বলেছিলাম আমাদের একটি বেতার দরকার
যুগান্তরকে হাসান ইমাম
ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ছিল সোমবার। এদিন মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে যুক্ত হয় আরেক মাইলফলক। এদিন বাংলাদেশকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ ভুটান ও ভারত স্বীকৃতি দেয়। এটা পাকিস্তানিদের জন্য অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায়। ভারতের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’তে ঘোষণা করা হয়-বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। তবে ইতিহাস বলে ভারতের কয়েক ঘণ্টা আগে তারবার্তার মাধ্যমে ভুটান প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
ভারতের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহ এবং সেই সংগ্রামের সাফল্য এটা ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট করে তুলেছে যে, তথাকথিত মাতৃরাষ্ট্র পাকিস্তান বাংলাদেশের মানুষকে স্বীয় নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ অসমর্থ। ইন্দিরা গান্ধী বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বক্তব্য শেষ না হতেই ভারতের সংসদ-সদস্যরা হর্ষধ্বনি আর ‘জয় বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুগ্মভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেন।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। তাদেরই একজন সৈয়দ হাসান ইমাম। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি ছিলেন নানা ভূমিকায়। সেই সময়ের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ক্র্যাকডাউন হলো। ২৭ মার্চ কারফিউ ছাড়ল। গোলাম মুস্তাফা তখন তার মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা, ক্যামেলিয়া মুস্তাফা, ছেলে সুমিত ও ভাবিকে নিয়ে গাড়িতে করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমার বাড়ির গেটে গাড়ি থামিয়ে বলেছিল, ‘তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ছেড়ে চলে যাও, পাকিস্তান আর্মি তোমাকে খুঁজছে।’
পাকিস্তান আর্মি তখনো আমার ঠিকানা জোগাড় করতে পারেনি। এক বাঙালি আর্মির ছেলে গোলাম মুস্তাফাকে এসে বলেছিল, তাড়াতাড়ি যেন আমাকে খবরটি দেয়। আমি তখন বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে গিয়ে শান্তিনগরে আমার ফুপুর বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। সেখান থেকে দেখছি বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান আর্মি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন ২৫ মার্চ রাতেই। সেটা রেডিওতে প্রচারও হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটিই বারবার অনেকে পড়েছেন, যেন মানুষ জানতে পারে।
একটা সময়ে মাগুরা যাব বলে ঠিক করেছিলাম। মাগুরায় তখন তরুণ সিএসপি অফিসাররা মিলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটি সংগঠন করেছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন মেহেরপুরের এসডিও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নড়াইলের এসডিও কামাল সিদ্দিকি, আরেকজন এসডিও ছিলেন ওয়ালিউর রহমান, ঝিনাইদহ পুলিশের প্রধান এসপি মাহবুবসহ আরও অনেকে। তাদের এই সংগঠনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল। তাই আমরা মাগুরা যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। মাগুরা পৌঁছে ওদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হলাম।
হাসান ইমাম বললেন, এরপর গেলাম কলকাতায়। কলকাতায় এসে আমরা মোট পাঁচজন গিয়ে উঠেছিলাম পার্ক সার্কাসের চার নম্বর পুলের কাছে আমার মেজ মামা মনসুর হবীবুল্লাহর বাড়িতে। পরবর্তী সময়ে চারতলা বাড়ির চতুর্থতলাটি তিনি আমাদের জন্য ছেড়ে দেন। সেখানে আমি মুক্তিযুদ্ধের একটি ট্রানজিট ক্যাম্প করেছিলাম। তখন বাংলাদেশ থেকে আমার পরিচিত বা অপরিচিত যারা যেতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই প্রথমে এই ক্যাম্পে এসে দু-তিন দিন থাকতেন। পরে তারা নিজেদের মতো কোনো একটি ব্যবস্থা করে নিতেন। এই ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রাথমিকভাবে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। একাত্তর সালের অক্টোবর পর্যন্ত এটি ট্রানজিট ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। পরে ওয়াপদার যে প্রকৌশলীরা উঠেছিলেন, শুধু তারাই থাকতেন।
মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর আমরা তাজউদ্দীন সাহেবকে জানালাম, আমাদের একটি বেতার দরকার। তিনিও সেটি উপলব্ধি করলেন। তখন একটি ট্রান্সমিটার দেওয়া হলো, যেটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। সেটি বর্ডার এলাকায় বা অন্য কোনো জায়গায় হয়তো ছিল; কিন্তু আমরা জানতাম না। তবে এটি অনেক শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ছিল। ৫০ কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েবের এই ট্রান্সমিটারটি দিয়েই আমরা সম্প্রচার করেছিলাম অসাধারণ সব অনুষ্ঠান। আমাদের শুধু একটি ঘর দেওয়া হলো বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। সুচিত্রা সেনের বাড়ির ঠিক পাশের বাড়িটা। এ বাড়িতেই আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলাম।
২৫ মে (বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ) কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনটিকেই প্রথম অনুষ্ঠান সম্প্রচারের দিন হিসাবে ধার্য করা হয়েছিল। ওইদিন থেকেই আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করলাম।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করা ছাড়াও আমাকে নাটকের দায়িত্ব দেওয়া হলো। প্রথম ২৪ বা ২৬ জনকে তাজউদ্দীন সাহেব একটি নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমি, কামাল লোহানী, আশরাফুর রহমান, বেলাল মোহাম্মদসহ কয়েকজন নিয়োগপত্র পেয়েছিলাম। আমাকে প্রথমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংবাদ ও নাট্য বিভাগের। পরে যখন সাংবাদিকরা যোগ দিলেন, তখন সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হলো কামাল লোহানীকে। আমি নাটক ও কথিকা বিভাগের দায়িত্ব পালন করলাম।
আমার নাম ছিল ‘সালেহ আহাম্মেদ’। এ নামেই আমি খবর পড়তাম। আর কলকাতায় যে কাজগুলো করতাম, সেগুলো হাসান ইমাম নামেই করতাম। এভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়টা কেটেছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
যুগান্তরকে হাসান ইমাম
বলেছিলাম আমাদের একটি বেতার দরকার
ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ছিল সোমবার। এদিন মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে যুক্ত হয় আরেক মাইলফলক। এদিন বাংলাদেশকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ ভুটান ও ভারত স্বীকৃতি দেয়। এটা পাকিস্তানিদের জন্য অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায়। ভারতের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’তে ঘোষণা করা হয়-বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। তবে ইতিহাস বলে ভারতের কয়েক ঘণ্টা আগে তারবার্তার মাধ্যমে ভুটান প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
ভারতের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহ এবং সেই সংগ্রামের সাফল্য এটা ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট করে তুলেছে যে, তথাকথিত মাতৃরাষ্ট্র পাকিস্তান বাংলাদেশের মানুষকে স্বীয় নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ অসমর্থ। ইন্দিরা গান্ধী বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বক্তব্য শেষ না হতেই ভারতের সংসদ-সদস্যরা হর্ষধ্বনি আর ‘জয় বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুগ্মভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেন।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। তাদেরই একজন সৈয়দ হাসান ইমাম। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি ছিলেন নানা ভূমিকায়। সেই সময়ের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ক্র্যাকডাউন হলো। ২৭ মার্চ কারফিউ ছাড়ল। গোলাম মুস্তাফা তখন তার মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা, ক্যামেলিয়া মুস্তাফা, ছেলে সুমিত ও ভাবিকে নিয়ে গাড়িতে করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমার বাড়ির গেটে গাড়ি থামিয়ে বলেছিল, ‘তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ছেড়ে চলে যাও, পাকিস্তান আর্মি তোমাকে খুঁজছে।’
পাকিস্তান আর্মি তখনো আমার ঠিকানা জোগাড় করতে পারেনি। এক বাঙালি আর্মির ছেলে গোলাম মুস্তাফাকে এসে বলেছিল, তাড়াতাড়ি যেন আমাকে খবরটি দেয়। আমি তখন বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে গিয়ে শান্তিনগরে আমার ফুপুর বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। সেখান থেকে দেখছি বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান আর্মি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন ২৫ মার্চ রাতেই। সেটা রেডিওতে প্রচারও হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটিই বারবার অনেকে পড়েছেন, যেন মানুষ জানতে পারে।
একটা সময়ে মাগুরা যাব বলে ঠিক করেছিলাম। মাগুরায় তখন তরুণ সিএসপি অফিসাররা মিলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটি সংগঠন করেছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন মেহেরপুরের এসডিও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নড়াইলের এসডিও কামাল সিদ্দিকি, আরেকজন এসডিও ছিলেন ওয়ালিউর রহমান, ঝিনাইদহ পুলিশের প্রধান এসপি মাহবুবসহ আরও অনেকে। তাদের এই সংগঠনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল। তাই আমরা মাগুরা যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। মাগুরা পৌঁছে ওদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হলাম।
হাসান ইমাম বললেন, এরপর গেলাম কলকাতায়। কলকাতায় এসে আমরা মোট পাঁচজন গিয়ে উঠেছিলাম পার্ক সার্কাসের চার নম্বর পুলের কাছে আমার মেজ মামা মনসুর হবীবুল্লাহর বাড়িতে। পরবর্তী সময়ে চারতলা বাড়ির চতুর্থতলাটি তিনি আমাদের জন্য ছেড়ে দেন। সেখানে আমি মুক্তিযুদ্ধের একটি ট্রানজিট ক্যাম্প করেছিলাম। তখন বাংলাদেশ থেকে আমার পরিচিত বা অপরিচিত যারা যেতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই প্রথমে এই ক্যাম্পে এসে দু-তিন দিন থাকতেন। পরে তারা নিজেদের মতো কোনো একটি ব্যবস্থা করে নিতেন। এই ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রাথমিকভাবে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। একাত্তর সালের অক্টোবর পর্যন্ত এটি ট্রানজিট ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। পরে ওয়াপদার যে প্রকৌশলীরা উঠেছিলেন, শুধু তারাই থাকতেন।
মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর আমরা তাজউদ্দীন সাহেবকে জানালাম, আমাদের একটি বেতার দরকার। তিনিও সেটি উপলব্ধি করলেন। তখন একটি ট্রান্সমিটার দেওয়া হলো, যেটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। সেটি বর্ডার এলাকায় বা অন্য কোনো জায়গায় হয়তো ছিল; কিন্তু আমরা জানতাম না। তবে এটি অনেক শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ছিল। ৫০ কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েবের এই ট্রান্সমিটারটি দিয়েই আমরা সম্প্রচার করেছিলাম অসাধারণ সব অনুষ্ঠান। আমাদের শুধু একটি ঘর দেওয়া হলো বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। সুচিত্রা সেনের বাড়ির ঠিক পাশের বাড়িটা। এ বাড়িতেই আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলাম।
২৫ মে (বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ) কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনটিকেই প্রথম অনুষ্ঠান সম্প্রচারের দিন হিসাবে ধার্য করা হয়েছিল। ওইদিন থেকেই আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করলাম।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করা ছাড়াও আমাকে নাটকের দায়িত্ব দেওয়া হলো। প্রথম ২৪ বা ২৬ জনকে তাজউদ্দীন সাহেব একটি নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমি, কামাল লোহানী, আশরাফুর রহমান, বেলাল মোহাম্মদসহ কয়েকজন নিয়োগপত্র পেয়েছিলাম। আমাকে প্রথমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংবাদ ও নাট্য বিভাগের। পরে যখন সাংবাদিকরা যোগ দিলেন, তখন সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হলো কামাল লোহানীকে। আমি নাটক ও কথিকা বিভাগের দায়িত্ব পালন করলাম।
আমার নাম ছিল ‘সালেহ আহাম্মেদ’। এ নামেই আমি খবর পড়তাম। আর কলকাতায় যে কাজগুলো করতাম, সেগুলো হাসান ইমাম নামেই করতাম। এভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়টা কেটেছে।