বড় বাসে ২৪০০ ও ট্রাকে ৫৫০০ টাকা
পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ
যুগান্তর প্রতিবেদন
১৮ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুতে গাড়ি পারাপারে টোল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে কোনো ধরনের গাড়ি এ সেতুতে চলাচল করতে পারবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেতু বিভাগ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতুতে পার হতে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপ ৭৫০ টাকা, বাস (৩২ আসনের বা এর বেশি) ২০০০ টাকা এবং ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর এ টোল হার বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলের চেয়ে যানবাহনভেদে ৩৬ থেকে ১২৫ শতাংশ বেশি। এই হারে টোল আদায় শুরু হলে বিদ্যমান ফেরিতে পারাপারের ফির চেয়ে ১২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেশি টাকা গুনতে হবে পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রজ্ঞাপন গতকাল জারি করা হলেও সেতুতে গাড়ি চলাচল উন্মুক্ত করার দিন থেকে এ টোল হার কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেতুতে ১৩ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে নসিমন, করিমন, ভটভটি ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না। এমনকি হেঁটেও মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন না। এদিকে প্রজ্ঞাপনে যে হারে টোল নির্ধারণের কথা জানানো হয়েছে তা আদায় শুরু হলে পদ্মা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহন ব্যবহারকারীদের খরচ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বাস, কার, মাইক্রোবাসের যে টোল ধরা হয়েছে তা সরাসরি যাত্রীদের থেকে আদায় করা হবে। আর পণ্যবাহী গাড়ির টোলের চাপ পড়বে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর।
জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনছুর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যে টাকা ব্যয় হয়েছে সেই টাকা অর্থ বিভাগকে ফেরত দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। এক শতাংশ হারে সুদসহ সেতু নির্মাণ ব্যয়ের ৩৬ হাজার কোটি টাকা আগামী ৩৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা, বিদ্যমান ফেরি ভাড়া, সেতুতে পার হওয়ার কারণে সময়ের সাশ্রয়-সবকিছু বিবেচনায় এ টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এ সেতুতে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন এ সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আগামী জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মূল সেতুর কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। সামগ্রিক প্রকল্পের কাজ ৯২.৫০ শতাংশ হয়েছে। আমরা জুনের মধ্যে সেতুর সব ধরনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি বলেন, কবে এ সেতু গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে তা নির্ধারণের এখতিয়ার আমার নয়। এটি সরকার ঠিক করবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট তথা সংযোগ সেতু ৩ দশমিক ১৪ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে নয় কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্য এ সেতুর। মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে চাইলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা আর পিকআপের জন্য এক হাজার ২০০ টাকা দিতে হবে। মাইক্রোবাসে লাগবে এক হাজার ৩০০ টাকা। বাসের জন্য আসনের ভিত্তিতে তিন ধরনের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। ছোট বাসে (৩১ আসন বা এর কম) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা এবং বড় বাসে (৩ এক্সেল) দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। পণ্যবাহী বাহনের ক্ষেত্রে ছোট ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা এবং বড় ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রেইলারের ক্ষেত্রে টোল ছয় হাজার টাকা। এর বেশি এক্সেল হলে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা হারে টোল দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সেতু ও ফেরির তুলনায় টোল হার বেশি : বঙ্গবন্ধু সেতু ও ফেরির চেয়ে পদ্মা সেতুতে বেশি হারে টোল ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ সেতুতে মোটরসাইকেল পার হতে টোল দিতে হয় ৫০ টাকা এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরিতে লাগে ৭০ টাকা। অথচ পদ্মা সেতুতে লাগবে ১০০ টাকা। হালকা যানবাহন কার বা জিপ বঙ্গবন্ধু সেতুতে দিতে হয় ৫৫০ টাকা ও ফেরির টোল ৫০০ টাকা। পদ্মা সেতুতে তা ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুতে মাইক্রোবাস ও পিকআপের ভাড়া ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অথচ পদ্মা সেতুতে পিকআপের টোল এক হাজার ২০০ টাকা ও মাইক্রোবাসের টোল এক হাজার ৩০০ টাকা। ৩১ আসনের কম ছোট বাসের টোল বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৭৫০ টাকা ও ফেরিতে এক হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে তা নেওয়া হবে এক হাজার ৪০০ টাকা। ৩২ বা তার বেশি আসনবিশিষ্ট মাঝারি বাসে বঙ্গবন্ধু সেতুতে এক হাজার টাকা ও ফেরিতে এক হাজার ৭৮০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে তা নেওয়া হবে দুই হাজার টাকা। বড় বাসের (তিন এক্সেল) পদ্মা সেতুতে ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকা। অথচ বঙ্গবন্ধু সেতুতে তা এক হাজার টাকা এবং ফেরিতে এক হাজার ৯৪০ টাকা।
একইভাবে ৫টন পর্যন্ত ছোট ট্রাকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে এক হাজার টাকা ও ফেরিতে এক হাজার ৮০ টাকা টোল নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে এ ট্রাকের টোল হবে এক হাজার ৬০০ টাকা। ৫-৮টন পর্যন্ত ধারণ ক্ষমতার ট্রাকের টোল পদ্মা সেতুতে নেওয়া হবে দুই হাজার ১০০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুতে এ ট্রাকের টোল এক হাজার ২৫০ টাকা ও ফেরিতে এক হাজার ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে অন্যান্য যানবাহনের টোল হার বেশি ধরা হয়েছে।
এ টোল হারে পদ্মা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহন ব্যবহারকারীদের খরচ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বাস, কার, মাইক্রোবাসের যে টোল ধরা হয়েছে তা সরাসরি যাত্রীদের থেকে আদায় করা হবে। আর পণ্যবাহী গাড়ির টোলের চাপ পড়বে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর। জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র সেন যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে যেসব সেতুতে টোল আদায় করা হচ্ছে, সেগুলো বিবেচনায় পদ্মা সেতুতে সবচেয়ে বেশি হারে টোল নেওয়া হবে। এ টোলের চাপ পড়বে জনসাধারণের ওপর। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু এবং ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম ভালো রাস্তা। এ সড়কে গেলে মন গর্বে ভরে যায়। কিন্তু জনসাধারণের কথা চিন্তা করলে টোলের পরিমাণ বেশিই বলে মনে হচ্ছে। জনসাধারণের কথা চিন্তা করে আমরা সরকারের কাছে টোলের হার পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ
বড় বাসে ২৪০০ ও ট্রাকে ৫৫০০ টাকা
বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুতে গাড়ি পারাপারে টোল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে কোনো ধরনের গাড়ি এ সেতুতে চলাচল করতে পারবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেতু বিভাগ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতুতে পার হতে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপ ৭৫০ টাকা, বাস (৩২ আসনের বা এর বেশি) ২০০০ টাকা এবং ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর এ টোল হার বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলের চেয়ে যানবাহনভেদে ৩৬ থেকে ১২৫ শতাংশ বেশি। এই হারে টোল আদায় শুরু হলে বিদ্যমান ফেরিতে পারাপারের ফির চেয়ে ১২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেশি টাকা গুনতে হবে পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রজ্ঞাপন গতকাল জারি করা হলেও সেতুতে গাড়ি চলাচল উন্মুক্ত করার দিন থেকে এ টোল হার কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেতুতে ১৩ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে নসিমন, করিমন, ভটভটি ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না। এমনকি হেঁটেও মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন না। এদিকে প্রজ্ঞাপনে যে হারে টোল নির্ধারণের কথা জানানো হয়েছে তা আদায় শুরু হলে পদ্মা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহন ব্যবহারকারীদের খরচ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বাস, কার, মাইক্রোবাসের যে টোল ধরা হয়েছে তা সরাসরি যাত্রীদের থেকে আদায় করা হবে। আর পণ্যবাহী গাড়ির টোলের চাপ পড়বে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর।
জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনছুর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যে টাকা ব্যয় হয়েছে সেই টাকা অর্থ বিভাগকে ফেরত দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। এক শতাংশ হারে সুদসহ সেতু নির্মাণ ব্যয়ের ৩৬ হাজার কোটি টাকা আগামী ৩৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা, বিদ্যমান ফেরি ভাড়া, সেতুতে পার হওয়ার কারণে সময়ের সাশ্রয়-সবকিছু বিবেচনায় এ টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এ সেতুতে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন এ সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আগামী জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মূল সেতুর কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। সামগ্রিক প্রকল্পের কাজ ৯২.৫০ শতাংশ হয়েছে। আমরা জুনের মধ্যে সেতুর সব ধরনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি বলেন, কবে এ সেতু গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে তা নির্ধারণের এখতিয়ার আমার নয়। এটি সরকার ঠিক করবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট তথা সংযোগ সেতু ৩ দশমিক ১৪ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে নয় কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্য এ সেতুর। মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে চাইলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা আর পিকআপের জন্য এক হাজার ২০০ টাকা দিতে হবে। মাইক্রোবাসে লাগবে এক হাজার ৩০০ টাকা। বাসের জন্য আসনের ভিত্তিতে তিন ধরনের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। ছোট বাসে (৩১ আসন বা এর কম) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা এবং বড় বাসে (৩ এক্সেল) দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। পণ্যবাহী বাহনের ক্ষেত্রে ছোট ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা এবং বড় ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রেইলারের ক্ষেত্রে টোল ছয় হাজার টাকা। এর বেশি এক্সেল হলে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা হারে টোল দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সেতু ও ফেরির তুলনায় টোল হার বেশি : বঙ্গবন্ধু সেতু ও ফেরির চেয়ে পদ্মা সেতুতে বেশি হারে টোল ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ সেতুতে মোটরসাইকেল পার হতে টোল দিতে হয় ৫০ টাকা এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরিতে লাগে ৭০ টাকা। অথচ পদ্মা সেতুতে লাগবে ১০০ টাকা। হালকা যানবাহন কার বা জিপ বঙ্গবন্ধু সেতুতে দিতে হয় ৫৫০ টাকা ও ফেরির টোল ৫০০ টাকা। পদ্মা সেতুতে তা ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুতে মাইক্রোবাস ও পিকআপের ভাড়া ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অথচ পদ্মা সেতুতে পিকআপের টোল এক হাজার ২০০ টাকা ও মাইক্রোবাসের টোল এক হাজার ৩০০ টাকা। ৩১ আসনের কম ছোট বাসের টোল বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৭৫০ টাকা ও ফেরিতে এক হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে তা নেওয়া হবে এক হাজার ৪০০ টাকা। ৩২ বা তার বেশি আসনবিশিষ্ট মাঝারি বাসে বঙ্গবন্ধু সেতুতে এক হাজার টাকা ও ফেরিতে এক হাজার ৭৮০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে তা নেওয়া হবে দুই হাজার টাকা। বড় বাসের (তিন এক্সেল) পদ্মা সেতুতে ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকা। অথচ বঙ্গবন্ধু সেতুতে তা এক হাজার টাকা এবং ফেরিতে এক হাজার ৯৪০ টাকা।
একইভাবে ৫টন পর্যন্ত ছোট ট্রাকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে এক হাজার টাকা ও ফেরিতে এক হাজার ৮০ টাকা টোল নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে এ ট্রাকের টোল হবে এক হাজার ৬০০ টাকা। ৫-৮টন পর্যন্ত ধারণ ক্ষমতার ট্রাকের টোল পদ্মা সেতুতে নেওয়া হবে দুই হাজার ১০০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুতে এ ট্রাকের টোল এক হাজার ২৫০ টাকা ও ফেরিতে এক হাজার ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে অন্যান্য যানবাহনের টোল হার বেশি ধরা হয়েছে।
এ টোল হারে পদ্মা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহন ব্যবহারকারীদের খরচ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বাস, কার, মাইক্রোবাসের যে টোল ধরা হয়েছে তা সরাসরি যাত্রীদের থেকে আদায় করা হবে। আর পণ্যবাহী গাড়ির টোলের চাপ পড়বে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর। জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র সেন যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে যেসব সেতুতে টোল আদায় করা হচ্ছে, সেগুলো বিবেচনায় পদ্মা সেতুতে সবচেয়ে বেশি হারে টোল নেওয়া হবে। এ টোলের চাপ পড়বে জনসাধারণের ওপর। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু এবং ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম ভালো রাস্তা। এ সড়কে গেলে মন গর্বে ভরে যায়। কিন্তু জনসাধারণের কথা চিন্তা করলে টোলের পরিমাণ বেশিই বলে মনে হচ্ছে। জনসাধারণের কথা চিন্তা করে আমরা সরকারের কাছে টোলের হার পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।