সব শিক্ষার্থী অনশনে বসার হুমকি, অন্ধকারে উপাচার্য
শাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি
সিলেট ব্যুরো ও শাবি প্রতিনিধি
২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে টানা ছয় দিন ধরে চলা আন্দোলনেও কোনো ফলাফল আসেনি। তাই এবার সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে একসঙ্গে অনশনে বসার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সোমবার টানা চতুর্থ দিনের মতো মশাল মিছিলও করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৯টায় মিছিলটি মুক্তমঞ্চ থেকে শুরু হয়ে ইউনিভার্সিটি সেন্টার প্রদক্ষিণ করে। এদিকে আন্দোলনের অংশ হিসাবে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উপাচার্য অন্ধকারে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, এ আন্দোলনকে কেউ কেউ বহিরাগত তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এটি একেবারেই অযৌক্তিক ও হাস্যকর। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলশী কুমার দাস যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক মনে হয়েছে। তারা পুলিশের জঘন্য হামলার শিকার হয়েছে। আন্দোলনকারীদের বহিরাগত বলার কোনো সুযোগ নেই।
রোববার দ্বিতীয় দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শাবিতে যে আন্দোলন হচ্ছে তাতে বহিরাগতদের ইন্ধন রয়েছে। অনশনস্থলে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।
একটি বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে এ আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ সব বিষয় নিয়ে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী মুহাইমিনুল বাশার বলেন, এ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বহিরাগতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
এজন্য সবার পরিচয় যাচাই করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দীর্ঘ অনশনে আমাদের সহপাঠীদের শারীরিক অবস্থা যখন ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন এমন মন্তব্য বড়ই বেদনাদায়ক।
আন্দোলন অহিংস উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অনশন ১০০ ঘণ্টা ধরে চলার পর বাধ্য হয়ে আমরা উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে সকাল থেকে প্রবেশকারীদের পরিচয় যাচাই করতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের। পরিচয় শনাক্ত করে খাতায় নাম পরিচয় লিখে তবে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, উপাচার্য ও সরকার বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে- শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে উপাচার্যের চেয়ারের দাম বেশি।
দুই দফা আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে। প্রতি ঘণ্টায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন কেউ না কেউ। আবার সুস্থ হয়েই তারা ফিরছেন অনশনস্থলে। সোমবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি ১০ শিক্ষার্থীকে অনশনস্থলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আন্দোলনের ভাষা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল ও গোলচত্বর : উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম ভাষা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরটি এখন শিক্ষার্থীদের অন্যরকম প্রতিবাদের ভাষা।
এ ভাষা রংতুলির ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে। রোববার গভীর রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘সেভ সাস্ট’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দেওয়া স্লোগানগুলো সড়কে-দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, গোলচত্বরের অর্ধেক অংশজুড়ে ‘পতন পতন পতন চাই, স্বৈরাচারের পতন চাই’, ‘যেই ভিসি মিথ্যা বলে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, শাবিপ্রবি মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা হয়েছে। এদিকে, সোমবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সংহতি সমাবেশ হয়েছে। এতে বাম ঘরানার নেতারা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে উপাচার্যকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানান।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার বাসভবনে উপাচার্য : রোববার রাত ৭টা ২০ মিনিটে উপাচার্য ফরিদের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গেছে। বাসভবনে পুলিশ ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না আন্দোলনকারীরা।
সোমবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা বিকালে উপাচার্যের বাসায় খাবার নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। বাধার মুখে তারা ফিরে যান। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের খাবারের প্রয়োজন হলে তারা খাবার সরবরাহ করবেন।
অস্ত্রোপচারেও ভাঙেনি অনশন : অনশনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী মাহিন শাহরিয়ার রাতুলের শরীরে অস্ত্রোপচার করা হলেও অনশন ভাঙেননি তিনি। রোববার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে রাগীব রাবেয়া হাসপাতালে তার অ্যাপেনডিক্সে অস্ত্রোপচার হয়।
তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। রাতুলের সহপাঠী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, অনশনরত অবস্থায় রাতুলের দ্বিতীয় দিনে হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়।
রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. নুরুল কাইয়ুম মোহাম্মদ মোরসালিন বলেন, তার অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লাস্ট স্টেজ ছিল। অপারেশন না করালে ব্লাস্ট হয়ে যেতে পারত। এখন তাকে স্টেপ ডাউন ইউনিটে (এসডিইউ) রাখা হয়েছে। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত।
শাবিতে অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর বাবার আকুতি : অনশনরত দুই শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন ও মাহিনের বাবা ক্যাম্পাসে সন্তানদের অনশনরত দেখে চোখের পানি ফেলেন। পরিচয় দিয়ে শাহরিয়ার আবেদিনের বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, আমরা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে সন্তানকে পাঠিয়েছি।
তারা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝে। ছেলেকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু আমার ছেলেকে খাওয়াতে পারব না। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আকুল আবেদন এ সমস্যার যেন দ্রুত সমাধান করেন। মাহিনের বাবা হাফিজুর রহমানও একই আকুতি জানান।
আন্দোলনকারীদের ৬টি অ্যাকাউন্ট বন্ধের অভিযোগ : আন্দোলনকারীদের খাবার ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিকাশ, নগদ ও রকেটের মোট ছয়টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ অর্থ পাঠান তারা।
সোমবার থেকে সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন আন্দোলনকারীদের ফেসবুক পেজ থেকেও এমন তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়-সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আন্দোলনকারীদের খাবার ও চিকিৎসার জন্য যেসব ভাই আপুরা অর্থ সহায়তা পাঠাচ্ছিলেন সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে এসব অ্যাকাউন্টে কেউ টাকা পাঠাবেন না।
জাবি শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইলেন উপাচার্য : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রীদের নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের কাছে ফোন করে তিনি ক্ষমা চান। জাবির জনসংযোগ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ঢাবিতে প্রতীকী অনশন শিক্ষক নেটওয়ার্কের : শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকী অনশন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশের সংগঠন। ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি শুরু হয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে।
এদিকে উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। দুপুরে খোলা চিঠি জমা দিতে জোটের তিন প্রতিনিধি বাসভবনে যান।
এছাড়া ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো মশাল মিছিল করে। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু করে কাঁটাবন, নীলক্ষেত, রাজু ভাস্কর্য হয়ে টিএসসিতে শেষ হয়। এর আগে বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
রাবিতে অবস্থান কর্মসূচি : উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
শাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি
সব শিক্ষার্থী অনশনে বসার হুমকি, অন্ধকারে উপাচার্য

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে টানা ছয় দিন ধরে চলা আন্দোলনেও কোনো ফলাফল আসেনি। তাই এবার সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে একসঙ্গে অনশনে বসার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সোমবার টানা চতুর্থ দিনের মতো মশাল মিছিলও করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৯টায় মিছিলটি মুক্তমঞ্চ থেকে শুরু হয়ে ইউনিভার্সিটি সেন্টার প্রদক্ষিণ করে। এদিকে আন্দোলনের অংশ হিসাবে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উপাচার্য অন্ধকারে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, এ আন্দোলনকে কেউ কেউ বহিরাগত তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এটি একেবারেই অযৌক্তিক ও হাস্যকর। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলশী কুমার দাস যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক মনে হয়েছে। তারা পুলিশের জঘন্য হামলার শিকার হয়েছে। আন্দোলনকারীদের বহিরাগত বলার কোনো সুযোগ নেই।
রোববার দ্বিতীয় দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শাবিতে যে আন্দোলন হচ্ছে তাতে বহিরাগতদের ইন্ধন রয়েছে। অনশনস্থলে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।
একটি বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে এ আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ সব বিষয় নিয়ে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী মুহাইমিনুল বাশার বলেন, এ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বহিরাগতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
এজন্য সবার পরিচয় যাচাই করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দীর্ঘ অনশনে আমাদের সহপাঠীদের শারীরিক অবস্থা যখন ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন এমন মন্তব্য বড়ই বেদনাদায়ক।
আন্দোলন অহিংস উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অনশন ১০০ ঘণ্টা ধরে চলার পর বাধ্য হয়ে আমরা উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে সকাল থেকে প্রবেশকারীদের পরিচয় যাচাই করতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের। পরিচয় শনাক্ত করে খাতায় নাম পরিচয় লিখে তবে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, উপাচার্য ও সরকার বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে- শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে উপাচার্যের চেয়ারের দাম বেশি।
দুই দফা আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে। প্রতি ঘণ্টায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন কেউ না কেউ। আবার সুস্থ হয়েই তারা ফিরছেন অনশনস্থলে। সোমবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি ১০ শিক্ষার্থীকে অনশনস্থলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আন্দোলনের ভাষা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল ও গোলচত্বর : উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম ভাষা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরটি এখন শিক্ষার্থীদের অন্যরকম প্রতিবাদের ভাষা।
এ ভাষা রংতুলির ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে। রোববার গভীর রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘সেভ সাস্ট’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দেওয়া স্লোগানগুলো সড়কে-দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, গোলচত্বরের অর্ধেক অংশজুড়ে ‘পতন পতন পতন চাই, স্বৈরাচারের পতন চাই’, ‘যেই ভিসি মিথ্যা বলে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, শাবিপ্রবি মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা হয়েছে। এদিকে, সোমবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সংহতি সমাবেশ হয়েছে। এতে বাম ঘরানার নেতারা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে উপাচার্যকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানান।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার বাসভবনে উপাচার্য : রোববার রাত ৭টা ২০ মিনিটে উপাচার্য ফরিদের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গেছে। বাসভবনে পুলিশ ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না আন্দোলনকারীরা।
সোমবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা বিকালে উপাচার্যের বাসায় খাবার নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। বাধার মুখে তারা ফিরে যান। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের খাবারের প্রয়োজন হলে তারা খাবার সরবরাহ করবেন।
অস্ত্রোপচারেও ভাঙেনি অনশন : অনশনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী মাহিন শাহরিয়ার রাতুলের শরীরে অস্ত্রোপচার করা হলেও অনশন ভাঙেননি তিনি। রোববার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে রাগীব রাবেয়া হাসপাতালে তার অ্যাপেনডিক্সে অস্ত্রোপচার হয়।
তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। রাতুলের সহপাঠী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, অনশনরত অবস্থায় রাতুলের দ্বিতীয় দিনে হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়।
রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. নুরুল কাইয়ুম মোহাম্মদ মোরসালিন বলেন, তার অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লাস্ট স্টেজ ছিল। অপারেশন না করালে ব্লাস্ট হয়ে যেতে পারত। এখন তাকে স্টেপ ডাউন ইউনিটে (এসডিইউ) রাখা হয়েছে। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত।
শাবিতে অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর বাবার আকুতি : অনশনরত দুই শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন ও মাহিনের বাবা ক্যাম্পাসে সন্তানদের অনশনরত দেখে চোখের পানি ফেলেন। পরিচয় দিয়ে শাহরিয়ার আবেদিনের বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, আমরা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে সন্তানকে পাঠিয়েছি।
তারা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝে। ছেলেকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু আমার ছেলেকে খাওয়াতে পারব না। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আকুল আবেদন এ সমস্যার যেন দ্রুত সমাধান করেন। মাহিনের বাবা হাফিজুর রহমানও একই আকুতি জানান।
আন্দোলনকারীদের ৬টি অ্যাকাউন্ট বন্ধের অভিযোগ : আন্দোলনকারীদের খাবার ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিকাশ, নগদ ও রকেটের মোট ছয়টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ অর্থ পাঠান তারা।
সোমবার থেকে সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন আন্দোলনকারীদের ফেসবুক পেজ থেকেও এমন তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়-সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আন্দোলনকারীদের খাবার ও চিকিৎসার জন্য যেসব ভাই আপুরা অর্থ সহায়তা পাঠাচ্ছিলেন সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে এসব অ্যাকাউন্টে কেউ টাকা পাঠাবেন না।
জাবি শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইলেন উপাচার্য : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রীদের নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের কাছে ফোন করে তিনি ক্ষমা চান। জাবির জনসংযোগ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ঢাবিতে প্রতীকী অনশন শিক্ষক নেটওয়ার্কের : শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকী অনশন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশের সংগঠন। ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি শুরু হয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে।
এদিকে উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। দুপুরে খোলা চিঠি জমা দিতে জোটের তিন প্রতিনিধি বাসভবনে যান।
এছাড়া ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো মশাল মিছিল করে। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু করে কাঁটাবন, নীলক্ষেত, রাজু ভাস্কর্য হয়ে টিএসসিতে শেষ হয়। এর আগে বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
রাবিতে অবস্থান কর্মসূচি : উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।