আইডিআরএ চেয়ারম্যানের তদন্ত শুরু দুদকের
দুই কোম্পানি খুলে অবৈধ শেয়ার ব্যবসা
মনির হোসেন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের অবৈধ শেয়ার ব্যবসা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
উচ্চ আদালতে একজন বিনিয়োগকারীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। দুদকের বিশেষ টিম-২, এই ঘটনার তদন্ত করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দুদক থেকে বিশেষ টিমকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ড. মোশাররফ হোসেন বেআইনিভাবে দুটি কোম্পানি গঠন করে পুঁজিবাজারে অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়াও মানি লন্ডারিং করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের মঙ্গলবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আইডিআরএ যোগ দেওয়ার আগেই আমার কোম্পানি ছিল। বিষয়টি বিচারাধীন হওয়ায় আইনের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হয়ে আসবে।’ এর বেশি আর কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এদিকে ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে আরও বড় দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য সামনে চলে এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে থেকে নিজের প্রতিষ্ঠিত দুই কোম্পানির মাধ্যমে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন তিনি। বাণিজ্যিক কার্যক্রমে না থাকা ওই দুই কোম্পানির প্রভিডেন্ড ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ড গঠন করে তিন বছরের বেশি সময় ধরে শেয়ার ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তিনি। বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান হয়েও দুই কোম্পানির পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকা এবং প্রভিডেন্ড ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ড গঠন করে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানান আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদী নামের একজন বিনিয়োগকারী।
কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। এই রিটের পর মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুই কোম্পানির নামে আইনবহির্ভূতভাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেন, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে কেন তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ড. এম মোশাররফ হোসেন ও তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়ার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে কেন মামলা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দুদক ও ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন আদালত।
জানা গেছে ২০১৭ সালের ৯ মে তিনি ‘লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকস লিমিটেড’ ও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামের দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুই কোম্পানিতে পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসাবে মোশাররফ নিজে এবং তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ এ দুই কোম্পানির নামে একটি করে প্রভিডেন্ড ফান্ড ও একটি করে গ্র্যাচুইটি ফান্ডসহ মোট ৪টি ফান্ড গঠন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। তিনি নিজেই উল্লিখিত চার ফান্ডের বোর্ড অব ট্রাস্টি, যা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০-এর পরিপন্থি।
তবে আইডিআরএ চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে নিজেকে ওই দুই কোম্পানির পরিচালক ও এমডি হিসাবে ঘোষণা করলেও কোম্পানি কোনো ব্যবসা শুরু করেনি বলে জানান। অথচ বাণিজ্যিক কার্যক্রমে না থাকা ওই দুই কোম্পানির চার ফান্ডে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে তার। এসব ফান্ডের বিও হিসাবে মোশাররফ নিজের নাম, ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করেছেন। এছাড়া বিও হিসাবের ব্যাংক হিসাবগুলোও তিনি নিজেই পরিচালনা করেন। কার্যক্রমে না থাকা কোম্পানিগুলোর প্রভিডেন্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের গঠন ও এই তহবিলের উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ট্রাস্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী যে কোনো ফান্ডের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। এ হিসাবে পুঁজিবাজারে ৪ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের বিপরীতে মূল ফান্ডের পরিমাণ অন্তত ১২ কোটি টাকা থাকা উচিত। এই পরিমাণের তহবিল থাকতে হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ন্যূনতম ১২০ কোটি টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু কোম্পানি দুটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি।
রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকসের কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ফান্ডের বিও হিসাবে ১ কোটি টাকা ও প্রভিডেন্ড ফান্ডে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের শেয়ার ছিল। একই সময়ে গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটির বিও হিসাবে ৭০ লাখ ও প্রভিডেন্ড ফান্ডের বিও হিসাবে ৯৭ লাখ টাকা মূল্যমানের শেয়ার রয়েছে। সব মিলিয়ে উল্লিখিত সময়ে ওই চার ফান্ডে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের শেয়ার রয়েছে। এছাড়া যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসাবে উল্লিখিত চার ফান্ডের বিও হিসাবের মাধ্যমে বিমাসহ বিভিন্ন কোম্পানির আইপিওর নিলামে অংশগ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কোটায় আমান কটন, রিং সাইন টেক্সটাইল, আশুগঞ্জ পাওয়ারের বন্ড, ওরিজা অ্যাগ্রো, মাস্টার ফিড, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও অ্যাকমি পেস্টিসাইডের শেয়ার বরাদ্দ পেয়েছে মোশাররফের কোম্পানি।
ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগে দুদকের তদন্ত ছাড়াও অন্য এক রিটে মোশাররফের বিরুদ্ধে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১০-এর ৭(৩)(খ) ধারা অমান্য করে আইডিআরএ’র সদস্য ও চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-এ মর্মে রুল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। একইসঙ্গে বিমা আইন অনুযায়ী মোশাররফকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ না করা কেন অবৈধ হবে না মর্মেও রুল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
ড. এম মোশাররফ হোসেন ২০১৮ সালের এপ্রিলে আইডিআরএ’র সদস্য নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হন তিনি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
দুই কোম্পানি খুলে অবৈধ শেয়ার ব্যবসা
আইডিআরএ চেয়ারম্যানের তদন্ত শুরু দুদকের
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের অবৈধ শেয়ার ব্যবসা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
উচ্চ আদালতে একজন বিনিয়োগকারীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। দুদকের বিশেষ টিম-২, এই ঘটনার তদন্ত করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দুদক থেকে বিশেষ টিমকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ড. মোশাররফ হোসেন বেআইনিভাবে দুটি কোম্পানি গঠন করে পুঁজিবাজারে অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়াও মানি লন্ডারিং করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের মঙ্গলবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আইডিআরএ যোগ দেওয়ার আগেই আমার কোম্পানি ছিল। বিষয়টি বিচারাধীন হওয়ায় আইনের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হয়ে আসবে।’ এর বেশি আর কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এদিকে ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে আরও বড় দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য সামনে চলে এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে থেকে নিজের প্রতিষ্ঠিত দুই কোম্পানির মাধ্যমে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন তিনি। বাণিজ্যিক কার্যক্রমে না থাকা ওই দুই কোম্পানির প্রভিডেন্ড ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ড গঠন করে তিন বছরের বেশি সময় ধরে শেয়ার ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তিনি। বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান হয়েও দুই কোম্পানির পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকা এবং প্রভিডেন্ড ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ড গঠন করে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানান আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদী নামের একজন বিনিয়োগকারী।
কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। এই রিটের পর মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুই কোম্পানির নামে আইনবহির্ভূতভাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেন, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে কেন তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ড. এম মোশাররফ হোসেন ও তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়ার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে কেন মামলা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দুদক ও ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন আদালত।
জানা গেছে ২০১৭ সালের ৯ মে তিনি ‘লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকস লিমিটেড’ ও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামের দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুই কোম্পানিতে পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসাবে মোশাররফ নিজে এবং তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ এ দুই কোম্পানির নামে একটি করে প্রভিডেন্ড ফান্ড ও একটি করে গ্র্যাচুইটি ফান্ডসহ মোট ৪টি ফান্ড গঠন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। তিনি নিজেই উল্লিখিত চার ফান্ডের বোর্ড অব ট্রাস্টি, যা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০-এর পরিপন্থি।
তবে আইডিআরএ চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে নিজেকে ওই দুই কোম্পানির পরিচালক ও এমডি হিসাবে ঘোষণা করলেও কোম্পানি কোনো ব্যবসা শুরু করেনি বলে জানান। অথচ বাণিজ্যিক কার্যক্রমে না থাকা ওই দুই কোম্পানির চার ফান্ডে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে তার। এসব ফান্ডের বিও হিসাবে মোশাররফ নিজের নাম, ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করেছেন। এছাড়া বিও হিসাবের ব্যাংক হিসাবগুলোও তিনি নিজেই পরিচালনা করেন। কার্যক্রমে না থাকা কোম্পানিগুলোর প্রভিডেন্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের গঠন ও এই তহবিলের উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ট্রাস্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী যে কোনো ফান্ডের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। এ হিসাবে পুঁজিবাজারে ৪ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের বিপরীতে মূল ফান্ডের পরিমাণ অন্তত ১২ কোটি টাকা থাকা উচিত। এই পরিমাণের তহবিল থাকতে হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ন্যূনতম ১২০ কোটি টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু কোম্পানি দুটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি।
রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকসের কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ফান্ডের বিও হিসাবে ১ কোটি টাকা ও প্রভিডেন্ড ফান্ডে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের শেয়ার ছিল। একই সময়ে গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটির বিও হিসাবে ৭০ লাখ ও প্রভিডেন্ড ফান্ডের বিও হিসাবে ৯৭ লাখ টাকা মূল্যমানের শেয়ার রয়েছে। সব মিলিয়ে উল্লিখিত সময়ে ওই চার ফান্ডে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের শেয়ার রয়েছে। এছাড়া যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসাবে উল্লিখিত চার ফান্ডের বিও হিসাবের মাধ্যমে বিমাসহ বিভিন্ন কোম্পানির আইপিওর নিলামে অংশগ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কোটায় আমান কটন, রিং সাইন টেক্সটাইল, আশুগঞ্জ পাওয়ারের বন্ড, ওরিজা অ্যাগ্রো, মাস্টার ফিড, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও অ্যাকমি পেস্টিসাইডের শেয়ার বরাদ্দ পেয়েছে মোশাররফের কোম্পানি।
ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগে দুদকের তদন্ত ছাড়াও অন্য এক রিটে মোশাররফের বিরুদ্ধে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১০-এর ৭(৩)(খ) ধারা অমান্য করে আইডিআরএ’র সদস্য ও চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-এ মর্মে রুল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। একইসঙ্গে বিমা আইন অনুযায়ী মোশাররফকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ না করা কেন অবৈধ হবে না মর্মেও রুল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
ড. এম মোশাররফ হোসেন ২০১৮ সালের এপ্রিলে আইডিআরএ’র সদস্য নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হন তিনি।