আট লবিস্ট নিয়োগ বিএনপি-জামায়াতের
সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে
সংসদ প্রতিবেদক
২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে আটটি ‘লবিস্ট ফার্ম’ নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি ফার্ম নিয়োগ করে।
আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি নিয়োগ দেয় তিনটি ‘ফার্ম’। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে-লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে।
লবিস্টকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে সাহায্য-সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছে। উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয়, সেজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলছে।
এদিকে র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকার কাজ করছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সঠিক তথ্য পৌঁছাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই র্যাবের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।
তবে তার জন্য কিছু সময় লাগবে। তিনি বলেন, আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিলে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠক আয়োজন করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি প্রথম লবিস্ট নিয়োগ করেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য। দেড় লাখ ডলার ব্যয়ে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে এজন্য নিয়োগ দেয়।
এভাবে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজের জন্য ৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয় লবিস্ট হিসাবে। লবিস্টের পেছনে ব্যয় করা এ অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য বিএনপির প্রতি ধিক্কার জানান তিনি। এ সময় মন্ত্রী বলেন, সরকার ও বিএনপির মধ্যে মতের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে দেশের অনিষ্ট করা যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ও তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় যান, কী করেন সে খোঁজ নেওয়ার জন্য এফবিআইয়ের প্রতি অ্যাপ্রোচ করে বিএনপি নেতার ছেলে সিজার।
তারা জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্র করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সিজার ও তার সহযোগীদের সাজাও হয়েছে। তিনি বলেন, একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন, অনুযোগ করতে পারেন। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের অপপ্রচার করে তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় ১২টি আন্তর্জাতিক এনজিও জাতিসংঘের পিস কিপিংয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছে। তারা চিঠিতে বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা ও স্পেকুলেশন তুলে ধরে বলেছেন, র্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভঙ্গ করছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের এক নম্বর পিস কিপার। সবচেয়ে বেশি সৈন্য আমরা শান্তিরক্ষায় পাঠাই। আমরা ভালোভাবে কাজটা করি বলেই বাংলাদেশ থেকে তারা সৈন্য নেয়।
কিন্তু বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে যুক্ত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এ অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে তাদের শান্তিরক্ষায় না নিতে বলা হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর তারা এ অনুরোধ করে।
দুই মাস হলো জাতিসংঘ এটা পেয়েছে। জাতিসংঘ তাদের উত্তরে বলেছে, যখনই কোনো লোককে শান্তিরক্ষায় নেওয়া হয় তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করে তারপর তারা কাজটা দেয়।
সুতরাং এসব অপপ্রচার জনগণের বিরুদ্ধে দুরভিসন্ধিমূলক কাজ। র্যাব একটা ভালো প্রতিষ্ঠান। আমি বিশ্বাস করি, এ রকম ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন বুঝতে পেরে তারাও দুঃখিত হবেন, লজ্জা পাবেন।
দেশের অমঙ্গল ডেকে এনে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিএনপি নানামুখী অপচেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করেন একে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ দলের নেতারা বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলেছেন, দেশের সব রকমের সাহায্য বন্ধ করতে। আমেরিকার নিরাপত্তা বাংলাদেশের কারণে বিঘ্নিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন, বিশেষ করে ভাসানচরে নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছেন, এটা আত্মঘাতী।
এ আশ্রয়ের ফলে আমেরিকার আন্তঃএশিয়া পলিসি বিঘ্নিত হবে। ফলে আমেরিকার সিকিউরিটি ধ্বংস হবে। এ রকমের বাজে কথা যারা বলে ‘শেম অন দ্যাম’। আগামীতে এ ধরনের দুরভিসন্ধিমূলক কাজ থেকে বিরত থাকবে বলে আশা করি।
সরকার কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা একটা পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছিলাম।
লবিস্ট ফার্ম আর পিআর ফার্মের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- যারা সিনেটে গিয়ে ইউএসএ গিয়ে বা বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে তদবির করে। আমরা সেই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেইনি।
আমরা যেটা করেছি সেটা ‘লবি ফার্ম’, তাদের দায়িত্ব, অপপ্রচার বা যেসব মিথ্যা তথ্য প্রকাশ হয় সেগুলো জনগণকে জানানো। সত্য কথাগুলো তারা বলবে। বিজিআর নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দল সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না, দুরভিসন্ধিতে বিশ্বাস করে না, ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের খবর পাই ‘টাইম টু টাইম’। তারা দুনিয়ার সব হিউম্যান রাইটস এজেন্টকে নক করেছে। এটার জন্য দুঃখ করতে হয়।
দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলে, তখন ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্টকে তারা মিথ্যা তথ্য দেয়।
সেই বিচার ভুল এটা প্রমাণের চেষ্টা চালায় ‘পিস অ্যান্ড জাস্টিস’ নামে জামায়াত-বিএনপির প্রতিষ্ঠান। তারা এক লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে এ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে।
তারা যুদ্ধাপরাধী মামলা বন্ধ করার জন্য পরবর্তীতে কন্ট্রাক্ট পাবলিক অ্যাফেয়ার্স আউট রিচ নামে আবার লবিস্ট নিয়োগ করে। শুধু জামায়াত নয়, বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার খরচ করেছে।
তারা প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার খরচ করেছে। এগুলো আমেরিকার ওয়েবসাইটে আছে সবাই দেখতে পাবেন। বিএনপি ‘একিন গভর্নমেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও হুইফ্রেড তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে।
সেখানে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার ডলার খরচ করে। এরপর তারা একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ৫০ হাজার ডলার দেবে বলে নিয়োগ করেছে।
তিনি আরও বলেন, খুবই তাজ্জবের বিষয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাদের (বিএনপি) কিছু প্রতিনিধি আমেরিকায় গেছেন। সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছেন।
সেখানে লবিস্ট নিয়োগ করা অন্যায় নয়। লবিস্ট কি কারণে নিয়োগ হয়েছে, সেটা মুখ্য বিষয়। লবিস্টটের টাকা কোথা থেকে গেল? দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তাদের লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন, এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন যেগুলো দেশের মানুষ জানলে শুধু দুঃখিত না, তারা ধিক্কার দেবে।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপির কিছু কিছু লোক জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। তারা চিঠি দিয়ে আমেরিকানদের বলেছে, তোমরা সাহায্য-সহায়তা বন্ধ করে দাও।
বন্ধ করলে কি হবে? এতে দেশের নাগরিক দুই বেলা খেতে পায়, গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুৎ পায়, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, তা ব্যাহত হবে। তারা দেশের উন্নয়ন বন্ধের জন্য আমেরিকা সরকারকে বলছে।
নিশ্চয়ই বিএনপির কর্মীরা কেউ চাইবেন না, এ দেশের অমঙ্গল হোক। এ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হোক। তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতারা কিভাবে এমন করে লিখতে পারেন!
আপনার দলের মাঠে-ময়দানে যে কর্মীরা কাজ করেন, তারা যদি এগুলো শোনেন, তারা তখন আপনাদের নেতৃত্বকে প্রশ্ন করবেন? আমি সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আট লবিস্ট নিয়োগ বিএনপি-জামায়াতের
র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে আটটি ‘লবিস্ট ফার্ম’ নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি ফার্ম নিয়োগ করে।
আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি নিয়োগ দেয় তিনটি ‘ফার্ম’। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে-লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে।
লবিস্টকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে সাহায্য-সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছে। উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয়, সেজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলছে।
এদিকে র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকার কাজ করছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সঠিক তথ্য পৌঁছাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই র্যাবের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।
তবে তার জন্য কিছু সময় লাগবে। তিনি বলেন, আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিলে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠক আয়োজন করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি প্রথম লবিস্ট নিয়োগ করেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য। দেড় লাখ ডলার ব্যয়ে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে এজন্য নিয়োগ দেয়।
এভাবে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজের জন্য ৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয় লবিস্ট হিসাবে। লবিস্টের পেছনে ব্যয় করা এ অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য বিএনপির প্রতি ধিক্কার জানান তিনি। এ সময় মন্ত্রী বলেন, সরকার ও বিএনপির মধ্যে মতের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে দেশের অনিষ্ট করা যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ও তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় যান, কী করেন সে খোঁজ নেওয়ার জন্য এফবিআইয়ের প্রতি অ্যাপ্রোচ করে বিএনপি নেতার ছেলে সিজার।
তারা জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্র করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সিজার ও তার সহযোগীদের সাজাও হয়েছে। তিনি বলেন, একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন, অনুযোগ করতে পারেন। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের অপপ্রচার করে তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় ১২টি আন্তর্জাতিক এনজিও জাতিসংঘের পিস কিপিংয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছে। তারা চিঠিতে বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা ও স্পেকুলেশন তুলে ধরে বলেছেন, র্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভঙ্গ করছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের এক নম্বর পিস কিপার। সবচেয়ে বেশি সৈন্য আমরা শান্তিরক্ষায় পাঠাই। আমরা ভালোভাবে কাজটা করি বলেই বাংলাদেশ থেকে তারা সৈন্য নেয়।
কিন্তু বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে যুক্ত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এ অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে তাদের শান্তিরক্ষায় না নিতে বলা হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর তারা এ অনুরোধ করে।
দুই মাস হলো জাতিসংঘ এটা পেয়েছে। জাতিসংঘ তাদের উত্তরে বলেছে, যখনই কোনো লোককে শান্তিরক্ষায় নেওয়া হয় তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করে তারপর তারা কাজটা দেয়।
সুতরাং এসব অপপ্রচার জনগণের বিরুদ্ধে দুরভিসন্ধিমূলক কাজ। র্যাব একটা ভালো প্রতিষ্ঠান। আমি বিশ্বাস করি, এ রকম ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন বুঝতে পেরে তারাও দুঃখিত হবেন, লজ্জা পাবেন।
দেশের অমঙ্গল ডেকে এনে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিএনপি নানামুখী অপচেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করেন একে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ দলের নেতারা বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলেছেন, দেশের সব রকমের সাহায্য বন্ধ করতে। আমেরিকার নিরাপত্তা বাংলাদেশের কারণে বিঘ্নিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন, বিশেষ করে ভাসানচরে নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছেন, এটা আত্মঘাতী।
এ আশ্রয়ের ফলে আমেরিকার আন্তঃএশিয়া পলিসি বিঘ্নিত হবে। ফলে আমেরিকার সিকিউরিটি ধ্বংস হবে। এ রকমের বাজে কথা যারা বলে ‘শেম অন দ্যাম’। আগামীতে এ ধরনের দুরভিসন্ধিমূলক কাজ থেকে বিরত থাকবে বলে আশা করি।
সরকার কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা একটা পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছিলাম।
লবিস্ট ফার্ম আর পিআর ফার্মের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- যারা সিনেটে গিয়ে ইউএসএ গিয়ে বা বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে তদবির করে। আমরা সেই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেইনি।
আমরা যেটা করেছি সেটা ‘লবি ফার্ম’, তাদের দায়িত্ব, অপপ্রচার বা যেসব মিথ্যা তথ্য প্রকাশ হয় সেগুলো জনগণকে জানানো। সত্য কথাগুলো তারা বলবে। বিজিআর নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দল সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না, দুরভিসন্ধিতে বিশ্বাস করে না, ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের খবর পাই ‘টাইম টু টাইম’। তারা দুনিয়ার সব হিউম্যান রাইটস এজেন্টকে নক করেছে। এটার জন্য দুঃখ করতে হয়।
দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলে, তখন ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্টকে তারা মিথ্যা তথ্য দেয়।
সেই বিচার ভুল এটা প্রমাণের চেষ্টা চালায় ‘পিস অ্যান্ড জাস্টিস’ নামে জামায়াত-বিএনপির প্রতিষ্ঠান। তারা এক লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে এ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে।
তারা যুদ্ধাপরাধী মামলা বন্ধ করার জন্য পরবর্তীতে কন্ট্রাক্ট পাবলিক অ্যাফেয়ার্স আউট রিচ নামে আবার লবিস্ট নিয়োগ করে। শুধু জামায়াত নয়, বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার খরচ করেছে।
তারা প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার খরচ করেছে। এগুলো আমেরিকার ওয়েবসাইটে আছে সবাই দেখতে পাবেন। বিএনপি ‘একিন গভর্নমেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও হুইফ্রেড তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে।
সেখানে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার ডলার খরচ করে। এরপর তারা একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ৫০ হাজার ডলার দেবে বলে নিয়োগ করেছে।
তিনি আরও বলেন, খুবই তাজ্জবের বিষয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাদের (বিএনপি) কিছু প্রতিনিধি আমেরিকায় গেছেন। সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছেন।
সেখানে লবিস্ট নিয়োগ করা অন্যায় নয়। লবিস্ট কি কারণে নিয়োগ হয়েছে, সেটা মুখ্য বিষয়। লবিস্টটের টাকা কোথা থেকে গেল? দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তাদের লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন, এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন যেগুলো দেশের মানুষ জানলে শুধু দুঃখিত না, তারা ধিক্কার দেবে।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপির কিছু কিছু লোক জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। তারা চিঠি দিয়ে আমেরিকানদের বলেছে, তোমরা সাহায্য-সহায়তা বন্ধ করে দাও।
বন্ধ করলে কি হবে? এতে দেশের নাগরিক দুই বেলা খেতে পায়, গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুৎ পায়, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, তা ব্যাহত হবে। তারা দেশের উন্নয়ন বন্ধের জন্য আমেরিকা সরকারকে বলছে।
নিশ্চয়ই বিএনপির কর্মীরা কেউ চাইবেন না, এ দেশের অমঙ্গল হোক। এ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হোক। তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতারা কিভাবে এমন করে লিখতে পারেন!
আপনার দলের মাঠে-ময়দানে যে কর্মীরা কাজ করেন, তারা যদি এগুলো শোনেন, তারা তখন আপনাদের নেতৃত্বকে প্রশ্ন করবেন? আমি সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি।