শতাধিক অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা
ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান
যুগান্তর ডেস্ক
২৯ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা আজ শেষ হচ্ছে। এর আগে শনিবার সকাল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালায় স্থানীয় প্রশাসন।
এ সময় নিবন্ধনহীন ও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে।
আকস্মিক এ অভিযানে দিশেহারা হয়ে পড়েন সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা। অভিযান শুরুর পর জরিমানা ও সিলগালা এড়াতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সটকে পড়েন অনেক মালিক ও স্টাফ।
ঢাকায় উত্তরা ও বনানীতে দুটি বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানান, বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত জিরো টলারেন্স নীতি চলবে। এরপর সমন্বিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালতি হবে। প্রয়োজনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. বেলাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ম মেনে পরিচালনা করতে একাধিকবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা শোনেনি। অথচ এই কর্মকাণ্ডে অসহায় রোগীদের জীবন-মরণ জড়িত থাকে।
তিনি আরও বলেন, ২৯ মে (আজ) সব জেলায় অভিযান শেষে তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে দেখা যাবে কতটি অবৈধ ছিল এবং কতগুলো বন্ধ হলো। এছাড়া পরবর্তী করণীয় কী হবে, এ ব্যাপারে সোমবার ফের আলোচনা হবে।
যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ভালুকায় ৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা, ৪টি সাময়িক বন্ধ ও ২টি হাসপাতালকে সতর্ক করা হয়েছে। লাইসেন্স না থাকায় হাসপাতাল রোডের রেজা ডায়াগনস্টিক, সোমাইয়া ডায়াগনস্টিক, আন নূর ডায়াগনস্টিক, নুসরাত ডায়াগনস্টিক, মাসুদ ডায়াগনস্টিক, আজিজ খান ডায়াগনস্টিক ও মেডিল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এছাড়া লাইসেন্স নবায়ন না করায় মীরা ডায়াগনস্টিক, কনক ডায়াগনস্টিক, সুমন ডায়াগনস্টিক ও খিরু ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া ভালুকা জেনারেল হাসপাতাল ও সেবা হাসপাতালকে সতর্ক করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) : জেলার বেগমগঞ্জে ৩টি, সোনাইমুড়ীতে ২টি, সদরে ১টি, সেনবাগে ২টি ও চাটখিলে ১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। এগুলো হলো চাটখিলের এশিয়ান ফিজিওথেরাপি সেন্টার, সদরের দত্তেরহাটের নোয়াখালী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, বেগমগঞ্জের ছয়ানির মালিয়া ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিস, বাংলাবাজারের নিউ চৌধুরী প্যাথোলজি ল্যাব, রাজগঞ্জের বিসমিল্লাহ্ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সোনাইমুড়ীর আল হাবিব হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, কাশিপুরের লাইফ লাইন প্যাথোলজি, সেনবাগের কানকিরহাটের সিটি ডায়াগনস্টিক এবং ছাতারপাইয়া বাজারের জেনুয়িন ডায়াগনস্টিক ল্যাব অ্যান্ড কনসালটেশন।
টাঙ্গাইল : বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শহরের স্বদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক ও আমানত ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া অপর তিনটিকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : চুনারুঘাটে ৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে। এগুলো হলো মধ্যবাজারের গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাল্লা রোডের ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নতুন ব্রিজের পিপলস ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সূর্যের আলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও এমকে ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : মাধবপুর পৌর শহরে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৫ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এগুলো হলো তিতাস জেনারেল শিশু হাসপাতাল, প্রাইম জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : কুমারখালীতে পাঁচটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ এবং একটিকে সতর্ক করা হয়েছে। বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো প্রতীক আধুনিক ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রদীপ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিশ্বাস ডেন্টাল কেয়ার, শিমুল ডেন্টাল কেয়ার ও কুমারখালী ডায়াবেটিক সমিতি।
চুয়াডাঙ্গা : বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় চার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এগুলো হলো চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডের সেন্ট্রাল মেডিকেল সেন্টার, তিসা এক্সরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আমাদের সনো ও ইসলামি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
কচুয়া (চাঁদপুর) : বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শ্যামলী খান ম্যাটারনিটি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া মহিউদ্দিন ডিজিটাল মেডিকেল সেন্টারে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় ১০ হাজার টাকা ও সিটি মেডিকেলের লাইসেন্স না থাকায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নাটোর : শহরের অনুমোদনহীন ১১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক, প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তামান্না ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মদিনা চক্ষু হাসপাতাল, চক্ষু ক্লিনিক ও ফ্যাকো সেন্টার, বরাত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনশালটেশন সেন্টার।
নবাবগঞ্জ : বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বারুয়াখালী বাজারে বন্ধন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার, বান্দুরা ইউনিয়নের মাঝিরকান্দায় হেলাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বগুড়া : নিবন্ধন, অনুমোদন ও লাইসেন্স না থাকায় শহরের নিউ পল্লী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি এটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া এনাম ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চট্টগ্রাম : নগরীর চারটি বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো চকবাজার এলাকার চট্টেশ্বরী রোডের কসমোপলিটন হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড, ডবলমুরিং ডিটি রোডের পপুলার মেডিকেল সেন্টার, দামপাড়ার নিরূপণী প্যাথোলজি ল্যাবরেটরি ও পাঁচলাইশ থানাধীন সিএসটিসি হাসপাতাল।
চাঁদপুর: হাইমচরে অনিবন্ধিত ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এগুলো হলো ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রিমটাচ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টরকে জরিমানা করা হয়েছে।
গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : উপজেলার রহনপুর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রাজ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং রহনপুর পুরাতন বাজারে ইসলামিয়া নার্সিং হোম সিলগালা করা হয়েছে।
নীলফামারী : সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ইবাদত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সব কার্যক্রম ৭ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া মাহাবুবা মেমোরিয়াল জেনারেল হাসপাতালকে তাৎক্ষণিক বন্ধের নির্দেশ দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : কটিয়াদীতে নিবন্ধনহীন ৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এগুলো হলো পৌর এলাকার শারমিন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মানিকখালী বাজারের মেডিকন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বানিয়াগ্রাম বাজারের আল হেরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও করগাঁও আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বানারীপাড়া (বরিশাল) : বানারীপাড়ায় তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও একটি ক্লিনিক বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো চাখার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বনানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফাইভ ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক।
গৌরনদী (বরিশাল) : চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এগুলো হলো ইয়াসিন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সান এক্সরে সেন্টার, নিউ বনানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
ভোলা : জেলায় শনিবার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রশাসনের অভিযান শুরু হলে জরিমানা ও সিলগালা এড়াতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে গা ঢাকা দেন মালিক ও স্টাফরা।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : ৩টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পৌর শহরের আইডিয়াল ক্লিনিক, মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ভূঞাপুর-এলেঙ্গা রোডের সোনিয়া হাসপাতাল।
নরসিংদী : শহরের অবৈধ ৫ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো শহরের বাসাইল রেলগেট এলাকার নরসিংদী স্পেশালাইজড ডায়াবেটিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাসাইল এলাকার নরসিংদী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিঅ্যান্ডবি রোডের মৃধা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রফুল্ল ডেন্টাল সেন্টার।
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : গোপালপুরে ৫টি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। এগুলো হলো চাতুটিয়া রোকেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রাজ্জাক ডেন্টাল ক্লিনিক, ঝাওয়াইল বাজারের ইমরান ডেন্টাল কেয়ার, সন্ধ্যা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডেন্টাল ক্লিনিক এবং হেমনগরের নিরাময় ক্লিনিক।
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) : ফরিদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডা. এফ রহমান হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আল মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া এ চারটিসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
যশোর : যশোরে ছয়টি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এগুলো হলো যশোর শহরের পিস হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নূরুল ইসলাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রোটারি হেলথ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিএমসি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : উপজেলায় ১০টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ৫টি ক্লিনিকে লাইসেন্স ও ফিটনেস না থাকায় এসব ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে উপজেলার মালিঅংক বাজারের ফাইভ স্টার ক্লিনিক, পদ্মা ক্লিনিক, ঘোড়াদৌড় বাজারের আফরোজা ক্লিনিক, সন্ধানী ক্লিনিক ও চন্দ্রের বাড়ি বাজারের লাইফ এইড ক্লিনিক।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান
শতাধিক অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা

দেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা আজ শেষ হচ্ছে। এর আগে শনিবার সকাল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালায় স্থানীয় প্রশাসন।
এ সময় নিবন্ধনহীন ও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে।
আকস্মিক এ অভিযানে দিশেহারা হয়ে পড়েন সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা। অভিযান শুরুর পর জরিমানা ও সিলগালা এড়াতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সটকে পড়েন অনেক মালিক ও স্টাফ।
ঢাকায় উত্তরা ও বনানীতে দুটি বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানান, বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত জিরো টলারেন্স নীতি চলবে। এরপর সমন্বিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালতি হবে। প্রয়োজনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. বেলাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ম মেনে পরিচালনা করতে একাধিকবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা শোনেনি। অথচ এই কর্মকাণ্ডে অসহায় রোগীদের জীবন-মরণ জড়িত থাকে।
তিনি আরও বলেন, ২৯ মে (আজ) সব জেলায় অভিযান শেষে তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে দেখা যাবে কতটি অবৈধ ছিল এবং কতগুলো বন্ধ হলো। এছাড়া পরবর্তী করণীয় কী হবে, এ ব্যাপারে সোমবার ফের আলোচনা হবে।
যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ভালুকায় ৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা, ৪টি সাময়িক বন্ধ ও ২টি হাসপাতালকে সতর্ক করা হয়েছে। লাইসেন্স না থাকায় হাসপাতাল রোডের রেজা ডায়াগনস্টিক, সোমাইয়া ডায়াগনস্টিক, আন নূর ডায়াগনস্টিক, নুসরাত ডায়াগনস্টিক, মাসুদ ডায়াগনস্টিক, আজিজ খান ডায়াগনস্টিক ও মেডিল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এছাড়া লাইসেন্স নবায়ন না করায় মীরা ডায়াগনস্টিক, কনক ডায়াগনস্টিক, সুমন ডায়াগনস্টিক ও খিরু ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া ভালুকা জেনারেল হাসপাতাল ও সেবা হাসপাতালকে সতর্ক করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) : জেলার বেগমগঞ্জে ৩টি, সোনাইমুড়ীতে ২টি, সদরে ১টি, সেনবাগে ২টি ও চাটখিলে ১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। এগুলো হলো চাটখিলের এশিয়ান ফিজিওথেরাপি সেন্টার, সদরের দত্তেরহাটের নোয়াখালী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, বেগমগঞ্জের ছয়ানির মালিয়া ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিস, বাংলাবাজারের নিউ চৌধুরী প্যাথোলজি ল্যাব, রাজগঞ্জের বিসমিল্লাহ্ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সোনাইমুড়ীর আল হাবিব হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, কাশিপুরের লাইফ লাইন প্যাথোলজি, সেনবাগের কানকিরহাটের সিটি ডায়াগনস্টিক এবং ছাতারপাইয়া বাজারের জেনুয়িন ডায়াগনস্টিক ল্যাব অ্যান্ড কনসালটেশন।
টাঙ্গাইল : বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শহরের স্বদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক ও আমানত ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া অপর তিনটিকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : চুনারুঘাটে ৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে। এগুলো হলো মধ্যবাজারের গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাল্লা রোডের ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নতুন ব্রিজের পিপলস ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সূর্যের আলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও এমকে ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : মাধবপুর পৌর শহরে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৫ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এগুলো হলো তিতাস জেনারেল শিশু হাসপাতাল, প্রাইম জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : কুমারখালীতে পাঁচটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ এবং একটিকে সতর্ক করা হয়েছে। বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো প্রতীক আধুনিক ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রদীপ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিশ্বাস ডেন্টাল কেয়ার, শিমুল ডেন্টাল কেয়ার ও কুমারখালী ডায়াবেটিক সমিতি।
চুয়াডাঙ্গা : বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় চার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এগুলো হলো চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডের সেন্ট্রাল মেডিকেল সেন্টার, তিসা এক্সরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আমাদের সনো ও ইসলামি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
কচুয়া (চাঁদপুর) : বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শ্যামলী খান ম্যাটারনিটি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া মহিউদ্দিন ডিজিটাল মেডিকেল সেন্টারে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় ১০ হাজার টাকা ও সিটি মেডিকেলের লাইসেন্স না থাকায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নাটোর : শহরের অনুমোদনহীন ১১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক, প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তামান্না ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মদিনা চক্ষু হাসপাতাল, চক্ষু ক্লিনিক ও ফ্যাকো সেন্টার, বরাত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনশালটেশন সেন্টার।
নবাবগঞ্জ : বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বারুয়াখালী বাজারে বন্ধন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার, বান্দুরা ইউনিয়নের মাঝিরকান্দায় হেলাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বগুড়া : নিবন্ধন, অনুমোদন ও লাইসেন্স না থাকায় শহরের নিউ পল্লী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি এটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া এনাম ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চট্টগ্রাম : নগরীর চারটি বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো চকবাজার এলাকার চট্টেশ্বরী রোডের কসমোপলিটন হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড, ডবলমুরিং ডিটি রোডের পপুলার মেডিকেল সেন্টার, দামপাড়ার নিরূপণী প্যাথোলজি ল্যাবরেটরি ও পাঁচলাইশ থানাধীন সিএসটিসি হাসপাতাল।
চাঁদপুর: হাইমচরে অনিবন্ধিত ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এগুলো হলো ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রিমটাচ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টরকে জরিমানা করা হয়েছে।
গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : উপজেলার রহনপুর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রাজ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং রহনপুর পুরাতন বাজারে ইসলামিয়া নার্সিং হোম সিলগালা করা হয়েছে।
নীলফামারী : সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ইবাদত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সব কার্যক্রম ৭ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া মাহাবুবা মেমোরিয়াল জেনারেল হাসপাতালকে তাৎক্ষণিক বন্ধের নির্দেশ দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : কটিয়াদীতে নিবন্ধনহীন ৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এগুলো হলো পৌর এলাকার শারমিন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মানিকখালী বাজারের মেডিকন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বানিয়াগ্রাম বাজারের আল হেরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও করগাঁও আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বানারীপাড়া (বরিশাল) : বানারীপাড়ায় তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও একটি ক্লিনিক বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো চাখার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বনানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফাইভ ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক।
গৌরনদী (বরিশাল) : চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এগুলো হলো ইয়াসিন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সান এক্সরে সেন্টার, নিউ বনানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
ভোলা : জেলায় শনিবার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রশাসনের অভিযান শুরু হলে জরিমানা ও সিলগালা এড়াতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে গা ঢাকা দেন মালিক ও স্টাফরা।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : ৩টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পৌর শহরের আইডিয়াল ক্লিনিক, মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ভূঞাপুর-এলেঙ্গা রোডের সোনিয়া হাসপাতাল।
নরসিংদী : শহরের অবৈধ ৫ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো শহরের বাসাইল রেলগেট এলাকার নরসিংদী স্পেশালাইজড ডায়াবেটিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাসাইল এলাকার নরসিংদী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিঅ্যান্ডবি রোডের মৃধা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রফুল্ল ডেন্টাল সেন্টার।
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : গোপালপুরে ৫টি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। এগুলো হলো চাতুটিয়া রোকেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রাজ্জাক ডেন্টাল ক্লিনিক, ঝাওয়াইল বাজারের ইমরান ডেন্টাল কেয়ার, সন্ধ্যা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডেন্টাল ক্লিনিক এবং হেমনগরের নিরাময় ক্লিনিক।
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) : ফরিদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডা. এফ রহমান হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আল মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া এ চারটিসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
যশোর : যশোরে ছয়টি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এগুলো হলো যশোর শহরের পিস হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নূরুল ইসলাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রোটারি হেলথ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিএমসি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : উপজেলায় ১০টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ৫টি ক্লিনিকে লাইসেন্স ও ফিটনেস না থাকায় এসব ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে উপজেলার মালিঅংক বাজারের ফাইভ স্টার ক্লিনিক, পদ্মা ক্লিনিক, ঘোড়াদৌড় বাজারের আফরোজা ক্লিনিক, সন্ধানী ক্লিনিক ও চন্দ্রের বাড়ি বাজারের লাইফ এইড ক্লিনিক।