আশুলিয়ায় শিক্ষক হত্যা 

পাঁচ দিন পর খুলছে ইউনুছ আলী কলেজ

বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মানববন্ধন অব্যাহত
 যুগান্তর ডেস্ক 
০২ জুলাই ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর আজ খুলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় কলেজ প্রাঙ্গণে নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার স্মরণে এক শোক ও মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার। এছাড়া ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা ও নড়াইলে কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

এসব কর্মসূচিতে দুই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান বক্তারা। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- 

আশুলিয়া (ঢাকা) : মতবিনিময় সভায় অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, আপাতত কোনো পারিপার্শ্বিক চাপ আমরা অনুভব করছি না। এ রকম কোনো সুযোগও নেই। তবে মানসিকভাবে আমরা দুর্বল।

হয়তো বা জিতুর রিমান্ডে আরও কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। আরও আসামি গ্রেফতার হবে। তখন তৃপ্তিটা পরিপূর্ণ হবে। পুলিশের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।

ছাত্রদের উত্তাল আন্দোলনের কারণে এতদিন তারা বিক্ষিপ্ত ছিল এবং লেখাপড়ার বেশ অবনতি হয়েছে। সামনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। আমরা তাদের দ্রুত ক্লাসে ফেরানোর চেষ্টা করেছি।

শনিবার (আজ) থেকে তাদের ক্লাস শুরু হবে। ইতোমধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। আমরা দু-একদিন ক্লাস নিয়ে পড়ার নির্দেশনা দিয়ে ছুটি দেব।

পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মনে করছেন তাদের সঙ্গেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। আসলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নেই।

আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী নির্ভয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। পুলিশ সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে। পুলিশ সুপার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে ৯৯৯ নাম্বারে কল দিতে বলেন।

পাশাপাশি তিনি তার নিজের ফোন নম্বরও সবাইকে জানিয়ে দেন। পুলিশ সুপার বলেন, শিক্ষক উৎপল হত্যার ন্যায্য বিচার হবে। প্রভাবশালীদের চাপে ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এ সময় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি অভিভাবকরাও শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমরা এসব ব্যবহারে ব্যথিত হই।

আমরা চাই শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ত্রিমুখী সম্পর্কের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর হোক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. হুমায়ন কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম প্রমুখ। 

ঢাকা : শুক্রবার রাজধানীর বাহাদুরশাহ পার্কে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এতে বক্তৃতা করেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, আদি ঢাকা সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি ফজলুর রহমান, ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক মনোজ দত্ত, কাউন্সিলর আরিফুর রহমান ছোটন প্রমুখ। 

বরিশাল : সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর বীর শ্রেষ্ট ক্যাপটেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির সড়কে (সদর রোডে) মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বরিশালের ৩৩টি সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ।

সমন্বয় পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক নজমুল ইসলাম আকাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেবাশিষ চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ দুলাল, সাবেক সভাপতি কাজল ঘোষ, উন্নয়ন সংগঠক আনোয়ার জাহিদ, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জীবন কৃষ্ণ দে, বিএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর স ম ইমানুল হাকিম, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের শুভংকর চক্রবর্তী প্রমুখ। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। জোটের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নূরের সভাপতিত্বে ও কবি মনিরুল ইসলাম শ্রাবণের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের জেলা সহ-সভাপতি ডা. অরুণাভ পোদ্দার, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট অসীম কুমার বর্ধন প্রমুখ।

মধুখালী (ফরিদপুর) : সকাল ১০টায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী রেলগেট এলাকায় মানববন্ধন করে মধুখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ। এতে পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নাজির হোসেন মৃধার সভাপতিত্বে ও সহকারী শিক্ষক দিপংকর পালের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রজব আলী মোল্যা, মধুখালী প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো. নজরুল ইসলাম, প্রভাষক মির্জা গোলাম ফারুক প্রমুখ। 

শ্রেণিকক্ষে ও বাইরে শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে : শ্রেণিকক্ষে ও বাইরে শিক্ষকের নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষক ও সংখ্যালঘু নেতারা। তারা বলছেন, সারা দেশে শিক্ষকদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।

প্রশাসনের নীরবতা ওই চক্রকে আরও সাহস জোগাচ্ছে। এসব ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজিরের অভাবে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন শিক্ষকরা। সাভারে শিক্ষক হত্যা এবং নড়াইলে শিক্ষককে জুতার মালা পরানোসহ সংখ্যালঘু শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত পৃথক কর্মসূচিতে তারা এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শুক্রবার বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এবং বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ পৃথক সমাবেশের আয়োজন করে। এ সময় তারা শিক্ষক নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শিক্ষক সুরক্ষা আইন করারও দাবি তোলেন তারা।

মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সমাবেশে বক্তারা বলেন, দুষ্টচক্রের হাত থেকে নিরীহ শিক্ষকদের রক্ষা করতে হবে। বিচারহীনতার কারণে শিক্ষকেরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। এ লজ্জা জাতির। কিছু অভিভাবকও শিক্ষকদের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন।

অত্যন্ত দুঃখজনক যে এত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমরা শিক্ষকেরা নিরাপত্তা চাই, শ্রেণিকক্ষে থাকতে চাই।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সভাপতি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ।

এদিকে হিন্দু মহাজোটের সভায় বক্তারা বলেন, কথিত ধর্ম অবমাননার কথা বলে এর আগেও দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু শিক্ষকদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে শিক্ষকদের নিরাপত্তার কথা বলে গ্রেফতার করছে। এর আগে একই অনেককে হয়রানি করা হয়েছে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিন্দু মহাজোটের সভাপতি প্রভাস চন্দ্র রায়, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি সুধাংশু চন্দ্র বিশ্বাস, সহসভাপতি রনজিত মৃধা ও প্রভাস চন্দ্র মণ্ডল, মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে, যুব মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক রাজেস নাহা, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সজীব বৈদ্য।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন