার যুগান্তরকে বলেন-সুষ্ঠু, সুন্দর ও আইনানুগভাবে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি। আমরা আশা করছি, সামনের দুদিন এমন উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকবে। নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসছে তাদের নির্বাচন কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পর্যবেক্ষণ করছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। ২০১১ সালে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে যাত্রা করা এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডে ৩৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এ সিটিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। এজন্য দুই হাজার ৯১২ ইভিএম নারায়ণগঞ্জে আনা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় দেড়গুণ ইভিএম রাখা হবে। আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনিসামগ্রী পাঠানো হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নারায়ণগঞ্জ শহর ফাঁকা থাকে। ব্যতিক্রম ছিল শুক্রবার। পাড়ায় পাড়ায় মিছিল-সমাবেশ করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। গানে গানে ভোট চেয়ে মাইকিং করেছেন তারা। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের তৎপরতা বেশি দেখা গেছে। মিছিলের কারণে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে থেমে থেমে যানজট দেখা গেছে। খাবার ও চায়ের দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। মানুষের মাঝে ছিল নির্বাচনি উৎসবের আমেজ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।

৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর প্রচার শুরু হয়। প্রচার শেষ হয়েছে শুক্রবার। শেষ দিনে শহরের দুই নম্বর রেলগেটসংলগ্ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। অপরদিকে বন্দরের সিরাজদ্দৌলা মাঠে সমাবেশ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈুমর আলম খন্দকার। দুই সমাবেশেই মিছিলে মিছিলে যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ।

প্রচারের শেষ দিনে এ নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান দুই প্রার্থী। শুক্রবার সকালে নগরীর দেওভোগ এলাকায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করে বলেন, আমাকে পরাজিত করার জন্য অনেক পক্ষ এক হয়ে গেছে। সেই পক্ষটা ঘরের হতে পারে, বাইরেরও হতে পারে, সব মিলে গেছে। কীভাবে আমাকে পরাজিত করা যায়, কীভাবে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা করানো যায়। তিনি বলেন, সহিংসতা হলে আমার ক্ষতি হবে। আমার ভোটাররা আসতে পারবেন না। আমি যদি বলি একটি পক্ষ তাই চাচ্ছে। আমার নির্বাচন সবচেয়ে বেশি জমজমাট। সেই জায়গাগুলোর মধ্যে হয়তো কেউ সহিংসতা করে ভোট কেন্দ্রে আসাতে বাধা দিতে পারে।

অপরদিকে নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মিশন পাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন নারায়ণগঞ্জে আনা হচ্ছে। এতে নারায়ণগঞ্জবাসী শঙ্কিত। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অনুরোধ করব, তারা (বহিরাগতরা) যেন নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে যায়-সেই নির্দেশনা জারি করুন। নারায়ণগঞ্জবাসীকে ভোটে তাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ দিন। এদিকে যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে খেলাফত মজলিশের প্রার্থী এবিএম সিরাজুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. কামরুল ইসলাম ভোটে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ভোটের মাঠের নিরাপত্তা : রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির প্রায় সাড়ে চার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে নির্বাচনের মাঠে পুলিশের ৬৪টি মোবাইল টিম ও ২৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবি ১৪ প্লাটুন ও র‌্যাবের ৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ৭টি টহল টিম ও দুটি স্ট্যাটিক টিম মাঠে রয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশের ৫ সদস্য ও ১২ আনসারসহ ১৭ জন মোতায়েন থাকবে। নারায়ণগঞ্জে ৬টি পয়েন্টে চেকপোস্টে তল্লাশি চালাবে র‌্যাব। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম