এলডিসির পরও মেধাস্বত্ব সুবিধা চায় বাংলাদেশ
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন
যুগান্তর প্রতিবেদন
১৫ জুন ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরও মেধাস্বত্ব সুবিধা বহাল চায় বাংলাদেশ। করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনায় ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দাবি করা হয়।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সোমবার এ কথা বলেন।
এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সংকট মোকাবিলায় খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার অনুরোধ করা হয়। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসীম উদ্দিনও ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রোববার থেকে জেনেভায় ডব্লিউটিও-এর ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ বুধবার পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি চলবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সেখানে বক্তব্য দেন। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণ হবে। এরপরও আমরা মেধাস্বত্ব সুবিধা পেতে চাই। সম্মেলনে এই দাবি তুলেছি। তিনি বলেন, করোনায় আমাদের জীবন থেকে ২টি বছর চলে গেছে। এর প্রভাব আরও ৫ বছর থাকবে। তাই আমরা চাই এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৯ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব সুবিধা যেন আমাদের দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, কেবল আমরা এলডিসি উত্তরণ করছি না। আরও অনেকে করছে। সবাই মিলে এই দাবি আমরা করছি। মন্ত্রী বলেন, মসৃণভাবে এলডিসি উত্তরণের জন্য আমাদের এই সুবিধা দরকার। পাশাপাশি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) প্রস্তুতি দেওয়ার জন্য আমাদের এই সুবিধা থাকার প্রয়োজন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদনে মূলত মেধাস্বত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছে। ওষুধের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এ সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে। কিন্তু ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ হলে সেই সুবিধা হারাতে হবে। এছাড়া খাদ্যজাত পণ্যের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মনে করে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। হঠাৎ খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ করার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই খাদ্যজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বন্ধ না করার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাংলাদেশ বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের প্রধান টিপু মুনশি বলেন, ‘আজকের সভায় এটি নিয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে। খাদ্যের ব্যাপারটা বিশ্বজনীন। খাবারের দাম বাড়ছে। এটা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যদ্ধের কারণে অনেক রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে, ভারত কিছু বন্ধ করেছে। ইন্দোনেশিয়া পাম তেল বন্ধ করেছিল। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে এই কথা বারবার উঠে আসছে। তবে কেবল বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য নয়, পুষ্টির বিষয়টিও উঠে এসেছে। পুষ্টিকর খাবার না পেলে একটা শিশু পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারবে না। পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তা গড়ার ব্যাপারে ডব্লিউটিও এবং এলডিসির দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু প্রতিবছর ২ মিলিয়ন শিশু জন্ম নিচ্ছে। এরপর রোহিঙ্গা শরণার্থী যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে। সব দেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে বাংলাদেশ এই ইস্যুতে কাজ করতে চাই বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী সোমবার সিঙ্গাপুর ও নেপালের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি সিঙ্গাপুরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নেপাল বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে বলে আশা করছি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন
এলডিসির পরও মেধাস্বত্ব সুবিধা চায় বাংলাদেশ
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরও মেধাস্বত্ব সুবিধা বহাল চায় বাংলাদেশ। করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনায় ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দাবি করা হয়।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সোমবার এ কথা বলেন।
এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সংকট মোকাবিলায় খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার অনুরোধ করা হয়। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসীম উদ্দিনও ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রোববার থেকে জেনেভায় ডব্লিউটিও-এর ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ বুধবার পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি চলবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সেখানে বক্তব্য দেন। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণ হবে। এরপরও আমরা মেধাস্বত্ব সুবিধা পেতে চাই। সম্মেলনে এই দাবি তুলেছি। তিনি বলেন, করোনায় আমাদের জীবন থেকে ২টি বছর চলে গেছে। এর প্রভাব আরও ৫ বছর থাকবে। তাই আমরা চাই এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৯ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব সুবিধা যেন আমাদের দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, কেবল আমরা এলডিসি উত্তরণ করছি না। আরও অনেকে করছে। সবাই মিলে এই দাবি আমরা করছি। মন্ত্রী বলেন, মসৃণভাবে এলডিসি উত্তরণের জন্য আমাদের এই সুবিধা দরকার। পাশাপাশি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) প্রস্তুতি দেওয়ার জন্য আমাদের এই সুবিধা থাকার প্রয়োজন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদনে মূলত মেধাস্বত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছে। ওষুধের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এ সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে। কিন্তু ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ হলে সেই সুবিধা হারাতে হবে। এছাড়া খাদ্যজাত পণ্যের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মনে করে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। হঠাৎ খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ করার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই খাদ্যজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বন্ধ না করার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাংলাদেশ বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের প্রধান টিপু মুনশি বলেন, ‘আজকের সভায় এটি নিয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে। খাদ্যের ব্যাপারটা বিশ্বজনীন। খাবারের দাম বাড়ছে। এটা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যদ্ধের কারণে অনেক রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে, ভারত কিছু বন্ধ করেছে। ইন্দোনেশিয়া পাম তেল বন্ধ করেছিল। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে এই কথা বারবার উঠে আসছে। তবে কেবল বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য নয়, পুষ্টির বিষয়টিও উঠে এসেছে। পুষ্টিকর খাবার না পেলে একটা শিশু পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারবে না। পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তা গড়ার ব্যাপারে ডব্লিউটিও এবং এলডিসির দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু প্রতিবছর ২ মিলিয়ন শিশু জন্ম নিচ্ছে। এরপর রোহিঙ্গা শরণার্থী যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে। সব দেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে বাংলাদেশ এই ইস্যুতে কাজ করতে চাই বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী সোমবার সিঙ্গাপুর ও নেপালের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি সিঙ্গাপুরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নেপাল বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে বলে আশা করছি।