টিকটক হৃদয়সহ ১১ বাংলাদেশি দণ্ডিত
ভারতে তরুণীকে নির্যাতন
যুগান্তর প্রতিবেদন
২২ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতে আলোচিত বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় টিকটক হৃদয় বাবুসহ ১১ বাংলাদেশির সাজা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজনকে যাবজ্জীবন ও বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে শুক্রবার বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত রায় দিয়েছেন।
এদিকে নির্যাতনের শিকার তরুণীকে বাংলাদেশের কাছে ভারত হস্তান্তর করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়-তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলো-চাঁদ মিয়া, মোহাম্মদ রিফাকদুল ইসলাম (হৃদয় বাবু), মোহাম্মদ আলামিন হোসেন, রকিবুল ইসলাম, মোহাম্মদ বাবু শেখ, মোহাম্মদ ডালিম ও আজিম হোসেন।
তানিয়া খান নামের এক নারী আসামিকে ২০ বছর এবং মোহাম্মদ জামাল নামের একজনকে ৫ বছরের দণ্ড দিয়েছেন বিচারক। আর ফরেনার্স অ্যাক্টের অধিনে নুসরাত ও কাজল নামের দুজনকে ৯ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আর খালাস পেয়েছেন একজন। গত বছরের মে মাসে ভারতের বেঙ্গালুরুতে ২২ বছরের এক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। পরে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি দেখার পর প্রথম পদক্ষেপ নেয় আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নিপীড়কের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা।
ওই ঘটনায় ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা।
হাতিরঝিল থানার ওসি মো. আব্দুর রশীদ তখন বলেছিলেন, টিকটকার হৃদয় বাবুসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলাটি করেন মেয়েটির বাবা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছিল, নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী ও নির্যাতনকারীদের একজন ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। সাইবার পেট্রোলের অংশ হিসাবে ভিডিওটি তাদের নজরে আসে।
নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে মগবাজার এলাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়। সেখানে তার পরিচয় টিকটক হৃদয় বাবু বলে শনাক্ত করা হয়।
২৬ বছর বয়সি হৃদয়কে মগবাজারের অধিবাসীদের অনেকেই চেনেন। গত বছর ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ১২ জনকে গ্রেফতার করে ভারতের পুলিশ, যার মধ্যে ১১ জনই অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী। ওই সময় হৃদয় বাবুসহ দুজন পালানোর চেষ্টা করে গুলিতে আহত হয়েছিল।
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ভীমশঙ্কর গুলেড় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ডিএনএ অ্যানালাইসিস, ইলেকট্রনিক প্রমাণ, মোবাইল ফরেনসিক, ফিঙ্গার প্রিন্টসহ প্রয়োজনীয় দলিলাদি যথাসময়ে দাখিল করা হয়।
এ কারণে দ্রুত বিচার সম্ভব হয়েছে। অভিযুক্তরা মানব পাচারকারী এবং তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তারা মেয়েদের ভারতে এনে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করত।
নির্যাতনের শিকার মেয়েটিও তেমনই এক ভুক্তভোগী। মতপার্থক্যের কারণে ‘শিক্ষা’ দিতে ওই তরুণীর ওপর বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
ভুক্তভোগী তরুণীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর : বেঙ্গালুরুতে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী তরুণীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের একটি দলের কাছে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে ভারত।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীকে বুঝে পাওয়ার পর রাতেই তাকে নিয়ে পুলিশের টিম ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে।
ঢাকায় পৌঁছার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে। হাসপাতালে তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করা হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ভারতে তরুণীকে নির্যাতন
টিকটক হৃদয়সহ ১১ বাংলাদেশি দণ্ডিত
ভারতে আলোচিত বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় টিকটক হৃদয় বাবুসহ ১১ বাংলাদেশির সাজা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজনকে যাবজ্জীবন ও বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে শুক্রবার বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত রায় দিয়েছেন।
এদিকে নির্যাতনের শিকার তরুণীকে বাংলাদেশের কাছে ভারত হস্তান্তর করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়-তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলো-চাঁদ মিয়া, মোহাম্মদ রিফাকদুল ইসলাম (হৃদয় বাবু), মোহাম্মদ আলামিন হোসেন, রকিবুল ইসলাম, মোহাম্মদ বাবু শেখ, মোহাম্মদ ডালিম ও আজিম হোসেন।
তানিয়া খান নামের এক নারী আসামিকে ২০ বছর এবং মোহাম্মদ জামাল নামের একজনকে ৫ বছরের দণ্ড দিয়েছেন বিচারক। আর ফরেনার্স অ্যাক্টের অধিনে নুসরাত ও কাজল নামের দুজনকে ৯ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আর খালাস পেয়েছেন একজন। গত বছরের মে মাসে ভারতের বেঙ্গালুরুতে ২২ বছরের এক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। পরে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি দেখার পর প্রথম পদক্ষেপ নেয় আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নিপীড়কের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা।
ওই ঘটনায় ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা।
হাতিরঝিল থানার ওসি মো. আব্দুর রশীদ তখন বলেছিলেন, টিকটকার হৃদয় বাবুসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলাটি করেন মেয়েটির বাবা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছিল, নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী ও নির্যাতনকারীদের একজন ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। সাইবার পেট্রোলের অংশ হিসাবে ভিডিওটি তাদের নজরে আসে।
নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে মগবাজার এলাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়। সেখানে তার পরিচয় টিকটক হৃদয় বাবু বলে শনাক্ত করা হয়।
২৬ বছর বয়সি হৃদয়কে মগবাজারের অধিবাসীদের অনেকেই চেনেন। গত বছর ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ১২ জনকে গ্রেফতার করে ভারতের পুলিশ, যার মধ্যে ১১ জনই অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী। ওই সময় হৃদয় বাবুসহ দুজন পালানোর চেষ্টা করে গুলিতে আহত হয়েছিল।
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ভীমশঙ্কর গুলেড় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ডিএনএ অ্যানালাইসিস, ইলেকট্রনিক প্রমাণ, মোবাইল ফরেনসিক, ফিঙ্গার প্রিন্টসহ প্রয়োজনীয় দলিলাদি যথাসময়ে দাখিল করা হয়।
এ কারণে দ্রুত বিচার সম্ভব হয়েছে। অভিযুক্তরা মানব পাচারকারী এবং তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তারা মেয়েদের ভারতে এনে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করত।
নির্যাতনের শিকার মেয়েটিও তেমনই এক ভুক্তভোগী। মতপার্থক্যের কারণে ‘শিক্ষা’ দিতে ওই তরুণীর ওপর বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
ভুক্তভোগী তরুণীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর : বেঙ্গালুরুতে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী তরুণীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের একটি দলের কাছে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে ভারত।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীকে বুঝে পাওয়ার পর রাতেই তাকে নিয়ে পুলিশের টিম ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে।
ঢাকায় পৌঁছার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে। হাসপাতালে তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করা হবে।